বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শনিবার, মে ৪, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » ফিলিস্তিনের অভাবনীয় কূটনৈতিক বিজয়

ফিলিস্তিনের অভাবনীয় কূটনৈতিক বিজয় 

রোকন উদ্দিন, ঢাকা: গত ২৯ নভেম্বর জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের প্রস্তাবের পে ১৩৮ ভোট ও বিপে মাত্র ৯ ভোটের বিরাট ব্যবধানে প্রস্তাব গৃহীত হয়ে ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে ‘পর্যবেক’ থেকে ‘পর্যবেক অসদস্য রাষ্ট্র’ রূপে আসন লাভ ফিলিস্তিনের জন্য ঐতিহাসিক কূটনৈতিক বিজয় এনেছে। অপর দিকে ইসরাইলের জন্য এটা হয়েছে এ সময়ের বৃহত্তম কূটনৈতিক বিপর্যয়, যা ইসরাইলকে এক মহাআতঙ্কের মুখোমুখি দাঁড় করে দিয়েছে তা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে) ইসরাইলি রাজনীতিক ও দখলকারী সেনাদের বিচারের মুখোমুখি করার দরজা খুলে গেল। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন যে স্বীকৃতি লাভ করল, তাতে ফিলিস্তিন ইসরাইলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার চাইতে পারে।

lp

ফিলিস্তিন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংরণ-সংক্রান্ত অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বার করতে পারবে। এর ফলে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অনেক কর্মকাণ্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ফিলিস্তিন জাতিসঙ্ঘের স্পন্সর করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে সদস্যপদ লাভ করতে পারে। সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতি লাভের পর ফিলিস্তিনের জন্য পরবর্তী পদপেটি এখন স্পষ্ট হয়ে উঠে ধাতা হলো স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি ও সদস্যপদ লাভ। এটা হয়তো নিকট ভবিষ্যতে হবে না; কিন্তু এই ল্েযর দিকে ফিলিস্তিনের অগ্রযাত্রার পথরেখা এখন দৃষ্টিপথে আসছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে স্বীকৃতি লাভ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। গত ২৯ নভেম্বরের ভোটগ্রহণে ফিলিস্তিনের অনুকূলে আরো কয়েকটি পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে। এগুলো হলো : পাশ্চাত্যের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর বেশ কয়েকটিই এখন আর ইসরাইলের সমর্থক নয়। ফিলিস্তিনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়া থেকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স বিরত থেকে ইসরাইলের প্রতি তাদের সমর্থনের অভাব প্রকাশ করেছে। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা ফ্রান্সের ওপর চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ফিলিস্তিনের প্রস্তাবের সমর্থনে যেখানে জাতিসঙ্ঘের সদস্য ১৩৮ দেশ ফিলিস্তিনের পে ভোট দিয়েছে, সেখানে মাত্র ৯টি দেশ প্রস্তাবের বিপে ভোট দেয়ায় বিশ্বে ইসরাইলের ক্রমবর্ধমানভাবে একঘরে হয়ে যাওয়াটা নিদারুণভাবে ফুটে উঠেছে। জাতিসঙ্ঘের প্রভাবশালী সদস্যরাষ্ট্র চীন ও ভারত এই প্রথমবার ফ্রান্স ও স্পেনের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের প্রস্তাবের পে ভোট দিয়েছে। ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া ভোটদান থেকে বিরত থেকে ফিলিস্তিনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করা থেকে সরে গেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পে ফিলিস্তিনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার জন্য ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু তাদেরকে তাদের অবস্থান থেকে নড়াতে পারেনি। এই ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান যে ব্যবধান ফুটে উঠল, তা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে স্বীকৃতি লাভের দিকে অনুকূল হাওয়া সৃষ্টি করতে পারে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে তার প্রস্তাব উত্থাপন করা থেকে বিরত করতে সর্বাধিক চাপ প্রয়োগ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামার প্রতি আকুল আহ্বান জানিয়েছিলেন। অবশ্য এই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওবামার বিরুদ্ধে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মিট রমনির প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। সে যাই হোক, এখন ফিলিস্তিনের এই ভোট বিজয়ের পর ইসরাইল তার সুর বদলে বলছে : ‘যদি ফিলিস্তিন তাদের এই নতুন স্বীকৃতি লাভকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কাজে লাগায়, শুধু তখনই ইসরাইল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেবে।’ এটা স্পষ্টতই ইসরাইলের আগের অবস্থান থেকে পিছু হটা। কারণ, ইসরাইল ইতঃপূর্বে হুমকি দিয়েছিল, ফিলিস্তিন যদি জাতিসঙ্ঘে তাদের প্রস্তাব পেশ করে, ইসরাইল ফিলিস্তিন অঞ্চলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করবে, এমনকি ফিলিস্তিনের অর্থনীতি ধ্বংস করাকে ত্বরান্বিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় আয়করের যে অঙ্কটা ফিলিস্তিনকে দেয়া হয়, তা দেয়া বন্ধ করে দেবে। ফিলিস্তিনের এই ভোট বিজয়ে ফিলিস্তিনপ্রধান মাহমুদ আব্বাসের জন্য আরেকটি প্রধান লাভ হলো, জাতিসঙ্ঘে তার ফিলিস্তিনের এই প্রস্তাব পেশের প্রতি তার প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী হামাস সমর্থন প্রকাশ করেছে। হামাসের প্রধান খালেদ মেশাল মার্কিন মিডিয়াকে বলেন, ‘তার দল ফিলিস্তিন দাবিগুলো আদায় হতে থাকলে রক্তপাত ও অস্ত্র ব্যবহার ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পথে প্রয়াস চালানো আবার শুরু করতে রাজি আছে।’ অক্টোবরে এই হামাস ইসরাইলি এলাকার ওপর শত শত রকেট বর্ষণ করেছে অভিযোগ করে ইসরাইল গাজার ওপর বেপরোয়া বোমাবর্ষণ করেছিল। ইসরাইলের বামপন্থী ঘরানার ইওসি বেইলিন প্রমুখ নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের এই নবলব্ধ স্বীকৃতিকে মেনে নিয়ে ফিলিস্তিন প্রধান মাহমুদ আব্বাসের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, ‘ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতিলাভের প্রতি যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরোধিতা চলতে থাকে, তা মাহমুদ আব্বাসের অবস্থানকে নড়বড়ে করে দিতে পারে, যা হামাসের প্রতি একটি পুরস্কার হয়ে হামাসের শক্তি ও বৈধতাকে গ্রহণীয় করে তুলবে।’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone