বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি চীনের

উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি চীনের 

PM-China+PM

এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ  বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খা ছিয়াং।
PM-China+PMদশম সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর চীনে প্রথম সফরে গিয়ে সোমবার দুই দেশের শীর্ষ বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি পান শেখ হাসিনা।
নবম সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অসন্তোষের মধ্যেও নবগঠিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেয় চীন।
সফরের চতুর্থ দিনে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অফ পিপলসে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দুটি চুক্তি এবং একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়; স্বাক্ষর হয় দুটি বিনিময়পত্রও।
শীর্ষ বৈঠকে চীনের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন সম্পৃক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন লি খা ছিয়াং।”
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি প্রকল্পের কথা তুলেছেন, যাতে আগামীতে চীনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে বলে বলে জানান তিনি।
সচিব বলেন, বৈঠকেই চীনা প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন এই প্রকল্পগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিরূপন করতে।
এই প্রকল্পগুলো হলো- বাংলাদেশ সরকারের জন্য তথ্য-প্রযুক্তির ইনফ্রা নেটওয়ার্কের উন্নয়ন (যা ইনফো-সরকার ফেইজ থ্রি নামে পরিচিত), রাজশাহীতে ওয়াসার পানি শোধনাগার নির্মাণ, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে দ্বিতীয় রেলপথসহ সড়ক সেতু নির্মাণ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপন (যা রামু পর্যন্ত যাবে এবং রামু থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত গুনধুম পর্যন্ত আরেকটি লাইন যাবে) এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট প্রকল্প।
সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, “এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা নিয়ে দু’পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে সম্মত হয়েছে।”
শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে চুক্তি হয়েছে, সমঝোতা হয়েছে বাংলাদেশে চীনের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার। বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
শীর্ষ বৈঠকের আগে গ্রেট হল অফ পিপল-এ গার্ড অফ অনার দেয়া হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি গার্ড পরিদর্শন করেন এবং সামরিক অভিবাদন গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা গ্রেট হল অফ চায়নায় পৌছালে চীনের প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানান। এরপর দুই সরকার প্রধান তাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একে অন্যকে পরিচয় করিয়ে দেন।
পরিচয় পর্ব শেষে শেখ হাসিনা ও লি খা ছিয়াং অভিবাদন মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালে চীনের সামরিক বাহিনীর বাদক দল দু’দেশের জাতীয় সংগীত বাজায়। এসময়, উনিশবার তোপধ্বনি করা হয়।
বৈঠকের শুরুতেই লি খা ছিয়াং বলেন, শেখ হাসিনার উদ্যোগে বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার যে মজবুত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা আরো জোরদার হচ্ছে।
বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় সফরের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতা হিসাবেও ১৯৯৩ সালে তার চীনে আসার কথা তুলে ধরেন।
রাজনীতিক হিসেবে ১৯৫২ সালে এবং পাকিস্তান আমলে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথাও তুলে ধরেন তার মেয়ে হাসিনা।
চীনকে বাংলাদেশের ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বেইজিংয়ের সঙ্গে এই সম্পর্ককে সবসময় গুরুত্ব দেয়।
লি খা ছিয়াং-এর নেতৃত্বে চীনে বিশ্ব অর্থনীতিতে শীর্ষস্থানে উঠে আসার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আঞ্চলিক যোগাযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় স্থান পেয়েছে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ারমার (বিসিআইএম) করিডোরের কথা উল্লেখ করেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বিসিআইএম দ্রুত বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশের সহযোগিতাও চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভাব্য সব কিছু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আগামী সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারে বিসিআইএম-এর দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি বাড়ানোর অনুরোধ জানালে চীনের প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে তা বাড়ানোর নির্দেশ দেন।
বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহায়তার বিষয়টিও স্থান পেয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। শেখ হাসিনা সমুদ্রে গবেষণার জন্য চীনের সহায়তা চেয়েছেন।
কৃষিক্ষেত্রে হাইব্রিড ধানের প্রযুক্তি বিনিময়ের কথাও বলেছেন তিনি। এক্ষেত্রে চীনের প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের মধ্যে যৌথ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।
চীনের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। লি খা ছিয়াং বলেছেন, তিনি সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন। ছয় দিনের চীন সফরে শুক্রবার দেশটির ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং পৌঁছান শেখ হাসিনা।
কুনমিংয়ে দ্বিতীয় চীন-দক্ষিণ এশিয়া এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রদর্শনী কেন্দ্রেই চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওয়াং ইয়াংয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তিনি কুনমিং আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দেন।
এরপর রোববার বেইজিং পৌঁছে চীনের জাতীয় বীরদের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে ‘মনুমেন্ট অফ দি পিপলস হিরো’ এ যান শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি চাওইয়াং থিয়েটারও পরিদর্শন করেন। আগামী ১১ জুন শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone