বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » Uncategorized » আদর্শ সেবালয় ও পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বরিশালের সতীন্দ্র স্মৃতি গান্ধী আশ্রম

আদর্শ সেবালয় ও পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে বরিশালের সতীন্দ্র স্মৃতি গান্ধী আশ্রম 

mnb

॥ শুভব্রত দত্ত ॥  বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়নে ঐতিহাসিক একটি গ্রাম বেবাজ। উপজেলা সদর থেকে গ্রামটির দূরত্ব দুই কিলোমিটার। এখানে রয়েছে পৃথিবীখ্যাত শান্তির অগ্রদূত মহাত্মাগান্ধীর অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনায় তৈরি একটি আশ্রম। যার নাম সতীন্দ্র স্মৃতি গান্ধী আশ্রম। এক সময় এই আশ্রমটি জনকল্যাণে নিবেদিত থাকায় অনেক সুনাম ছিল। কিন্তু আজ দীর্ঘদিন ধরে এই আশ্রমটি অবহেলায় পড়ে আছে।

১৯৪৬ সালের ১ জানুযারি এই আশ্রমে আসবেন বলে তার অনুসারীদের কথা দিয়েছিলেন স্বয়ং গান্ধীজি। কিন্তু ওই সময়ে আহমেদাবাদে অবস্থানরত গান্ধীজি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পক্ষে আর এত দূরে আসা সম্ভব হয়নি। তবে ১৯৪৮ সালে গান্ধীজির ভ্রাতুষ্পুত্র কানু গান্ধী এসেছিলেন তার স্ত্রী আভা গান্ধীকে নিয়ে। আভা ছিলেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শোলক গ্রামের অমৃত লাল চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে।
একদা আশ্রমের মাধ্যমে সহায়তা পাওয়া এলাকার প্রবীণ ও দুস্থ মানুষজন স্মৃতি রোমন্থন করে জানান, গান্ধীজির নির্দেশে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে এই আশ্রম থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হতো। এখানে হস্তশিল্পসহ উপার্জনের নানাবিধ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কলকাতা ও নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রমের সদস্যরাও এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন।
তারা জানান, ১৯৮০ সালে আশ্রমের প্রাণপুরুষ অকৃতদার রাম কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর স্থিমিত হয়ে পড়ে এখানকার ‘গ্রাম সেবা’ কার্যক্রম। জৌলুস হারানো এই আশ্রমটিতে এখন চলাচলের রাস্তা নেই। এক দশক হলো বন্ধ রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ।
অনেক কিছু ‘নাই’কে সঙ্গী করে পথ চলা যে দুষ্কর সে কথা জানালেন আশ্রমের ন্যাশ রক্ষিণী সভা বা ট্রাস্টের সম্পাদক তপঙ্কর চক্রবর্তী। ভেঙ্গে পড়া ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও কবে তা শেষ হবে এই নিয়ে চিন্তায় আছেন তারা। অর্থাভাবে মাছ চাষের জন্য খনন করা যাচ্ছে না দুই একরের দীঘির কিছু অংশ। লোকবলের অভাবে শুরু করা যাচ্ছে না আগের সেবামূলক কর্মসূচি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ব্যক্তি উদ্যোগ ও ট্রাস্টের সদস্যদের সাহায্য-সহযোগিতায় আশ্রমের কাজ চলছে। তবে প্রয়োজনে ট্রাস্টের সদস্যদের অনুমতিক্রমে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সহযোগিতা চাওয়া হবে। আশ্রমের এই সম্পাদক আশা প্রকাশ করে বলেন, রাস্তা নির্মাণ, পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ, পুকুর খনন করে মাছ চাষ, ভবন নির্মাণ ও সার্বক্ষণিক লোক নিয়োগ করা গেলে আগের মতোই সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকা- করা যাবে।
একদা ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ‘ওয়ার্দা আশ্রম’ থেকে দেশবাসীর কর্তব্য সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দিতেন। যার ধারাবাহিকতায় এবং গান্ধীজির নির্দেশে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ‘গ্রাম সেবা’ কর্মসূচির আওতায় বরিশালের বেবাজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই আশ্রমটি। জানা গেছে, গান্ধীবাদী সতীন্দ্র নাথ সেন, শৈলেশ্বর চক্রবর্তী, কেদারনাথ সমদ্দার, বিনোদ বিহারী কান্তিলাল, দেবেন্দ্র নাথ দত্ত, নির্মল চন্দ্র ঘোষ, রঞ্জন কুমার দত্ত ও শান্তিসুধা ঘোষ মিলে এই আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেন। মহাত্মী গান্ধীর নির্দেশে তার অনুসারীরা সাড়ে ১২ একর জমি প্রদান করেন। এতে অবহেলিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা হয়। আর গুণী ব্যক্তি রঞ্জন দত্তের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় মৌ চাষ, বাঁশ-বেতের কাজ, গবাদি পশু পালন, নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কার্যক্রম। যা শুরু হয়ে একটানা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী এই আশ্রমে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে দুটি ঘরসহ মূল্যবান লাইব্রেরীটিও পুড়ে ছাড়খার হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর আশ্রমের প্রাণপুরুষ রাম কুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় ফের আশ্রমের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এই আশ্রমের মাধ্যমে রাম কুমার চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে জার্মান সংস্থা কোর প্রচুর ত্রাণ দেয় বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। প্রচলিত আছে, এই উপজেলায় এমন কোন লোক ছিল না যে আশ্রম থেকে ত্রাণ পায়নি।
আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানান, এমনকি ১৯৭০ সালে স্থানীয় কলেজ নির্মাণের সময় ৭০ বান্ডিল টিন ও ৩০ হাজার টাকা নগর অনুদান দেয়া হয়েছিল আশ্রমের নিজস্ব আয় থেকে। এমনিভাবে বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণকালেও সহায়তা দেয়া হয়। এছাড়া রাম কুমার চট্টোপাধ্যায় বেবাজ থেকে কলসকাঠি পর্যন্ত ইটের রাস্তা করে দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, আশ্রমের ন্যাশ রক্ষিণী সভার আট সদস্যের বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু ও ১৯৮০ সালে রাম কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর বন্ধ হয়ে যায় আশ্রমের সকল কার্যক্রম। যে আশ্রম থেকে পূর্ববঙ্গে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষ শুরু হয়েছিল, তাও বন্ধ হয়ে যায়।
জনকল্যাণমুখী এই আশ্রটির বিভিন্ন কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার প্রবীণ মানুষেরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা এই আশ্রমটিকে পুনরুজ্জীবিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, সরকারি উদ্যোগ ও বিত্তবান মানুষেরা এগিয়ে এলেই মহাত্মা গান্ধীর নির্দেশে তৈরি এই আশ্রমটি আবার সেবামূলক কাজে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চুন্নু বলেন, এ আশ্রম রক্ষায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা তো আছেই। তবে এখন যে পর্যায় তাতে সরকারকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, এই আশ্রমের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে আসেনি বা আমার জানা মতে, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে কোন আবেদনও করা হয়নি।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone