বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|সোমবার, মে ৬, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » বিশেষ সংবাদ » নারায়ণগঞ্জের মানুষখেকো নূর হোসেন

নারায়ণগঞ্জের মানুষখেকো নূর হোসেন 

nur

এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ  সিদ্ধিরগঞ্জের নূর হোসেন এখন নারায়ণগঞ্জের এরশাদ শিকদার হিসেবে খ্যাত। তার পরিচয় মানুষখেকো নূর হোসেন। শুধু সিদ্ধিরগঞ্জের nur মানুষের সাথেই হিংস্র আচরণ করেননি। তার পৈশাচিকতার শিকার হয়েছে নিজ সন্তানও। তিনি তার ছেলে বিপ্লব হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে এলাকাজুড়ে। ছেলের মৃত্যুকে নূর হোসেন আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিলে সমাজের মানুষ কেউ আত্মহত্যাকারীর নামাজে জানাজা পড়তে চাননি। মূল কবরস্থানে দাফনেও ছিল তাদের অনীহা এমনটাই লিখেছে নয়া দিগন্ত পত্রিকাটি।

ফলে মানুষের এ ক্ষোভ ধামাচাপা দিতে নূর হোসেন গ্রহণ করেছিলেন ফিল্মি স্টাইল। পুলিশের তিনটি গাড়ির প্রহরায় বিপ্লবকে ভিভিআইপি মর্যাদা দিয়ে লাশ দাফন করা হয় কবরস্থানে। বিপ্লবকে হাসপাতালে নেয়া থেকে শুরু করে লাশের নামাজে জানাজা ও দাফন সবকিছুই সম্পন্ন করা হয়েছে কড়া পুলিশ পাহারায়।

সে সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজকান্তি বড়াল ও পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন আরো অনেক কর্মকর্তা ১১ নভেম্বর রাত থেকে ১২ নভেম্বর লাশের দাফন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত নূর হোসেনের সাথে সাথেই ছিলেন।

পত্রিকাটি আরও লিখে, সাবেক ডিসি-এসপির ক্ষমতা ব্যবহার করে নূর হোসেন কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেননি। বিপ্লব আত্মহত্যা করেছে বলা হলেও করা হয়নি লাশের ময়নাতদন্ত। আর কুলখানির ভোজে উপস্থিত ছিলেন ওই সময়কার ডিসি, এসপিসহ নারায়ণগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিরা।

গত ১১ নভেম্বর রাতে নূর হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী লিপির সংসারের বড় ছেলে বিপ্লব ঘরের ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিপ্লব গলায় ফাঁস দেয়ার পর তার পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে কাঁচপুরের সাজেদা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিপ্লবকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ১২ নভেম্বর বিপ্লবের লাশ শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ডে নামাজে জানাজা শেষে সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

কবরস্থানের মোতাওয়াল্লি আব্দুল আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যখন ঘটনাটা ঘটে তখন নূর হোসেন ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী। আর তখন দাফন করতে ডিসি-এসপিসহ পুলিশের অনেক কর্মকর্তাও সাথে এসেছিলেন। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়াসহ অনেকে এসেছিলেন সে দিন। সে দিনতো এমন প্রশ্ন কেউ করেনি? ঘটনা কী ঘটেছিল সেটা সিদ্ধিরগঞ্জের অনেকই জানেন। আমরা এ ব্যাপারে আর বেশি কিছু বলতে চাই না।

এলাকাজুড়ে আলোচনা রয়েছে বিপ্লবের লাশ কাউকে ভালো করে দেখতে দেয়া হয়নি। কারণ তাকে যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এমন আঘাতের দাগ ছিল তার শরীরে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিপ্লবের লাশ নামাজে জানাজার জন্য গোসল করানো হয়। এ দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের টেকপাড়া এলাকায় যে মসজিদের লোক দিয়ে বিপ্লবের লাশের গোসল করানো হয়েছে সেখানে গিয়ে কথা বলার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।

গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে কী কী লক্ষণ থাকতে পারে সে সম্পর্কে নয়া দিগন্ত পত্রিকাতে লেখা হয়, যদি কেউ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে তাহলে তার গলায় দাগ থাকবে। শ্বাসনালী ও ফুসফুসে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার লক্ষণ থাকবে। যা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মৃত ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

ঘটনার দিন ১১ নভেম্বর রাতে বিপ্লবকে স্থানীয় সাজেদা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে লাশ আনা হয় নূর হোসেনের বাড়িতে। সেখানে পরিবারের লোকজন বিলাপ করে কাঁদতে থাকে। তবে পরিবারের কারো সাথে সাংবাদিকদের কথা বলতে দেয়া হয়নি। এমনকি লাশও বাইরের লোকজনদের দেখতে দেয়া হয়নি।

পত্রিকাতে আরও লেখা হয়, ঘটনার দিন রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে বিপ্লবকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তখন আমি হাসপাতালে ছিলাম না। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাকে নিয়ে আসা হয়। তখন জরুরি বিভাগের ডাক্তার সাকিব ও আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাক্তার রুহি কমল বিপ্লবকে দেখেন। বিপ্লবকে মৃত অবস্থায়ই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। আমাদের ডাক্তারদের ধারণা হাসপাতালে আনার আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগেই বিপ্লব মারা গিয়েছিল। তারপরও যেহেতু আমরা বেসরকারি হাসপাতাল তাই আমাদের হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ বা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

বিপ্লবকে যখন হাসপাতালে আনা হয়েছিল তখন তাদের সাথে পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অনেক পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, বিপ্লব ভারতের একটি কলেজে পড়াশুনা করত। নূর হোসেনের চতুর্থ স্ত্রী রুমার বোনের মেয়ের সাথে বিপ্লবের প্রেম ছিল। পরে দুইজন গোপনে বিয়ে করে। এ বিষয়টি জেনে নূর হোসেন বিপ্লবের ওপর ুব্ধ হয়। এ সময় কৌশলে নূর হোসেন ছেলে ও বউকে বিয়ে মেনে নেয়ার কথা বলে শিমরাইলের বাসায় আসতে বলেন। বাবার কথানুযায়ী বিপ্লব স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাসায় যায়। পরে নূর হোসেন বিপ্লবকে নির্দেশ দেন যে, এখনই তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পাঠিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় গায়েব হয়ে যাবে। বাবা নূর হোসেনের নির্মমতার কাছে ছেলে হার মেনে যায়। স্ত্রীকে তালাক দেয়।

বিপ্লব নূর হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী লিপির সন্তান। লিপি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে অবস্থান করছেন। ১৯৮৯ সালে নূর হোসেন লিপিকে বিয়ে করেন। তিন বছর পর ১৯৯২ সালে লিপিকে তালাক দেন নূর হোসেন। লিপিকে তালাক দেয়ার সময় বিপ্লবকে নিজের কাছে রেখে দেন নূর হোসেন। মা লিপির সাথে বিপ্লবের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখেন নূর হোসেন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone