বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|সোমবার, মে ২০, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » সৌদি মদদেই গাজায় ঘৃণ্য বর্বরতা

সৌদি মদদেই গাজায় ঘৃণ্য বর্বরতা 

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ  ফিলিস্তিনের গাজায় অসহায় মুসলমানদের রক্ত ঝরছে। এর জন্য প্রকাশ্যে ইসরাইলি হানাদার বাহিনী জড়িত থাকলেও নেপথ্যে রয়েছে সৌদি আরব।gazaসৌদি আরব এমন একটা দেশ যেখানে মুসলমানদের কেবলা কাবা ও নবী মুহাম্মদের (সা.) রওজা মোবারক রয়েছে।এ কারণে সৌদির প্রতি মুসলমানদের মধ্যে অসামান্য আবেগ ও ভালো লাগা রয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি দেশটির শাসকগোষ্ঠী।তারা গত বছরের জুলাইতে মিশরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে অপহরণ করে সেনা অভ্যুত্থানেই জড়িত ছিল না। কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা ও শত শত নারীকে ধর্ষণে মিশরের সেনাবাহিনীকে মদদ দিয়েছে।ঠিক এক বছর পরে সেই সৌদি মদদেই গাজায় নেমে এসেছে ঘৃণ্য বর্বরতা। ইসরাইলি সেনাদের হামলায় প্রতি নিয়ত নিহত হচ্ছেন গাজার মুসলমানরা।এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় পাঁচ শতাধিক মুসলমান নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু ও নারী।এসব হত্যাকাণ্ডকে সোজা কথায় সৌদি পরিকল্পনার ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়। কিন্তু খোদ পরিকল্পনাটি রাজনৈতিকভাবে এত ভয়ঙ্কর যে চিন্তাও করা যায় না। সৌদি আরব চায় ইসরাইলি হানাদার বাহিনী গাজা থেকে হামাসকে সমূলে উপড়ে ফেলুক।এই চাওয়াকে বাস্তবায়ন করতে হামাসের সব নেতাকে হত্যা, তাদের ঘরবাড়ি ও প্রতিরোধ ঘাঁটিগুলো গুড়িয়ে দিতে গাজায় স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল।এই নেপথ্য ঘটনায় তাই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, সৌদি আরব কেন মিশর ও ফিলিস্তিনে মুসলমানদের হত্যা করতে মদদ দিচ্ছে?প্রশ্নটির জবাবও খুব পরিষ্কার। দীর্ঘদিন ধরে সৌদিসহ আরব দেশগুলোতে অগণতান্ত্রিক ফ্যাশিস্ট শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব জনগণ গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করে আসছে। এই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম পর্যায়টা রুখে দেয়ার পর বিপ্লবের আর কোন বীজই যেন আরবের কোথায় না থাকে তার জন্য দেশে দেশে হত্যা ও ধ্বংসের পৈশাচিকতা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।গাজা যুদ্ধের নেপথ্য ঘটনা নিয়ে হাফিংটন পোস্ট-এ প্রকাশিত ডেভিড হার্স্ট-এর ‘গাজায় আক্রমণ সৌদি রাজের মদদে’ শীর্ষক কলাম পড়ুন-গাজায় ইসরাইলি হামলার পেছনে অনেকগুলো পক্ষ জড়িত রয়েছে। আর হামাসকে বেধড়ক মার দেয়ার ঘটনাঘটনে আমেরিকার অসুখি হওয়ার কোন কারণও নেই।শেজাইয়া শহরে ব্যাপক হত্যালীলার ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পরও জন কেরি এনবিসির সাথে রবিবার বলেন যে ইসরাইলের আত্মরক্ষা করার পুরো অধিকারই রয়েছে।ইসরাইলের চ্যানেল টু এর সাথে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত ড্যান শাপিরো গাজায় মডারেট (মডারেট হল এমন মুসলমানের দল যারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি অনুগত এবং সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থের মাপে মুসলমানদের চিন্তা ও যাপনকে মডারেশন বা সংস্কার করে-অনলাইন বাংলা) শক্তিকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করার আশা প্রকাশ করেন।গাজা ফিলিস্তিনিদের রক্তে ভেসে গেলেও মিশর দু:খে ভেসে যায়নি। মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের প্রস্তাবিত অস্ত্র বিরতিতে রাজি না হওয়া এবং বেসামরিক লোকদের হতাহতের জন্য হামাসকে দায়ী করেছেন।নেতানিয়াহুর এই রক্তাক্ত অভিযানের অনুমতি শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আসেনি। প্রতিবেশি আরব দেশগুলো থেকে এর অনুমতি না মিনলে এমন ভয়াবহ হামলা চালানো ইসরাইলের পক্ষে কখনো সম্ভব ছিলনা।গাজায় ইসরাইলি হামলা সৌদি রাজতন্ত্রের সম্মতিতেই ঘটেছে। ইসরাইলে এটা ওপেন সিক্রেট। বর্তমান ও সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এটা নিয়ে রাখডাক না রেখেই বলাবলি করে থাকে।সাবেক ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শাওল মোফাজ চ্যানেল টেন এর উপস্থাপকে বিস্মিত করে দিয়েছেন যখন হামাসকে বেসামরিকীকরণের ক্ষেত্রে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। এটা বলতে তিনি কি বুঝাচ্ছেন এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন হামাসকে নিরস্ত্র করার পর সৌদি ও আমিরাতি গাজাকে পুনর্গঠন করতে টাকা ঢালবে।মোবারকের মিশরে ইসরাইলি প্রতিনিধি এবং বর্তমান ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পলিসি ও রাজনৈতিক-সামরিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক আমোস গিলাদ শিক্ষাবিদ জেমস ডোরসেকে সম্প্রতি বলেন, ‘সবকিছুই গোপণে হচ্ছে। কোন কিছুই প্রকাশ্যে নয়। কিন্তু মিশর এবং আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে আমাদের নিরাপত্তা সম্পর্ক অসাধারণ। এই মুহূর্তে আরবদের সাথে আমাদের সবচেয়ে ভাল নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’তাহলে উদযাপনটা আসলে পারস্পরিক। সৌদি রাজা আবদুল্লাহ এটা সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহকে ফোন দিয়েছেন এবং যুদ্ধবিরতি বিষয়ে মিশরকে পদক্ষেপ নিতে বলছেন। হামাসের কাছে প্রস্তাবটা ঠিকমত পেশ করাও হয়নি। জেরুজালেম পোস্টে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন আসলেই কি যুদ্ধবিরতি চাওয়া হয়েছিল কিনা!মোসাদ এবং সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিয়মিত দেখাসাক্ষাত করেন। সাবেক মিশরীয় প্রেসিডেন্ট মুরসিকে সড়িয়ে দেয়ার পেছনে দুপক্ষেরই হাত রয়েছে। এরপর তারা ইরানের দিকে মনোযোগ দেয়।সৌদির আকাশসীমা ব্যবহার করে ইরানে হামলা এবং নিউক্লিয়ার প্রোগ্রামে হামলা চালানোর জন্য ইসরাইলকে অনুমতি দিয়ে রেখেছে সৌদি। ইরানের বিরুদ্ধে সকল উচ্চাভিলাসী ইসরাইলি প্রজেক্টে সৌদি অর্থায়ন করছে বলে একটি উচ্চ মহল থেকে জানা যায়।সৌদি আরব এবং ইসরাইল কিভাবে এত অন্তরঙ্গ বন্ধু হলো? দশকের পর দশক ধরে দুটি দেশেরই একই অনুভূতি সেটা হলো, ‘ভয়’। ভয়ের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিক্রিয়াও একই রকমের।দুপক্ষই মনে করছে প্রতিবেশিদের মধ্যে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে তাদেরকে আক্রমণ করতে হবে। যেমনটি হয়েছে লেবানন এবং ইয়েমেনে।আরেকটি উপায় হচ্ছে প্রক্সি যুদ্ধ এবং অভ্যুত্থানে অর্থায়ন করা যেমন সিরিয়া, মিশর এবং লিবিয়া। তাদের শত্রু এবং প্রতিপক্ষও একই-ইরান, তুরস্ক, কাতার, গাজায় হামাস এবং মুসলিম ব্রাদারহুড।আর তাদের মিত্ররাও একই পক্ষগুলো-যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ মিলিটারির শিল্প প্রতিষ্ঠান, ফাতাহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দালাল মোহাম্মদ দাহলান যে গাজাকে দখল করার চেষ্টা করেছিল। এবারও প্রয়োজন হলে তাকে ব্যবহার করা হবে।

এখনকার সময়ের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে দুটি দেশের ইতিহাসে এই প্রথম দুটি দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রকাশ্যে সমন্বয়ের ঘটনা ঘটছে।

বাদশাহ আবদুল্লাহর ভাইপো প্রিন্স তুর্কি হচ্ছেন এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের পাবলিক মুখ। এটা শুরু হয় একজন ইসরাইলি শিক্ষাবিদের বই সৌদি আরবে প্রকাশের মাধ্যমে।

হারেজ পত্রিকায় শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে প্রিন্স তুর্কি একটি কাব্যিক আর্টিকেল প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি লিখেন, ‘এটা কি মজারই না হতো যদি আমি শুধু ফিলিস্তিনিদেরকেই নয় ইসরাইলিদেরকেও রিয়াদে আমন্ত্রণ করতে পারতাম। তারা দিরিয়াহ্ তে আমার পূর্বপুরুষদের বাড়িটি দেখতে পারতো যেটা ইব্রাহিম পাশার আক্রমণের শিকার হয়েছিল। নেবুচাদনেজার ও রোমানদের হাতে জেরুজালেমও তেমন হামলার শিকার হয়েছিল।’

এই জোটের মূল্য কি সেটা বুঝা খুবই কঠিন। এর মাধ্যমে সৌদি তার চিরাচরিত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের উপর ঐতিহাসিক সমর্থন সরিয়ে নিচ্ছে।জামাল খাশোগজি নামে একজন সৌদি বিশ্লেষক দেখান কিভাবে সৌদি বুদ্ধিজীবিরা ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের ধারণাকে উড়িয়ে দিচ্ছে।খবই অনুতাপের বিষয় যে সৌদি আরবে এমন বুদ্ধিজীবিদের সংখ্যা গড়পড়তার চেয়েও বেশি। এই প্রবণতা যদি চলতে থাকে তাহলে এটা সৌদি আরবের সম্মানজনক অবস্থানকে নষ্ট করে দেবে। অথচ সৌদি আরব তার প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌদ থেকেই ফিলিস্তিনি ইস্যুকে সমর্থন দিয়ে আসছিল।শান্তি সবারকাছেইপরম কাম্য বস্তু। সেটা শুধু গাজাতেই নয়। কিন্তু যে উপায়ে ইসরাইলের মিত্র সৌদি আরব ও মিশর শান্তি অর্জন করতে চাচ্ছে সেটা বুমেরাং হতে পারে।

ইসরাইলের মাধ্যমে হামাসকে পঙ্গু করে দেয়া তারপর সৌদি এবং মিশরের সহায়তায় ফিলিস্তিন পুনর্গঠন করবে সেটা আশায় গুড়েবালি হবে।প্রিন্স তুর্কির বাবা বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ কবর থেকে উঠে আসবেন যদি দেখেন তার ছেলে তার নাম কিসের কিসের সাথে যুক্ত করছে।রক্তের উপর দাড়িয়ে আছে সৌদি-ইসরাইলি জোট, ফিলিস্তিনিদের রক্ত, বেসামরিক নারী, শিশু ও পঙ্গুদের রক্ত। রবিবার শেজাইয়াতে যে ১০০ জন গাজাবাসীকে হত্যা করা হয়েছে তাদের রক্ত।ডেভিড হার্স্ট, সম্পাদক, মিডল ইস্ট আই

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone