বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী’র হেফাজতে ইয়াসমিন ট্রাজেডি’র ১৯ বছর

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী’র হেফাজতে ইয়াসমিন ট্রাজেডি’র ১৯ বছর 

প্রধান প্রতিবেদকঃ   ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যা ট্রাজেডি দিবস ২৪ আগস্ট। ১৯ বছর আগে ১৯৯৫ সালের এই দিনে দিনাজপুরে পুলিশি হেফাজতে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয় কিশোরী ইয়াসমিন। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে পড়ে দিনাজপুর। পুলিশি হেফাজতে তরুণী ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় সামু, সিরাজ ও কাদের নামে ৩জন। আহত হয় আরও শতাধিক মানুষ। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতা দিনাজপুর কোতয়ালী থানা, ৩টি পুলিশ ফাড়ি, কাস্টমস গোডাউন, ৪টি পত্রিকা অফিসসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়।
২৪ আগস্ট এই দিনটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি এখনও। এমন মন্তব্য নিহত ইয়াসমিনের মা ও নারী সমাজের।

yasmin

১৯৯৫ সাল। ২৪ আগস্ট। স্থান: দশ মাইল মোড়। সময়: তখন ভোর ৪টা। দিনাজপুর শহর অভিমুখে ফিরতে অপেক্ষমাণ তরুণী ইয়াসমিন। ফজরের নামাজ পড়তে বের হওয়া স্থানীয় মুসল্লিরা নিরাপদে যেতে তাকে তুলে দিলেন একটি পুলিশ ভ্যানে। মুসল্লিরা কোতয়ালী পুলিশকে অনুরোধ করলেন তরুণীকে দিনাজপুরে পৌঁছে দিতে। কিন্তু পুলিশ ভ্যানে উঠেই ইয়াসমিনকে বিদায় নিতে হয় পৃথিবী থেকে। ১০ মাইল থেকে দিনাজপুর শহরে আসার পথে ব্র্যাক স্কুলের সামনে ভোরের দিকে পুলিশ ভ্যানে উপস্থিত ৩ জন সদস্য এসআই মইনুল কনেস্টবল সাত্তার ও অমৃত ইয়াসমিনের শ্লীলতাহানি ঘটিয়ে চলন্ত পিক আপ ভ্যান থেকে ছুড়ে ফেলে দিলে তার মৃত্যু ঘটে।
ইয়াসমিনের এই হৃদয়বিদারক মৃত্যুর ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যার জের ধরে বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার জনতা কোতয়ালী থানা ঘেরাও করে। লুট হয় একে একে কাস্টমস গোডাউনসহ শহরের বিভিন্ন সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। জ্বালিয়ে দেয়া হয় ৪ টি পত্রিকা অফিস ও প্রেসক্লাব। ২৭ আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতা একে একে রাজপথে নেমে এসে সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তার বদলি এবং দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবী করলে জনতার উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলী করে। এ ঘটনায় সামু, কাদের ও সিরাজ নিহত হয়। আহত হয় আরও শতাধিক ব্যক্তি। এখন তারা মৃত্যু’র যন্ত্রণার প্রহর গুনছে।
পরবর্তীতে দিনাজপুর থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে ইয়াসমিন হত্যা মামলাটি স্থানান্তর করা হয় রংপুরে। রংপুর বিশেষ আদালতে ইয়াসমিন হত্যা মামলার স্বাক্ষ্য প্রমাণ শেষে দোষী প্রমাণিত ৩ পুলিশ সদস্যাকে ফাঁসি দেয়া হয়। উপমহাদেশের ইতিহাসে দোষী পুলিশদের ফাঁসিতে মৃত্যু কার্যকরের ঘটনা এটাই প্রথম।
২৪আগস্ট এই দিনটি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু নারী নির্যাতন বন্ধ হয়নি এখনও।
ইয়াসমিনের স্মরণে দিনাজপুরের দশ মাইল এলাকায় তৈরি করা হয়েছে ইয়াসমিন স্মরণী। এ বিষয়ে নিহত ইয়ানমিনের মা শরিফা বেগম জানান, এখন তার কেউ খোঁজ নেয় না। দিবসটি আসলে শুধু সাংবাদিকরা তার কাছে যায়, খোঁজ-খবর নেয়। ছবি তুলে। দশ মাইলে ইয়াসমিন স্মরণে যে স্মরণী তৈরি করা হয়েছে এবং তাতে যে ছবি স্থান পেয়েছে তা ইয়াসমিনের নয় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন,আমার মেয়ে ইয়াসমিন স্মরণে যে স্মরণী তৈরি করা হয়েছে, তা তৈরি বা উদ্বোধনের সময় আমাকে কেউ জানায়নি। তারা অন্যের ছবি দিয়ে ইয়াসমিন বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।
দিবসটি আসলেই দিনাজপুর শেখ জাহাঙ্গীর গোর স্থানে ইয়ানমিনের কবরটি চুনকাম করা হলেও ইয়াসমিন ঘটনায় পরবর্তী ঘটনায় নিহত সামু, কাদের ও সিরাজের স্মৃতি ফলকগুলো শহর থেকে হারিয়ে গেছে।
দিবসটি বিভিন্ন সংগঠন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি পালনে ইয়াসমিনের পরিবার এবং বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিনব্যাপী দোয়া মাহফিল, কবর জিয়ারত ও আলোচনা সভাসহ গ্রহণ করেছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
ইয়াসমিন আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী তৎকালীন পৌর মহিলা কমিশনার মনোয়ারা সানু জানান, আমারা ইয়াসমিন আন্দোলনের সুফল এখনও পাইনি। এখনও আমাদের মা-বোনেরা হায়নাদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে, ধর্ষিতা হচ্ছে। আমরা আজও পাইনা এর সুবিচার। ইয়াসমিন ট্রাজেডি’র কালের স্বাক্ষী নিহত ইয়াসমিনের মা। ইয়াসমিনের মায়ের প্রাণের দাবী- আর যেন না ঘটে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী’র হেফাজতে ইয়াসমিন ট্রাজেডি’র মতো জঘন্যতম ঘটনা।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone