ভয়াবহ দিকে মোড় নিচ্ছে ইরাক পরিস্থিতি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ ইরাক পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে মোড় নিচ্ছে। একিটর পর একিট এলাকার নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে জঙ্গিদের হাতে। তাদের প্রতিরোধের জোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তেমন কিছু করে উঠতে পারছে না সরকারি বাহিনী। এ অবস্থায় ইরাক সরকারকে প্রয়োজনে সামরিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইতিমধ্যে তারা যুদ্ধবিমানবাহী একটি রণতরিও পাঠিয়েছে আরব উপসাগরে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে বাইরের সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে ইরান। খবর এএফপি ও বিবিসির।
আল-কায়েদা-সমর্থিত সুিন্নপন্থী জঙ্গিরা ঠিক এক সপ্তাহ আগে অভিযান শুরু করেছিল। এই এক সপ্তাহে তারা পুরো একটি প্রদেশ এবং অন্য তিনটি প্রদেশের অংশবিশেষ নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তাদের মোকািবলায় নিরাপত্তা বাহিনী দৃশ্যত বড় কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সাঁজোয়া যান ফেলে পিছু হটে।
ইরাকি বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা পুনরায় শক্তি সঞ্চার করে জঙ্গিদের হটাতে জোর উদ্যমে এগিয়ে চলছেন। সেনারা বাগদাদের উত্তরের দুটি শহর থেকে জঙ্গিদের হটাতে সক্ষম হয়েছে। তাদের সঙ্গে শিগগির যোগ দেবে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী।
তবে দেশের মধ্যাঞ্চলে কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংগ্রহের একটি কেন্দ্রে রোববার মর্টার হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে তিন সেনাসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয় বলে জানায় পুলিশ।
লড়াইয়ের মাঠে যখন এ অবস্থা, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, বাগদাদের দিকে জঙ্গিদের অগ্রসরের গতি রোধ করতে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে তাঁর সরকার। তবে ইরাকে আবার মার্কিন যুদ্ধসেনা পাঠানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।
সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতে ২০০৩ সালে ইরাকে অভিযান শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী। আট বছরের মাথায় ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হয়। এর আগে ও পরে ইরাকে একটি দক্ষ ও সক্ষম নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলতে কোটি কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরও এত দ্রুত সেই বাহিনী কীভাবে এতটা ভেঙে পড়ল, তা নিয়ে বিরোধী রিপাবলিকানদের দিক থেকে জোর সমালোচনার মুখে আছে ওবামা প্রশাসন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, ইরাক সংকট সামাল দিতে জঙ্গিবিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশকে আরব উপসাগরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল।
যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। দেশটি বলেছে, বাইরের কোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ ইরাকের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মার্জিহ আফখাম বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ইরাকের আছে। সেখানে বাইরে থেকে কোনো হস্তক্ষেপে যদি পরিস্থিতি আরও জটিল হয়, তাহলে তা ইরাক বা এই অঞ্চলের জন্য ভালো হবে না।’
তবে এর এক দিন আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি কিছুটা ভিন্ন কথা বলেন। তিনি বলেন, ইরাকের সুন্নি জঙ্গিদের ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে ইরানও তাদের সহযোগিতা করবে।
এদিকে ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পরোক্ষভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়ী করেছে সিরিয়ায় জাতিসংঘ ও আরবি লগের সাবেক বিশেষ দূত লাখদার ব্রাহিমি। তাঁর মতে, প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ার সংকটকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবহেলা করায় তা ছড়িয়ে পড়েছে ইরাকেও। তিনি বার্তা সংস্থাকে বলেন, ‘এটা খুব সাধারণ নিয়ম, এ ধরনের সংঘাত (সিরিয়া) কোনো একটি দেশের সীমানায় সীমাবদ্ধ থাকে না।