হতাশার মধ্যে নতুন সরকার
এই দেশ এই সময়, ঢাকা : সদ্য সমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হতাশা ও উদ্বেগের মধ্যেই আগামী রোববার গঠিত হতে যাচ্ছে নতুন মন্ত্রিসভা। এদিকে, একতরফা নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরা গতকাল (বৃহস্পতিবার) শপথ গ্রহণ করেন।কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, কেবল প্রতিবেশী দেশটির (ভারত) ব্যাপক সমর্থনে বৈশ্বিক চাপ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও এতে দীর্ঘ মেয়াদে সরকারের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ অনেক রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সংস্থা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। শুধু তাই নয়, প্রায় এক বছর ধরে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে পর্যবেক্ষক পাঠানো থেকে বিরত থাকে বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। নির্বাচনে নগণ্য ভোটার উপস্থিতি এবং এর আগে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় একে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য যত দ্রুত সম্ভব নতুন একটি নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন একে মেরুকরণ ও কম ভোটারের অংশগ্রহণমূলক হিসেবে উল্লেখ করে সংকট সমাধানে সব দলের অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য অর্থবহ সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব রাজনৈতিক দলগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে অর্থবহ সংলাপ শুরুর তাগিদ দিয়েছেন এবং অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা এর প্রতি সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থার পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র মাইকেল ম্যানের বরাত দিয়ে কুয়েতের একটি সংবাদপত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করেছে। সংস্থার ঢাকাস্থ ডেলিগেশন এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে নিবিড় নজরদারি করা হচ্ছে। মাইকেল ম্যান আরো বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং নির্বাচনকালীন যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেছে এবং এতে ভোট পড়েছে কম। মাইকেল ম্যান বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক উপায় বের করতে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
এদিকে, কমনওয়েলথও এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মহাসচিব কমলেশ শর্মা এক বিবৃতিতে বলেন, ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের পরিস্থিতি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে কমনওয়েলথ। বিবৃতিতে বলা হয়, কমনওয়েলথ সনদ অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রত্যেক ব্যক্তির অংশগ্রহণের অধিকারসহ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি সমুন্নত রাখার বিষয়টিতে সরকার, সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের দায়িত্ব রয়েছে। সে জন্য দ্রুত অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সামনে এগোনোর পথ খুঁজতে সংলাপের ধারায় অগ্রসর হওয়া বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে জনগণের মতামত পুরোপুরি প্রতিফলিত হতে পারে।
বাংলাদেশের নির্বাচনে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি উল্লেখ করে দ্রুত নতুন নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র হতাশ। এই নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন এবং বাকিগুলোর অধিকাংশ আসনেই নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। ফলে সদ্য সমাপ্ত এই নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশি জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিফলন নয়। সংলাপের তাগিদ দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা বাংলাদেশ সরকার ও বিরোধী দলকে অবিলম্বে সংলাপে বসার জন্য উৎসাহিত করছি, যার মাধ্যমে তারা যত শিগগির সম্ভব একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে বের করবে, যে নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য এবং যা বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।
এদিকে, নির্বাচন নিয়ে হতাশা অব্যাহত রেখেছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। পাশাপাশি তারা নির্বাচনোত্তর সহিংসতা এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানিতেও উদ্বেগ জানিয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য আবারো সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা অবিলম্বে একটি স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় বিবৃতিতে জানিয়েছে।