বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » প্রযুক্তি » বেশি বেশি স্ট্যাটাস আর টুইট করলে যা হয়

বেশি বেশি স্ট্যাটাস আর টুইট করলে যা হয় 

progukti ai desh

নিউজ ডেস্ক : ঘন ঘন ফেসবুকে, টুইটারে পোস্ট করছেন? কেউ কিছু আপনার লেখায় মন্তব্য করছে কি না, কেউ লাইক দিচ্ছে কি না তা দেখতে বার বার ফেসবুক খুলছেন কিংবা মন্তব্য কম দেখে আবারও নতুন পোস্ট দিচ্ছেন। লোকে যে যাই বলুক না কেন গবেষকেরা কিন্তু আপনাকে ‘আত্মকেন্দ্রিক’ মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত করবেন।

বেশি বেশি পোস্ট দিলে ক্ষতি কী? আপনি হয়তো ভাবছেন যে, আপনার ভালো লাগা থেকে আপনি এই পোস্ট লিখছেন। কিন্তু গবেষকেরা জানিয়েছেন, আপনি সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক ও টুইটারে আপনার আরও বেশি অনুসারী বাড়াতেই বেশি বেশি টুইট বা পোস্ট করে ফেলছেন।

সম্প্রতি মার্কিন গবেষকেরা এক গবেষণায় জানতে পেরেছেন, বেশি টুইট বা পোস্ট করার সঙ্গে নার্সিসিজমের সম্পর্ক রয়েছে। অতিমাত্রায় প্রশংসিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে বেশি বেশি টুইট করা হয়ে যেতে পারে।যুক্তরাষ্ট্রের হাই পয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শন ডেভেনপোর্টের নেতৃত্বে একদল গবেষক অতিরিক্ত টুইট ও ফেসবুক পোস্টের সঙ্গে আত্মকেন্দ্রিকতার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষক শন ডেভেনপোর্ট এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ফলোয়ার বা অনুসারী বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষা নার্সিসিজমের প্রাথমিক কারণ আর এ কারণেই বেশি বেশি টুইট করা হয়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম প্যাসিফিক স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে যাঁরা নার্সিসিস্ট তাদের টুইট ও ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রবণতা দেখা গেছে।

গবেষকেরা মার্কিন নাগরিকদের নিয়ে করা এই গবেষণার সময় দেখেন যে, কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে টুইট করার প্রবণতা বেশি থাকলেও বয়স্করা বেশি করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। অর্থাত্, নতুন প্রজন্মের কাছে টুইটার যতখানি আগ্রহের পুরোনো প্রজন্মের মানুষের কাছে ফেসবুকের গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

গবেষকেরা এ গবেষণা করার সময় ৫১৫ জন কলেজ শিক্ষার্থী ও ৬৬৯জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সক্রিয় টুইটার ব্যবহারকারীরা বেশি ফলোয়ার বাড়ানোর আশায় বেশি বেশি টুইট করেন।

‘কম্পিউটারস ইন হিউম্যান বিহেভিয়র’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধ।

ফেসবুক-টুইটারে নিরাপত্তাহীনতা

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠার খোরাক জোগাচ্ছে কি না, তা নিয়ে একটা সন্দেহ-সংশয় বিশেষজ্ঞদের মাঝে বেশ কিছুদিন ধরেই ছিল। আর এ সন্দেহের যথেষ্ট ভিত্তি আছে বলেও বেশ কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে।

সাম্প্রতিক এই গবেষণার আগে কানাডার গবেষকেদের দাবি করেছিলেন, একটা মানুষ কতখানি আত্মকেন্দ্রিক, সেটা তার ফেসবুকের বন্ধুসংখ্যা এবং এর অন্যান্য ব্যবহার দেখে অনুমান করা সম্ভব। তাঁরা দাবি করেছিলেন যে, অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবেন, তাঁদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা জন্ম নেয় ও মনের জোর কমে যায়। তাই ফেসবুক ব্যবহারকে আয়নায় নিজের মুখচ্ছবি দেখার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তাঁরা।

নার্সিসাস
এর আগে ২০১২ সালে ওয়েস্টার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছিলেন, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে গ্রিক দেবতা নার্সিসাস আবার নতুনভাবে ফিরে আসছেন। গ্রিক পুরাণের বহুল আলোচিত অনেক চরিত্রের মধ্যে অন্যতম নাম নার্সিসাস। তিনি বিখ্যাত ছিলেন তাঁর সৌন্দর্যের জন্য। কিন্তু ওই সৌন্দর্য তাঁর জীবনহানিরও কারণ হয়েছিল। পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে নিজের চোখ অন্যদিকে ফেরানোর সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং এই অবস্থাতেই মারা যান তিনি। আর তার থেকে নার্সিসাস ফুলের জন্ম। এই নার্সিসাস থেকেই নার্সিসিজমের ধারণা এসেছে, যা মানুষের মধ্যে এক ধরনের আত্মবাদ, আত্মগর্ব, আত্মশ্লাঘার বৈশিষ্ট্যের দিকে ইঙ্গিত করে।

নার্সিসিজম বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সামাজিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপিত হয়েছে। কখনো সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সমস্যা হিসেবে, কখনো বা মানসিক অসুস্থতা হিসেবে একে বর্ণনা করেছেন গবেষকেরা। সে সময় ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানিয়েছিলেন যে, ফেসবুকে ব্যাপকভাবে বাড়ছে নার্সিসিস্ট লক্ষণাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। বিশেষত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ সমস্যা প্রকটতর হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে এ গবেষণা বিষয়ে বলা হয়েছিল, নার্সিসাস-প্রভাবযুক্ত মানুষ বলে যাঁদের বিবেচনা করা হয়, ফেসবুকে তাঁদের বন্ধুসংখ্যা বেশি। তাঁরা প্রায়ই বিভিন্ন বিষয়ে বন্ধুদের ট্যাগ করেন এবং তাঁরা ঘন ঘন তাঁদের স্ট্যাটাস পরিবর্তন করেন। এ গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এ ধরনের মানুষ তাঁদের সম্পর্কে কোনো সমালোচনামূলক মন্তব্যের জবাব দেন খুবই আক্রমণাত্মকভাবে। তাঁরা ঘন ঘন নিজেদের প্রোফাইলের ছবিটি পরিবর্তন করেন আর গবেষকদের ধারণা, এসব আচরণগত বিষয়ের মধ্যে এমন কিছু দিক আছে, যার ফলে এরা নিজেদের নিয়েই সর্বদা ব্যস্ত থাকেন এবং আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। নিজের ভুবন-কেন্দ্রিক এসব কর্মকাণ্ড ক্রমেই তাঁদেরকে নার্সিসিস্ট ব্যক্তিত্বের দিকে নিয়ে যায়।

মার্কিন গবেষকেরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে যাঁরা অতিরিক্ত সময় কাটান তাঁরা বাস্তবের বন্ধুদের সহমর্মিতার ও সাহচর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। টুইটার ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলো মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তোলার প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে। এতে অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে বাস্তবের বন্ধুত্বের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা কমে যায়। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে অনুসারীদের কাছে ঘন ঘন পোস্ট দিয়ে নিজেকে শুধু জাহির করার প্রবণতা দেখা যায়।

কী করবেন

গবেষকেদের পরামর্শ হচ্ছে, বর্তমানের এই তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের সুযোগে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো মানুষকে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের অপার সুযোগ করে দিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক তত্পরতার ক্ষেত্রেও বিশাল ভূমিকা রাখছে এই সাইটগুলো। তবে এগুলোর সার্থক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য মনের ওপর এর প্রভাবের মতো অন্ধকার দিকগুলো নিয়েও আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। তাঁদের দাবি, আদর্শিক জায়গা থেকে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ব্যবহার করা উচিত, এ সাইটগুলো কখনও আত্মতৃপ্তির জায়গা হিসেবে গড়ে উঠতে দেওয়া উচিত নয়।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone