বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|রবিবার, মে ৫, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » ন্যাপ ভাসানী ১৯ দল ছাড়ায় জোটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ন্যাপ ভাসানী ১৯ দল ছাড়ায় জোটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া 

bnp_19_doll_40612

প্রধান প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট প্রায় তিন বছর ধরে রাজপথে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে  নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে আসছে। গত ৫ জানুয়ারি তথাকথিত একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির (একাংশ) বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেন। ফলে ১৮ দলীয় জোট ১৯ দলীয় জোটে পরিণত হয়।

আর সেই যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় পার্টির এ যোগদানের বিষয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচির  সাথে আজ ১৮ দলীয় জোট ১৯ দলীয় জোটে রুপান্তরিত হয়েছে। কাজেই আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের শক্তি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সোমবার হঠাৎ করে ন্যাপ ভাসানী জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের ১৯ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আর ঠিক তখন থেকেই ১৯ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপিসহ অন্যান্য শরীকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। তবে বিএনপি এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে ন্যাপ ভাসানী চলে যাওয়ায় আগামী দিনের আন্দোলনে বিএনপি কিংবা তার নেতৃত্বাধীন জোটের তেমন কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না।’

তিনি বলেন, জোটে কে আসলো কে গেলো বড় কথা নয়। সবচেয়ে বড় হচ্ছে যে আদর্শে সবাই জোট বদ্ধ হয়েছি। সেই আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ন্যাপ ভাসানীই নয়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশ ন্যাপও রয়েছে যারা ভাসানীর আদর্শে বিশ্বাসী। কাজেই ন্যাপ ভাসানীর এমন কিছুই নেই যাতে তারা নিজেদের কেবল ভাসানীর আদর্শ মনে করতে পারেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা শামসুজ্জামান দুদু শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাপ মানেই ন্যাপ ভাসানী নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে ন্যাপ বলতে জেবেল রহমান গনির নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ ন্যাপকেই বেশি অগ্রাধিকার দেই।

বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুল মোবিন সাংবাদিকদের বলেন, জোটে থাকা না থাকাটা তাদের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। যেহেতু তারা বলেছেন জোট ছেড়ে নিজস্ব সত্ত্বায় ভাসানীর আর্দশে রাজনীতি করবেন সেহেতু জোট বদ্ধ হওয়া আর জোট ছাড়ার বিষয়টি আজ না হউক কাল যে কোনো সময় হতে পারে।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সাংবাদিকদের বলেন,‘হঠাৎ করে জোট ছাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়াটা ভালো কাজ হয়নি। তবে ন্যাপের চলে যাওয়াটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। সরকারি কোনো মহলের প্ররোচণায় হয়তো কোনো শত্রু পক্ষের ইন্ধনে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন।

জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি শেখ আনোয়ারুল হক শীর্ষ নিউজকে বলেন, ‘দলকে এককভাবে সুসংগঠিত করতেই জোট ছেড়েছি। কোনো বিরোধ বা অভিমানে নয়। দীর্ঘ দিন জোটে ছিলাম এবার এককভাবে দলকে গোছাতে চাই। তবে এ সময় তার কণ্ঠে এ অভিমান সুর শোনা যায়, বিএনপি ছাড় দিতে জানে না। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমারা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছি না । তাছাড়া দেশব্যাপী মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মতাদর্শ অনুসারিদের মতামত নিয়েই জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

১৯ দলীয় জোট থেকে কেন বেরিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে ন্যাপ ভাসানীর  মহাসচিব হাসরাত খান ভাসানী  বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে বিএনপির সঙ্গে ন্যাপ ভাসানীর রাজনৈতক কোনো যোগাযোগ নেই। তাছাড়া দেশে প্রধান দুই দলই (আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি) নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি করছে। ন্যাপ ভাসানী রাজনীতিতে এবার একাই পথ চলবে।

জোট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যেভাবে জোট চলছে এভাবে থাকলে যে কোনো সময় আরো কয়েকটি দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের হয়ে যেতে পারে। কেননা গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে ভাঙার অনেক চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে জোটের শরীক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তারা নিজ দল ও উপজেলা নির্বাচনের দিকেই বেশি নজর দিয়েছে।

অথচ ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে জোটের অবদান অনেক বেশি। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে জোটের মাঝে কোনো সমঝোতা লক্ষ্য করা যায়নি। বিএনপি বেশির ভাগ সময় নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। বিএনপি নিজেদের গুম খুন, গ্রেফতারের সংখ্যা নির্ধারণে তালিকা করলেও জোটের তালিকা করার ব্যাপারে ছিল উদাসীন।

জানা যায়, জোটের অনেক শরীক দল ১৮ দলীয় জোটে কাজী জাফর আহমেদের যোগদানের বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারেননি। তাছাড়া ১৯ দলীয় জোটের  সমাবেশ থেকে শুরু করে কোনো প্রকার কর্মসূচিতেই বিএনপি তার শরীকদের মূল্যায়ন করেনি।

বর্তমানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা অন্যান্য দলগুলো হলো জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ লিবারেল পার্টি (এলডিপি), জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), বাংলাদেশ ইসলামীক পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ ন্যাপ, পিপলস লীগ, জমিয়তে উলামে ইসলাম ও ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল)।

প্রসঙ্গত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী ঐক্যজোট মিলে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। কিন্তু কিছুদিন পরই জাতীয় পার্টি এরশাদের নেতৃত্বে জোট থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু নাজিউর রহমান মঞ্জুর সমর্থক অংশ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি জোটে থেকে যায়। পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপি আরো রাজনৈতিক দল নিয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে।

২০১১ সালে ১৮ এপ্রিল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। সোমবার ১৯ দলীয় জোট থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ভাসানী বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর এর মাধ্যমে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট আগের মতো ১৮ দলীয় জোটে রুপান্তর হল।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone