বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বুধবার, মে ১, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » সাবেক ৭ মন্ত্রী-এমপির অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক

সাবেক ৭ মন্ত্রী-এমপির অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক 

dudok ai

প্রধান প্রতিবেদক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাত সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপির অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ ও অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে দুদক।

বুধবার দুপুরে দুদকের নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমদন দেয়া হয়।

অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সংসদ সদস্য আসলামুল হক, সংসদ সদস্য এনামুল হক, সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি ও সাবেক সংসদ সদস্য এমএ জব্বার।

এর মধ্যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হকের অবৈধ সম্পদের তদন্তে দায়িত্ব পেয়েছেন দুদক উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদ।

সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খানের সম্পদ অনুসন্ধানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুদক উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিনকে।

দুদক উপ-পরিচালক খাইয়রুল হুদা তদন্ত করবেন সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের অবৈধ সম্পদ।

এছাড়া আসলামুল হকের সম্পদের তদন্ত করবেন দুদক উপ পরিচালক শেখ ফাইয়াজ আলম, সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির সম্পদ অনুসন্ধান করবেন দুদক উপ-পরিচালক আহসান আলী, সংসদ সদস্য এনামুল হকের তদন্ত করবেন উপ পরিচালক সৈয়দ তাহসানুল হক এবং সাবেক সংসদ সদস্য এমএ জব্বারের সম্পদ তদন্তে রয়েছেন দুদকের উপ সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান।

দুদক সূত্রে পাওয়া অভিযুক্তদের অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য:

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক
পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা ছিল ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ টাকা। এখন তাদের ব্যাংক ব্যালেন্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৩ টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রী ইলা হকের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল মাত্র ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। এখন ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬৫ গুণ। অন্যদিকে রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালেন্স ২০০৮ সালে ছিল প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ব্যাংক ব্যালেন্সের অধিকাংশ স্ত্রী ইলা হকের নামে।

নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামা অনুসারে সামগ্রিকভাবে ২০০৮ সালের তুলনায় তার অস্থাবর সম্পদ ৪ গুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে রুহুল হক এবং তার স্ত্রীর মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি টাকার কিছু বেশি। ২০১৩ সালে সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স হিসেবে রাখা আছে। এককভাবে তার স্ত্রী ইলা হকের সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮ গুণ। আগে তার নামে অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মোট ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের। এখন তা ৮ কোটি ৩৯ লাখ ছাড়িয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাড.আবদুল মান্নান খান
পাঁচ বছর আগে অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খানের ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেটা হয়েছে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা। আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সেই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে তার সম্পত্তি ১০৭ গুণ বেড়েছে।

সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান
গত পাঁচ বছরে ২০ একর জমি থেকে ২ হাজার ৮৬৫ একর জমির মালিক হয়েছেন মাহবুবুর রহমান। পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি না থাকা স্ত্রীর নামে এখন ১ কোটি ২৬ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। নিজের ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ১১২ টাকার স্থাবর সম্পত্তি ৫ বছরের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ টাকা।

এমপি আবদুর রহমান বদি
জীবনে প্রথম সংসদ সদস্য হওয়ার পর ৫ বছরে তার আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। আর নিট সম্পদ বেড়েছে ১৯ গুণের বেশি। অভিযোগ রয়েছে, হলফনামায় বদি কেবল আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি গত ৫ বছরে আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা।

টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও টেকনাফে জ্বালানি তেলের ব্যবসা করে এ টাকা অর্জন করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। হলফনামা অনুসারে এমপি বদির এখন বার্ষিক আয় ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় ২ কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা।

এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেয়া হলফনামায় বলেছেন, তখন তার বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা। আর ব্যয় ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা। তখন (২০০৮) বিভিন্ন ব্যাংকে আবদুর রহমান বদির মোট জমা ও সঞ্চয়ী আমানত ছিল ৯১ হাজার ৯৮ টাকা। পাঁচ বছরের মাথায় এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার ২৩৭ টাকা। তার হাতে ২০০৮ সালের নভেম্বরে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ সাত হাজার ৪৮ টাকা। আর এখন ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া এখন স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ২৬৫ টাকা।

এমপি এনামুল হক
২০০৮ সালে এনামুল হকের বেতন-ভাতা থেকে আয় ছিল ২০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর পরে এখন কৃষি, বাড়ি ও দোকান ভাড়া, ব্যবসা ও পেশা থেকে বছরে তার আয় হয় ৫০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার ওপর নির্ভরশীলদের ৭ লাখ ৫১ হাজার ৬শ টাকা বার্ষিক আয় থাকলেও এবারের হলফনামায় নির্ভরশীলদের কোনো আয়ের উৎস নেই। তার নিজের, স্ত্রীর ও নির্ভরশীলদের মোট ১৬ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাধারণ শেয়ার থেকে কোনো আয় নেই।

পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর থাকা ২ কোটি ৮৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫শ টাকায়। এর মধ্যে এবার নিজের হাতে নগদ রয়েছে ১০ লাখ টাকা ও স্ত্রীর হাতে পাঁচ লাখ টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে আছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯১ টাকা ও স্ত্রীর নামে এক লাখ ৫৫ হাজার ৫শ টাকা।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone