বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শনিবার, মে ৪, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » বিবিধ » ঝুলে আছে কানুনগো নিয়োগ প্রক্রিয়া

ঝুলে আছে কানুনগো নিয়োগ প্রক্রিয়া 

kkk

এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ  ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন কানুনগো নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে আছে প্রায় ১৭ বছর ধরে। ১৭ বছর আগে জারি করা বিজ্ঞপ্তির সেই নিয়োগ এখনো kkkসম্পন্ন হয়নি। নিয়োগ প্রক্রিয়ার লিখিত পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে প্রায় ১০ বছর আগে। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল হয়েছে। বাকি ছিলো শুধু মৌখিক পরীক্ষা। কিন্তু, ইতিমধ্যে ১০ বছর পার হয়ে গেলেও সেই মৌখিক পরীক্ষা এখনো নেওয়া হইনি। ওই নিয়োগকে কেন্দ্র করে একের পর এক মামলা চলছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার কারণে কানুনগো পদে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রমতে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী মহল ওই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বড় অংকের ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। মহলটি নিরীহ চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন লিখিত পরীক্ষার আগে-পরে। গত ১০ বছর ধরে এই টাকা তাদের পকেটে রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে এই টাকার প্রায় পুরোটাই ফেরত দিতে হবে। আর এ কারণেই প্রভাবশালী মহলটি এ মামলাজট কোনো ক্রমেই ছাড়াতে রাজি নন। বরং নেপথ্যে থেকে মামলাজট একের পর এক বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টায় রত আছে এই মহলটিই।

জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন এই কানুনগো নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো ১৯৯৭ সালে। ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ১০৪টি পদে কানুনগো নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। কিন্তু, মুজিব নগর কর্মচারী দাবিদাররা তাদের নিয়োগের জন্য হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া সেখানেই ঝুলে যায়। পরবর্তীতে এক পর্যায়ে এই মামলা মীমাংসা হলে ২০০৪ সালের ৫ এপ্রিল আবারো নতুন করে ১১৫টি পদের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। সবমিলিয়ে ২১৯টি পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয় ওই বছরই। নিয়োগের জন্য তোড়জোড় দেখা যায়। বলা হয়, দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ব্যাপকহারে ঘুষ লেনদেন চলে। জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকা হয় এই সময়। মাত্র ২১৯টি পদের জন্য হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি কে, এটা সবাই জানেন। আর সব তদবির গিয়ে পড়ে তার ওপরই। কাউকে তিনি নাকচ করেননি। যারা এসেছে প্রত্যেককেই চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রত্যেকের কাছ থেকেই অর্থ নিয়েছেন। এভাবে মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী মহলটি হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এদের প্রায় সবাইকেই সন্তুষ্ট করা হয়েছে লিখিত পরীক্ষা পাস করানোর মাধ্যমে। মাত্র ২১৯টি পদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার চাকরি প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো হয়েছে। যা অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিকই শুধু নয়, নিয়ম বহির্ভুতও বটে।

নিয়োগ সংক্রান্ত সরকারের নীতিমালা হলো, প্রতিটি পদের জন্য তিনজনকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অর্থাৎ মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকতে হবে। অথচ এক্ষেত্রে প্রতিটি পদের বিপরীতে ৫৫ জনকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো হয়েছে। জানা গেছে, ব্যাপকহারে ঘুষ লেনদেনের জন্যই এটি হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়েছে নির্দিষ্ট চাকরি প্রার্থীদের কাছে। লিখিত পরীক্ষার আগে এবং পরে ব্যাপক হারে লেনদেন হয়েছে। বেকার, সাধারণ নিরীহ চাকরিপ্রার্থী- কেউ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে, কেউ আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে, কেউ কেউ শশুর বাড়ি থেকে, আবার কেউবা জমি-জমা, ভিটে বাড়ি বিক্রি করে অর্থ এনে তুলে দিয়েছেন ওই সিন্ডিকেটের হাতে, চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরতে পারার জন্য।

ঘুষের হার ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ নির্ধারণ করা হলেও কারো কারো কাছ থেকে সর্বনিম্ন ৩ লাখ টাকা পর্যন্তও নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে যা দিয়েছে সবার কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হয়েছে। কারণ, যারা নিয়েছেন এরা জানতেন- এই টাকার বিনিময়ে চাকরি তো দিতে হবে না, এমনকি নিকট ভবিষ্যতে এই টাকাও ফেরত দিতে হবে না, যেহেতু নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে যাবে। টাকা নেওয়া শেষ হওয়ার পর এই মহলটিই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অন্যকে দিয়ে মামলা দাঁড় করিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সেই পর্যায়েই ঝুলিয়ে রাখে। এক মামলা শেষ হলে নতুন মামলা, সেই থেকে চলছে।

চাকরি প্রার্থীদেরকে মাঝে মধ্যেই এমন আশ্বাসবাণী শোনানো হয়, মামলা শেষ হয়ে গেলো, আর অল্প বাকি, কয়েকদিনের মধ্যেই নিয়োগ শুরু করা হবে। যারা ধার-কর্জ করে, ঘরবাড়ি বন্ধক রেখে টাকা এনে দিয়েছেন এরা আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন চাকরি নামের সোনার হরিণ ধরতে পারবেন বলে। কিন্তু, সেই শুভক্ষণটি আর আসে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন এই কানুনগো পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে রিট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০টিরও বেশি। এছাড়া আদালত অবমাননার মামলা আছে চারটি। তবে এসব মামলায় চাকরিপ্রার্থী মোট কত জন তা এখন পর্যন্ত জানে না ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিন আহমেদের কাছে শীর্ষ কাগজের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো মামলায় বাদি একজন, আবার কোনো মামলায় বাদি একাধিক। তাই মোট কতজন মুজিব নগর কর্মচারী ভূমি মন্ত্রণালয়ে চাকরি প্রার্থী এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, এটা কী খুব কঠিন কাজ? আদালত থেকে মন্ত্রণালয়ে যেসব কাগজ পাঠিয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখলেই তো খুব কম সময়ে জানা যাবে। তাছাড়া আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই যাচাই-বাছাই করার সুযোগ আছে মুজিবনগর কর্মচারীদের ক্ষেত্রে। যাচাই-বাছাইয়ে যারা প্রকৃত বলে প্রমাণিত হবে তাদের নিয়োগ দেওয়া হলেই তো সব সমস্যা মিটে যায়।

নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, হ্যাঁ, পর্যাপ্ত সংখ্যক পদ খালি আছে। মুজিবনগর কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়ার পরও নতুন নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়েছি অল্প কিছুদিন হলো। এখন আমি সব খতিয়ে দেখছি।

এতোদিন এ মামলাগুলো যাচাই-বাছাই কেন করা হয়নি, এ প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই। যেহেতু তিনি এ কাজের দায়িত্বে ছিলেন না। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই মামলাগুলো মীমাংসা করার উদ্যোগ নিলে ভূমি মন্ত্রণালয় অনেক আগেই করতে পারতো। দীর্ঘকাল ধরে কানুনগো পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ থাকায় অনেক পদ ইতোমধ্যে খালি পড়ে আছে। বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১০০ বা তারও বেশি। ফলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে যোগ্য এবং প্রকৃত মুজিবনগর কর্মচারীদের কানুনগো পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও, এমনকি এর সঙ্গে নতুন নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন ২১৯টি পদে নিয়োগ দেওয়ার পরও অনেক পদ খালি থেকে যাবে।

কিন্তু, মূল সমস্যা এক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহল। মহলটি চায় না, সমস্যা মিটে যাক। কারণ, তাহলে প্রায় ১২ হাজার মানুষের ঘুষের টাকা ফেরত দিতে হবে।

সূত্রমতে, এই মহলটি ঘুষের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পকেটে ভরে রেখেছে গত ১০ বছর ধরে। এই টাকা অন্যত্র বিনিয়োগ করে আরো প্রায় হাজার কোটি টাকা কামিয়েছে বিগত সময়ে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone