বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বুধবার, মে ৮, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » মিডিয়া স্বাধীনতার চর্চা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায়

মিডিয়া স্বাধীনতার চর্চা করতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায় 

antor

এই দেশ এই সময়,ঢাকাঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের অদক্ষতার প্রশ্ন তুলে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক কালের কণ্ঠের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করেছে প্রসিকিউশন। এ অভিযোগের আজ আংশিক শুনানি হয়েছে।
antor
প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী আদালত অবমাননার অভিযোগে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ আবেদনের আংশিক শুনানি হয়।
পরে এ বিষয়ে অধিকতর শুনানি এবং আদেশের জন্য আগামী ২৮ মে দিন ধার্য করে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
প্রসিকিউটরদের অদক্ষতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আদালত অবমাননা হয়েছে দাবি করেন প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী।
তিনি শুনানিতে বলেন, মিডিয়া-গণমাধ্যম স্বাধীনতার চর্চা করতে গিয়ে এমন কিছু কথা বলেন, যার কিছু কিছু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায়। প্রসিকিউশনের দক্ষতা নিয়ে কালের কণ্ঠ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, লাগামহীনভাবে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পদক্ষেপ না নিলে আবারও এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ হবে।’
এরপর তিনি গত ১১ মে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ‘অদক্ষ প্রকিউশনের কর্মকাণ্ড, দ্রুত বিচার করতে বাধা’ শিরোনামের পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান। প্রতিবেদনের মধ্যে একটি অংশে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রীর প্রসঙ্গ আসলে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দ্যাট ইজ কামরুল ইসলাম।’
তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, ‘দ্যাট ইজ কোথায় পেলেন? দ্যাট ইজ বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?’
জবাবে প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী বলেন, মাই লর্ড, যে সময়ের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে তখন আইন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কামরুল ইসলামই ছিলেন।
এরপর মোহাম্মাদ আলী আবার প্রতিবেদনটি পড়া শুরু করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সংবিধান এবং ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ কীভাবে হতে হয়? এর মাপকাঠি কী? আাপনার মত কী?
মোহাম্মদ আলী জবাবে বলেন, যাদের সংবিধান অথবা ফৌজদারি আইন বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান রয়েছে, এর উপর যারা গবেষণা করেন, ভালো জ্ঞান রাখেন, আমি তাদের বিশেষজ্ঞ বলতে পারি। আমার মতো অদক্ষ এবং অন্যরা তাদের কাছে শিখতে পারি।
এ সময় তিনি তার আইন পেশার শুরুর দিকের কথা উল্লেখ করেন বলেন, ‘আমি কাঁঠাল চুরির মামলা দিয়ে আইন পেশা শুরু করি। সঙ্গে আরেকটি ধর্ষণ মামলাও ছিল।’
এরপর তিনি বলেন, ‘গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নিজামীর মামলা প্রসঙ্গে আমি যে সাবমিশন করেছিলাম তা পত্রিকায় সম্পূর্ণ আসেনি।’
ট্রাইব্যুনাল মোহাম্মদ আলীকে বলেন, এ প্রতিবেদনের কোথায় আদালত অবমাননা হলো, সেটা বলেন।
জবাবে মোহাম্মদ আলী বলেন, এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জুডিশিয়ারিতে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল তখন বলেন, এতে তো প্রতিবেদক নিজের কথা বলেননি। আপনার বন্ধুদের বলা কথাই তো তুলে ধরেছেন।
তখন মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে, আমার বন্ধুরা এভাবে কথা বলেননি, বলতে পারেন না।’
তখন ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউটরকে প্রশ্ন করেন, এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরের দিন ওই পত্রিকাতে প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে কোনো সংশোধনী দিয়েছেন কি না। তখন মোহাম্মদ আলী বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া আমার জন্য বেকায়দার।
তখন ট্রাইব্যুনাল মোহাম্মদ আলীকে বলেন, আপনি মনে করছেন আপনার বিষয়টি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। তাহলে কেন আপনি আপনার নিজের বিষয় নিয়ে নিজেই সাবমিশন করছেন। ডাক্তার অসুস্থ হলে তো অন্য ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত, বা করতে হয়, তাই না?

প্রসিকিউর মোহাম্মদ আলী বলেন, আসলে এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করার কথা ছিল চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীর। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় আসেননি। তিনি আমাকে অনুরোধ করায় আমি এসেছি।

এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ প্রতিবেদনের মধ্যে তো পুরো প্রসিকিউশনকেই সংশ্লিষ্ট করে বলা হয়েছে। তাহলে আপনারা সবাই মিলেই সংশোধনী দিতে পারতেন।

তখন মোহাম্মদ আলী বলেন, রিজয়েন্ডার দিতে চেয়েছি। কেউ কেউ মেনে নিতে পারেননি। সব প্রতিষ্ঠানেই ব্যতিক্রম আছে না। আপনাদের তো ব্যর্থতাও আছে, আবার সফলতাও আছে। অল্প সময়ের মধ্যে নয়টি মামলার কার্যক্রম শেষ করতে পেরেছেন, এটা কি আপনাদের সফলতা না? এটা আপনারা মিডিয়ায় তুলে ধরতে পারতেন।

তিনি বলেন, আমি সে কথা বলতে চাই না। কারো করো ব্যক্তিগত এজেন্ডা থাকতে পারে। এটা জায়গামতো বলা হবে
ট্রাইব্যুনাল বলেন, শুধু একটি পত্রিকায় নয়, আরো অনেক পত্রিকাতেই এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। আপনারা কেন শুধু এই একটি মাত্র পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।
মোহাম্মদ আলী বলেন, এ পত্রিকাটি সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ করেছে। আর এটার মধ্যে কনটেম্পট হওয়ার মতো কথা আছে বলেই এর বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ করেছি।
এরপর মোহাম্মদ আলী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের দেয়া সাক্ষাৎকারের সমালোচনা করে বলেন, শাহরিয়ার কবির শোনা কথার ভিত্তিতে মন্তব্য করেছেন।
এ সময় প্রসিকিউটর আলতাফ উদ্দিনও মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে সুর মেলান।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ প্রতিবেদন দিয়ে বিচারকাজ কীভাবে বাধাগ্রস্ত হলো? আলী বলেন, এ প্রতিবেদনের মধ্যদিয়ে প্রতিবেদক ট্রাইব্যুনালকে হেয় করেছেন, সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করেছেন। প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালের একটি অংশ। প্রসিকিউশনকে হেয় করা মানে ট্রাইব্যুনালকে হেয় করা।
এ সময় মোহাম্মদ আলী আবারো বলেন, জুডিশিয়ারির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সাংবাদিকদের কোনো এখতিয়ার নেই। দায়িত্বহীনভাবে রির্পোট করে করে বস্তুনিষ্ট সংবাদিকতা হয় না।
দীর্ঘ সোয়া এক ঘণ্টা শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করে
গত ১৫ মে বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশন কালের কণ্ঠের বিরুদ্ধে এ আবেদন করেন। অভিযোগকারী আইনজীবী বলেন, আইন অনুয়ায়ী প্রতিবেদকের চার বছরের জেল এবং জরিমানার করার বিধান আছে।
গত ১১ মে ‘অদক্ষ প্রসিকিউশনের কর্মকাণ্ড দ্রুত বিচার করতে বাধা’ শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন রাষ্ট্রপক্ষের ৭ নম্বর সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম।
জবানবন্দির কোথাও তিনি এটিএম আজহারের নাম উল্লেখ করেননি। ফলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ওই সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করা হয়। বৈরী ঘোষণা করার জন্য ট্রাইব্যুনালে একটি লিখিত আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা না চেয়ে তার জবানবন্দি বৈরী ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়।

কার্যবিধি অনুসারে আবেদনের বিষয়বস্তু ঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি। আবেদনটির ওপর শুনানি করতে একজন প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালের সামনে দাঁড়িয়ে আবেদনটি পড়া শুরু করেন। এমন অবস্থায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ট্রাইব্যুনাল ওই আবেদনটি সংশোধন করতে প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দিলে দাঁড়ানো অবস্থায় জমা দেওয়া আবেদনের কপিগুলো হাতে লিখে সংশোধন করেন প্রসিকিউটর।
ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আইনজীবী-সাংবাদিক ও পরিদর্শকদের মধ্যে তখনই বিষয়টি নিয়ে কানাকানি হয়। প্রসিকিউশনের দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। দেখা যায়, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করছ

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone