বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » রোস্তম হত্যায় শিবির নেতাকে আসামি করে মামলা

রোস্তম হত্যায় শিবির নেতাকে আসামি করে মামলা 

Rajshahi-University

জেলা প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রুস্তম আলী আকন্দ নামের এক ছাত্রলীগ নেতা হত্যার ৪৪ ঘণ্টা পার হলেও জড়িতদের কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। স্বভাবতই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে শিবিরকে দায়ী করছে ছাত্রলীগ। তবে নিহতের লাশ উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে গেছেন তারা, ছাত্রলীগের সেই পাঁচ নেতাকর্মীর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

তারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ গালিব, উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক শাহজাহান আলী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল সভাপতি প্রার্থী সেলিম এবং ছাত্রলীগ কর্মী ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী কবির হোসেনে। এদের নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণে ধারণা করা হচ্ছে তাদের যে কারো পিস্তলের গুলিতেই খুন হয় রুস্তম। কারণ হিসেবে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের শীর্ষ থেকে পাতি নেতা পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের আধিক্যকেই দেখা হচ্ছে।

লাপাত্তা নেতাদের মধ্যে চারজনের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীও তাদের সাথে এখন যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।  রুস্তম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শনিবার ক্যাম্পাসে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হলেও তাদের একজনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিবিরকে দায়ী করে বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতিকে গ্রেফতারের আল্টিমেটামও দিয়েছে তারা।

তবে ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলে হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাতাব্বর শীর্ষ নিউজকে বলেন, শুক্রবার দুপুর ১টা ২২ মিনিটের দিকে আমি ২১৭ নম্বর কক্ষ থেকে জুমার নামাযে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। এমন সময় একটি গুলির শব্দ শুনতে পাই। এর কয়েক মিনিট পরেই সেলিম আমার কক্ষে দৌড়ে আসে। রুস্তম গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি প্রথম সে আমাকে বলে। এ খবর শোনার পর আমি প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানাকে ফোন করি। কিন্তু তিনি তখন ফোন ধরেননি। আমি প্যান্ট পরে বাহিরে এসে দেখি সেলিম, শাহজাহান ও কবির হোসেন মিলে লাশকে বাহিরে বের করেছেন। আমি অটোরিক্সা ভাড়া করে লাশকে মেডিকেলে পাঠিয়ে দিয়ে রানা ভাইয়ের হলে যাই।

ওই হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, লাশ বাহির করার সময় ওই কক্ষ থেকে বের হচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান এবং গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ গালিব। এদের মধ্যে মেহেদী থাকেন সোহরাওয়ার্দী হলের ২২০ নম্বর ও গালিব ২৩৫ নম্বর কক্ষে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, সেলিম পড়াশুনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। তিনি বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ২২২ ও ২২৬ নম্বর কক্ষে থাকলেও আগে তিনি থাকতেন শহীদ জিয়াউর রহমান হলে। দুই মাস আগে তাকে ওই হলে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান। হলে আসার পর থেকেই তিনি কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ করেছিলেন। অপরদিকে লাশ উদ্ধারকারী শাহজাহান আলী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক এবং কবির হোসেনেও ওই হলে ছাত্রলীগের সাথে কাজ করেন। তারা দুইজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে শাহজাহান ওই হলের ২১৮ নম্বরে এবং কবির থাকতেন রুস্তমের পাশের ২২৯ নম্বর কক্ষে।

ক্যাম্পাসের একটি সূত্র জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল গালিবকে অস্ত্রসহ দেখা গিয়েছিল। তিনি সেই অস্ত্রটি সব সময় কাছে রাখতেন। রুস্তম গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় তিনি ২৩০ নম্বর কক্ষে ছিলেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে তার মোবাইল ফোন ০১৭২২…..৬৪ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে সেলিমের ব্যবহৃত ০১৭১৭…..১০১ , মেহেদির ব্যবহৃত ০১৭৪৫…..৪৩১ এবং শাহজাহানের ব্যবহৃত ০১৭২১…..৯৭১ নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

মোবাইল বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা শীর্ষ নিউজকে বলেন, তারা সবাই গতকাল লাশের সাথে রুস্তমের গ্রামের বাড়িতে গেছে। ফোন বন্ধ কেনো এটা এখন বলা যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের প্রথম সারির কয়েকজন নেতা শীর্ষ নিউজকে বলেন, অনেক নেতাকর্মীদের হাতে অস্ত্র থাকার কারণেই আজ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পিস্তুল ব্যবহার শিখতে বা দেখাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত একজনের পিস্তল থেকে গুলি বের হয়েওতো রুস্তমের মৃত্যু হতে পারে।

হলে রুস্তমের ২৩০ নম্বর কক্ষের পাশের একটি কক্ষে থাকেন এক শিক্ষার্থী। কক্ষ, বিভাগ ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি শীর্ষ নিউজকে জানান, আমি রুস্তমের কক্ষের সামনে দিয়ে গোসল করতে যাচ্ছিলাম। এ সময় কক্ষের ভিতর কয়েক জনের বাক-বিতণ্ডা শুনতে পাই। পরে গোসল করে আসার সময় দেখি কক্ষের দরজা খোলা এবং রুস্তমের গুলিবিদ্ধ দেহ মেঝেতে পরে আছে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন শীর্ষ নিউজকে বলেন, গাছ বেয়ে অথবা সিঁড়ি দিয়ে শিবিরের কোনো গুপ্তচর তার কক্ষের জানালার দিকে গুলি করতে পারে।

গুলি করে খুনিরা হলের ভিতরই কোন কক্ষে আত্মগোপন করে থাকতে পারে। ছাত্রলীগের এর সাথে কোনো সম্পৃত্ততা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক জিয়াউদ্দিন হাসিব বলেন, আগামী ১০ এপ্রিল ওই হলে ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার কথা ছিল। কমিটিতে পদ পাওয়ার দ্বন্দ্বেই রুস্তম খুন হয়েছেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (পূর্ব) প্রলয় চিচিম শীর্ষ নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতের শনাক্ত করতে আমরা কাজ করেছি। আমরা কাউকে সন্দেহের বাহিরে রাখছি না। ছাত্রলীগের ‘অভ্যন্তরীণ কোন্দল’ থেকেও ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আসলে পুলিশ সব কিছু বিবেচনা করে তদন্ত করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর সেখানে রক্ত ব্যতীত কোন আলামত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রুস্তম আলী আকন্দ হলের নিজ কক্ষে (২৩০) গুলিবিদ্ধ হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone