বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|সোমবার, মে ৬, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » বিশেষ সংবাদ » বিয়ের রাত থেকেই পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয় গৃহবধূকে

বিয়ের রাত থেকেই পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয় গৃহবধূকে 

dhorson

এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ  বিয়ের রাত থেকেই পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয় তাঁকে। রাজি না হলে নেমে আসত নির্যাতনের খৰ। কৌশলে তিনবার পালিয়েও dhorsonগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্বামী ও তার অবৈধ ব্যবসার দালালরা প্রতিবারই তাঁকে রাস্তা থেকে ধরে এনেছে। রাস্তায় চিৎকার করলে লোকজনকে জানানো হয়েছে, ‘পাগল’। তৃতীয়বার ধরে আনার পর থেকে তাঁকে ঘরে ২৪ ঘণ্টা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। শিকল পরা অবস্থায়ই পরপুরুষের কাছে দেহদানে বাধ্য করত স্বামী। মলমূত্র ত্যাগ করতে চাইলে টেনেহিঁচড়ে শৌচাগারে নিয়ে যেত স্বামী। গোসল করাতে ঘরের বাইরে নিয়ে গেলে শিকল পরা অবস্থায়ই ঘোমটার আড়ালে মুখে কাপড় গুঁজে রাখা হতো। মুক্তির জন্য স্বামীর পায়ে ধরে অনুনয়-বিনয়, কান্নাকাটি- সবই হতো নিষ্ফল। এভাবে প্রায় আট মাস চলার পর অবশেষে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি মিলল ওই নারীর (২০)।
এ ঘটনা গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামের। আট মাস ধরে এমন পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও গ্রামবাসী তা আঁচ করতে পারেনি। অবশেষে দুই দিন আগে ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ গত রবিবার সকালে নির্যাতিত গৃহবধূকে বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করে। পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামী আলী হোসেনকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে। আলী হোসেন একই গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে। সে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে গ্রামবাসী জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের এক কৃষকের মেয়ে ওই গৃহবধূ। দুই মেয়ে রেখে তাঁর মা মারা যান। তখন তাঁর বয়স এক বছর।

নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, বছরখানেক আগে তাঁর খালাত বোনের বান্ধবী শাহনাজ বেগমের মাধ্যমে আলী হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। পরিচয়ের সূত্র ধরে মাঝেমধ্যে তাঁদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করত আলী হোসেন। একপর্যায়ে আলী হোসেনের অপকর্মের সহায়তাকারী শাহনাজ বেগম তাঁকে আলীর সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তিনি বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ক্ষিপ্ত হয় আলী হোসেন।
২০১৩ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে দেহ ব্যবসার দালাল শাহনাজ তাঁকে পাশের মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী গ্রামে আলী হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর আলী হোসেন তাঁকে আটকে ফেলে। ওই রাতেই বাড়ির পাশের মসজিদ থেকে ইমাম ডেকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর পরই আলী হোসেন তাঁর ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায়।
ওই গৃহবধূ জানান, বিয়ের রাতেই নির্যাতনের পর তাঁকে ঘরে আটকে রেখে আলী হোসেন চলে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর এক যুবককে নিয়ে ঘরে ফেরে বর্বর আলী হোসেন। যুবককে দেখিয়ে নববধূকে তার সঙ্গে রাতযাপনের নির্দেশ দেয়। রাজি না হলে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে হোসেনের সহযোগিতায় যুবকটি তাঁকে ধর্ষণ করে। পরদিন সকালে আলী হোসেনের প্রথম স্ত্রী মরিয়ম বেগমের সহযোগিতায় পালিয়ে যান তিনি। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তিনি ধর্ষণের ঘটনা চেপে গিয়ে নিজের পরিবারের কাছে বিয়ের কথা প্রকাশ করেন। তবে তিনি আর স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে চান না বলেও সাফ জানিয়ে দেন। ১৫ দিন পর অজ্ঞাত পরিচয় দুই ব্যক্তির সহযোগিতায় আলী হোসেন তাঁকে নয়নপুর বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায়। তুলে নিয়ে গিয়ে আলী হোসেন আবারও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে তাঁকে। তিন দিন পর সতিন মরিয়মের সহযোগিতায় তিনি আবারও পালিয়ে যান। এর পরও তিনি কারো কাছে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ করেননি।
নির্যাতিত গৃহবধূ আরো জানান, পালিয়ে গিয়ে শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন। গত মার্চের শেষ সপ্তাহে তাঁর অবস্থান জেনে ফেলে আলী হোসেন ও তার সহযোগীরা। তারা তাঁকে আবারও তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করায় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আলী হোসেন তাঁকে ‘মানসিক রোগী’ ও স্ত্রী বলে দাবি করে। পরে আলী হোসেন তাঁর হাত-পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে ঘরে আটকে রাখে। গৃহবধূ জানান, একটি ঘরের ভেতর শিকল দিয়ে বেঁধে তাঁকে প্রতিদিন পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হতো। তিনি বাধা দিতে চাইলে মারধর করত আলী হোসেন।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে গৃহবধূ জানান, মলমূত্র ত্যাগ করতে চাইলে টেনে শৌচাগারে নিয়ে যেত আলী হোসেন। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিৎকার করার পর কারো সাড়া না পাওয়ায় তিনি ঘরের ভেতর মলমূত্র ত্যাগ করেছেন। প্রতিদিন শিকল পরা অবস্থায় সকালে-রাতে আলী হোসেন তাঁকে গোসল করাত। ঘর থেকে বাইরে বের করলে তাঁর মুখের ভেতর কাপড় গুঁজে বেঁধে রাখত সে।
অবর্ণনীয় নির্যাতন সইতে না পেরে গৃহবধূ আলী হোসেনের পা জড়িয়ে কেঁদেছেন। বলেছেন, ‘আমারে মুক্তি দেন, আমি গার্মেন্সে কাম কইরা আমনেরে টেহা আইন্যা দেয়াম।’ কিন্তু মন গলেনি আলী হোসেনের। বরং তাঁর কান্নায় উল্লাস করত পিশাচ হোসেন।
নির্যাতিত গৃহবধূ জানান, গত দুই মাসে অন্তত ৫০ জনকে দিয়ে তাঁর ওপর নির্যাতন করিয়েছে। পালানোর সুযোগ না থাকায় কয়েক দফা তিনি আত্মহননের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

গত শনিবার সকালে তাঁকে বাইরে নিয়ে গোসল করাতে গেলে এক প্রতিবেশী এ অবস্থা দেখে ফেলে। ঘটনা জেনে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম আলীর বাড়িতে যান। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় তাঁর সন্দেহ হয়। দরজা খুলতে বলায় আলী হোসেন তাঁকে অপদস্থ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। নূরুল ইসলামের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ রবিবার সকালে ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানকালে পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় গৃহবধূকে উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশ আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
পিশাচ আলী হোসেনের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে নির্যাতিত গৃহবধূ বলেন, ‘আমার জীবনের আর কিচ্ছু নাই। আমি আর কোনো স্বপ্নও দেহি না। আমি অহন খালি খোদার কাছে দোয়া করতাছি, ওই কুত্তাডার (আলী হোসেন) যেন ফাঁসি হয়। আমি ওর ফাঁসি দেইখ্যা মরবার চাই।’
শ্রীপুর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা বিলকিস নাহার বলেন, ‘ঘটনাটি জেনে আমি থানায় গিয়ে নির্যাতিত গৃহবধূর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর বর্ণনা শুনে যে কারো চোখে পানি আসবে। এমন বর্বর ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। গৃহবধূর শরীরজুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
শ্রীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (প্রশাসন) মহসিন-উল কাদির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আলী হোসেনকে থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এমন ঘটনা সে আরো ঘটিয়েছে কি না, জানার চেষ্টা চলছে। এদিকে রবিবার রাতে ওই গৃহবধু শ্রীপুর মডেল থানায় আলী হোসেনকে আসামি মামলা করেছেন। পুলিশ সোমবার সকালে অভিযুক্ত আলী হোসেনকে আদালতে পাঠায়। শ্রীপুর থানার ওসি জানান, আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

 

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone