বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » কেন্দ্রীয় কারাগারে আসামি বাণিজ্য

কেন্দ্রীয় কারাগারে আসামি বাণিজ্য 

 নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসামিদের দেখতে আসা লোকদের নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারারীদের রয়েছে রমরমা বাণিজ্য। কেবল কারারক্ষী নয়, আশপাশের লোকজনও তাদের নিয়ে ব্যবসা করে থাকে।সকাল ১০:৩৫ মিনিটে কারাগারের প্রধান ফটক থেকে ২০/২৫ গজ দূরে ছোট ছোট ঠেলাগাড়িতে করে খাবার আসতে দেখা যায়। সেদিকে যেতেই কারা কর্তৃপক্ষের একটি মুদি দোকান চোখে পড়ে। এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা আসামিদের জন্য খাবার কিনছেন। কাঁচামালসহ সব শুকনা খাবার পাওয়া যায় এখানে। বাধ্য হয়েই এখান থেকে সব খাবার কিনতে হয়। স্বজনেরা এখান থেকে খাবার কিনে কারা কর্তৃপরে মাধ্যমে ভেতরে পাঠান।kara
এখানকার পণ্যের দাম নিয়ে কথা হয় সোনিয়া নামের এক নারী ক্রেতার সঙ্গে। তিনি স্বামীর জন্য বাকরখানি, বিস্কুট, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ কিনেছেন। বাজারের চেয়ে এখানকার সব পণ্যের দাম কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা বেশি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পুরুষ-নারী ক্রেতাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকলেও যে যার মতো পণ্য কিনছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ নিয়ে কথা হয় দোকানের দায়িত্বে থাকা দুই ব্যক্তির সঙ্গে।
প্রথমজন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চিলে কান নিয়ে গেছে বলে কি চিলের পিছে ঘুরতে হবে?’ নাম জানতে চাইলে তিনি অনীহা দেখান। দায়িত্বে থাকা অন্য ব্যক্তি বলেন, ‘খাবারের দাম জেল কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করা। কোনো অতিরিক্ত টাকা রাখা হচ্ছে না।’
লাইনে দাঁড়াতেও বৈষম্য
কারারক্ষীদের ‘আসামি বাণিজ্য’সকাল ১০:৪৫ মিনিট দোকানটির ডানপাশে শোরগোল শুনে সেখানে যেতেই চোখে পড়ে টিকিট (স্লিপ) কাউন্টার। এখানে নারী-পুরুষসহ চারটি লাইনে দাঁড়িয়ে স্বজনরা নাম, অপরাধ ও সেলের নাম উল্লেখ করে টিকিট সংগ্রহ করছেন। ব্যাচের নাম অনুসারে সাইফুল, আল-আমিন, হাসানসহ চারজন মিলে টিকিট কাটছেন। তবে দীর্ঘলাইনের মাঝেও দেখা গেল বৈষম্য। ব্যাচের নাম অনুযায়ী জিয়া ও আলম (কারারী) কিছুণ পর পর এসে স্পেশালের নামে টিকিট কেটে নিচ্ছেন।

টাকা দিলেই দ্রুত দেখার সুযোগ
সকাল ১০:৫৩ মিনিট দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার পর আসামির স্বজনদের লাইনের পেছনে থাকা সিল (টাইম সিল) অনুযায়ী যেতে হচ্ছে। এখান থেকেই নির্ধারণ করে দেয়া হয় কে কখন কোন আসামির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। কয়েকটি ব্যাচে ভাগ করে স্বজনেরা আসামিদের সঙ্গে দেখা করেন। প্রতিটি ব্যাচে সময় আধা ঘণ্টা। এ আধা ঘণ্টা ঠিক কতোজন স্বজন আসামির সঙ্গে দেখা করতে পারেন তা নির্দিষ্ট করা নেই বলে জানান দায়িত্বরত কারারী দেলাওয়ার।
আপনি যতোদূর থেকেই আসনু না কেন, আপনাকে সিলের জন্য ৩/৪ ঘণ্টা অপো করতেই হবে। তবে সময় প্রদানকারী কারারীদের হাতে ৩০০/৪০০ টাকা ধরিয়ে দিলে আপনাকে আর অপো করতে হবে না। ‘স্পেশাল’ দেখার নামে সবার আগে আসামির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন আপনি।
টাকা ছাড়া দেখা করতে গেলেই হয়রানি
কারারীদের ‘আসামি বাণিজ্য’আসামিদের সঙ্গে দেখা করতে টাকার প্রয়োজন হয় কি-না, এ নিয়ে কথা হয় শামসুল হক নামের এক কয়েদীর বাবার সঙ্গে। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানা থেকে এসেছেন তিনি। তার ভাষ্য মতে, আগের দিন তিনি ফ্রি টিকিট কেটেছিলেন ঠিকই, তবে যেখানেই গেছেন উল্টো পথ দেখিয়েছে কারারক্ষীরা। তারা (কারারক্ষীরা) বলে আসামিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আজ ১০০ টাকা নিয়েছে আসামি খুঁজতে এবং ৩০০ টাকা নিয়েছে আসামির সঙ্গে ‘স্পেশাল’ কথা বলার জন্য। স্লিপের সময় অনুযায়ী দুপুর সাড়ে ১২টায় দেখা করা যাবে। তবে একজন অফিসার (কারারক্ষী) বলেছেন- আপনি ৫০০ টাকা দিলে আপনার ছেলের সঙ্গে ‘এক্ষুনি’ দেখা করতে পারতেন।
১১:০৫ মিনিটে কথা হয় এক কয়েদীর মা আছিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেরে দেখতে আইলে হেরা (কারারক্ষী) একদিন ৩০০ টাকা চাইছেলো। কিন্তু আমি কহনো টাকা দিয়া ছেলেরে দ্যাখতে যাই নাই। আমার ছেলেডা ভালাই আছিলো। বন্ধুরা ওরে খারাপ বানাইছে। জেলে ঢুহায় রাখছি নেশা কাটনের লাইগা।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ফরমান আলী বলেন, ‘এখানে আসামিদের সঙ্গে দেখা করতে কোনো খরচ হয় না। আসামিদের সঙ্গে দেখা করতে হলে স্বজনদেরকে এসে একটি দরখাস্ত করতে হয়। এখানে আমাদের লোকেরা বসে আছে দরখাস্ত লেখার জন্য। এ দরখাস্তে উল্লেখ করতে হয় আসামি কোন গ্রুপে পড়েছে। সে অনুযায়ী স্বজনকে কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করতে একা ডাকবে।
তিনি বলেন, আসামিদের সঙ্গে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দেখা করার সুযোগ রয়েছে। স্বজনরা চাইলে অবশ্য আসামির সঙ্গে স্পেশালভাবেও জেলগেটে দেখা করতে পারেন। তবে এটা জেল সুপারিনটেনডেন্টের উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রেও কোনো টাকা দিতে হয় না।
জেল সুপার ফরমান আলী এতক্ষণ যা বললেন তা শুধু নিয়মের কথা। কিন্তু নিয়মকে নিয়মের বাইরে রেখে কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারক্ষীদের ‘আসামি বাণিজ্য’ থেমে নেই।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone