উপজেলা নির্বাচনে ব্যয় হবে ৪৮৯ কোটি টাকা!
এইদেশ এইসময়, ঢাকা : নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় নির্বাচনের পর এবার উপজেলা নির্বাচন করার কথা ভাবছে। দশম জাতীয় নির্বাচনে স্থগিত ৮ আসনের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আগামী মার্চের শুরুতেই চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এপ্রিলের মধ্যবর্তী সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে ৪৮৬ টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের জন্য প্রায় ৪৮৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তৃতীয় উপজেলা নির্বাচন থেকে এবার প্রায় ৩ গুণ বেশি খরচ হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনের প্রশিক্ষণ ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই কর্মকর্তাদের দেয়া হবে। এছাড়া সংসদ নির্বাচনে হালনাগাদকৃত ভোটার তালিকা দিয়েই উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি মাসেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।
জানা যায়, খাতওয়ারি অর্থ বরাদ্ধের হার বিগত নির্বাচনের চেয়ে দ্বিগুণ বা অনেক ক্ষেত্রে তিনগুণ ও চারগুণ করা হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসারের সম্মানি ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ৭০০ থেকে ২ হাজার এবং পোলিং অফিসারদের ৬০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া সহকারী রিটার্নিং অফিসারের ডাক, ফ্যাক্স ও আপ্যায়ন খরচ ৩৫ হাজার, রিটার্নিং অফিসারের যাতায়াত বাবদ সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের যাতায়াত বাবদ সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা, জেলা নির্বাচন অফিসারের ডাক, ফ্যাক্স ও আপ্যায়ন বাবদ ৩০ হাজার টাকা, জেলা নির্বাচন অফিসারের যাতায়াত বাবদ ৪০ হাজার টাকা, থানা বা উপজেলা নির্বাচন অফিসারের যাতায়াত বাবদ ২০ হাজার টাকা, ফলাফল সংগ্রহের কন্ট্রোল রুম স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় ৬০ হাজার টাকা, রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের খন্ডকালীন করনিক ও পিয়ন বাবদ ১১ হাজার টাকা, বিভাগীয় কমিশনার ডাক, ফ্যাক্স, আপ্যায়ন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় ৫০ হাজার টাকা, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার ডাক, ফ্যাক্স, আপ্যায়ন ও আনুষঙ্গিক ব্যয় ৬০ হাজার টাকা, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ওভার টাইম বাবদ প্রতিদিনের জন্য ৪০০, ৩৯৫, ৩৯০ ও ৩৮৫ টাকা হারে বরাদ্ধ, নির্বাচনী তদন্ত কমিটির ব্যয় গড়ে ৬০ হাজার টাকা।
এবার প্রতি কেন্দ্রে গড়ে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের পেছনে ব্যয় হবে ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতি অস্থায়ী কেন্দ্রের ৩ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার ও প্রতি কক্ষের জন্য ১ হাজার টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়। প্রতি কেন্দ্রের মনিহারি দ্রব্যের জন্য ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করা হয়েছে।
ঢাকা হতে মালামাল পরিবহনে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার, জেলা সদর হতে মালামাল পরিবহনে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার, ভোটকন্দ্রে মালামাল প্রেরণ ও ফেরত আনয়ন বাবদ সাধারণ এলাকার ৮০০ থেকে ৩ হাজার, দুর্গম এলাকার জন্য ১২০০ থেকে ৫ হাজার, রিটার্নিং অফিসারের ডাক, ফ্যাক্স ও আপ্যায়ন খরচ ৩৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে।
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সাথে মতবিনিময় সভা ও আপ্যায়ণ খরচ প্রতি নির্বাচনী এলাকায় ৫০ হাজার টাকা, রিটার্নিং অফিসারের সহায়তা ও পর্যবেক্ষক টিমের পর্যবেক্ষকদের ডাক, ফ্যাক্স, আপ্যায়ন ও আনুষঙ্গিক খরচ প্রতিনির্বাচনী এলাকার জন্য ২০ হাজার টাকা, নিজস্ব পর্যবেক্ষক প্রতিদিনের জন্য ৫ হাজার টাকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স পরিষ্কারকরণ, কুলি খরচ ও পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি ব্যালট বাক্সের জন্য ১০ টাকা হারে বরাদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া বাকি অর্থ পুরোটাই যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত মোবাইল স্টাইকিং ফোর্সের ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রত্যেকের প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা, আপিল কর্তৃপক্ষ ডাক, তার, কন্ট্রোল রুম পরিচালনা ও আপ্যায়ন খরচ বাবদ ৩ লাখ টাকা, জেলা প্রশাসক/আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা/ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা/ প্রধান সমন্বয়কারী পর্যবেক্ষক, ভিজিলেন্স টিম, অবজারভেশন টিম মনিটরিং টিম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেলের মনিহারি দব্য ক্রয়, ডাক, যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক ব্যয় ৫০ হাজার টাকা।
এদিকে ভোটকেন্দ্র ও মালামাল প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাচনের জন্য সারাদেশে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে ইসি। সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের হিসেবে নেয়া হচ্ছে সব প্রস্তুতি। এ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮২৪ টি অমোছনীয় কালির কলম, সমপরিমাণ অফিসিয়াল সিল, ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪২৮ টি মার্কিং সিল, প্রতি ভোট কেন্দ্রে ১ টি করে ৪০ হাজার ৬০০ টি ব্রাস সিল, ৫ লাখ ২৭ হাজার ৮২৬ টি স্ট্যাম্প প্যাড, ৪৪ হাজার ৬৭২ টি গানিব্যাগ, সমপরিমাণ হেসিয়ান ব্যাগ, ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৮০ টি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের সিল ক্রয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ নির্বাচনের জন্য অতিরিক্ত ২০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফরম মূদ্রণ করা হয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন সরকার গঠনের পর পরই উপজেলা নির্বাচনের অনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করা হবে। তবে এখন থেকেই প্রাথমিক কিছু কাজ এগিয়ে রাখা হচ্ছে। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় মাথায় রেখে সকল কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।