বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » বিশেষ সংবাদ » একজন বিদেশি শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবিতে

একজন বিদেশি শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবিতে 

প্রধান প্রতিবেদকঃ   প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এতিহ্য এখন অনেকটাই শেষ হওয়ার পথে। কলুষিত রাজনীতি, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা, প্রযুক্তি সেবায় আধুনিকায়নের অভাবসহ সর্বাপরি শিক্ষার মান কমে যাওয়া এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারনে ঢাবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশী শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেষ তিন শিক্ষাবর্ষে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্মান শ্রেণীতে কোনো বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এক সময় ক্যাম্পাসে বিদেশী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে চোখে পড়লেও বর্তমানে তাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। তবে আন্তর্জাতিক ভাষা ইনস্টিটিউটসহ বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কিছু প্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে।

dhabi

গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার দিকে নজর দিলেই এ দূরাবস্থা চোখে পড়ে। তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে বিদেশী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা একেবারে নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবন ও হল সূত্রে জানা যায়, ২০০০-২০০১ সেশনে ঢাবিতে মোট ২৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ২০০১-২০০২ সেশনে তা কমে দাড়ায় ২২ জনে। ২০০২-২০০৩ সেশনে ১২ জন, ২০০৩-২০০৪ সেশনে ৯ জন, ২০০৪-২০০৫ সেশনে ৫ জন, ২০০৫-২০০৬ সেশনে ৪ জন, ২০০৬-২০০৭ সেশনে ৮ জন, ২০০৭-২০০৮ সেশনে ৩ জন ও ২০০৮-২০০৯ সেশনে ৬ জন এবং ২০০৯-২০১০ সেশনে মাত্র ২ জন। ২০১০-২০১১ এবং ২০১১-২০১২ সেশনে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। তবে ২০১২-২০১৩ সেশনে মাত্র ১জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। ২০১৩-২০১৪ সেশনেও কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের অধিকাংশ নেপাল, ভারত, চীনসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ৫ হাজার ডলার ফি দিতে হয়, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪ লাখ টাকা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিকভাবে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সংযোজিত ই-মেইলের মাধ্যমে ভর্তির ব্যাপারে আবেদন করার সুযোগ থাকলেও জটিল এক পক্রিয়ার মাধ্যমে তা সম্পাদিত হয়। প্রথম পর্যায়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য পররাষ্ট মন্ত্রাণালয় থেকে ৩টি ফরম দেয়া হয়। এর ১টি থাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। অন্য একটি ১টি ফরম পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় থেকে কনফার্মেশনের মাধ্যমে সার্টিফিকেট পাওয়ার পর ১টি ফরম পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। শিক্ষা সচিবের স্বাক্ষর পাওয়ার পর একটি ফরম ফেরত পাঠালেই কেবল শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। এসব কারণে বিদেশী শিক্ষার্থীরা ঢাবি বিমুখ হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়।
সব মিলিমেয় দীর্ঘ এ পক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে ২ থেকে ৩ মাস। এতে করে অনেকেই দীর্ঘ এ জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আগ্রহ বোধ করে না। এছাড়া ওয়েবসাইটে ভর্তির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় সেখান থেকে তারা প্রয়োজনীয় তথ্য পায় না।
তাছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার বিল্ডিংয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য আলাদা কোনো শাখা নেই। বৃত্তি শাখাতে চলছে এর কার্যক্রম।
সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা গেছে, বৃত্তি সেকশনে বিদেশী ছাত্রদের ভর্তির জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। তাদের তথ্য সংরক্ষণের ব্যাপারেও রয়েছে যথেষ্ট অবহেলা।
এ ব্যাপারে বৃত্তি শাখার সহকারি রেজিষ্ট্রার হামিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আলাদা শাখা করার দাবি জানিয়ে আসছেন। উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো এটি বাস্তবায়িত হয়নি। এ ব্যাপারে তিনি কতৃপক্ষের অনিহাকেই দায়ী করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য রয়েছে স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল। তাদের জন্য নির্মিত একমাত্র এ হলটি এখন শিক্ষকদের কোয়ার্টারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে হলটিতে মোট ৫৫ জন শিক্ষক অবস্থান করছে। এদের মধ্যে হলের হাউজ টিউটর ও অন্যান্য দায়িত্বে মাত্র কয়েকজন শিক্ষক থাকলেও বাকীরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে হলে অবস্থান করছে। বিভিন্ন উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমতি নিয়ে এ হলে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল হলের পাকিস্তানী ছাত্র মারুফ আজিজ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে অনেক টাকা খরচ হয়। তাছাড়া ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক পরিবেশও অনূকুল নয়।
এছাড়া একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশী ছাত্রদের জন্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিতে পারে না। ফলে বিদেশী শিক্ষার্থীরা এখানে আসতে আগ্রহবোধ করে না।
স্যার পি জে হার্টজ হলের প্রাধ্যক্ষ লুৎফর রহমান বলেন, ভর্তির ক্ষেত্রে জটিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থী কম ভর্তি হয়। হলে বর্তমানে ১৬৫ জন শিক্ষার্থীর আবাসিকতার ব্যবস্থা রয়েছে। ১২৩টি রুমের মধ্যে ৬৩টি রুম বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। বাকি রুমগুলোতে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের তুলনায় ছাত্ররা কম ভর্তি হচ্ছে এটা ঠিক তবে আধুনিক ভাষা ইন্সিটিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে বিদেশী ছাত্রদের চাহিদা কমেনি।
তাদের ঢাবিতে পড়ার অনাগ্রহের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থীরা বর্তমানে প্রযুক্তি ও মেডিকেল শিক্ষার দিকে পড়ালেখা করতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone