বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » গাজায় স্থল অভিযান নিয়ে বিভক্ত ইসরায়েল সরকার

গাজায় স্থল অভিযান নিয়ে বিভক্ত ইসরায়েল সরকার 

v-samakal-653bedde564ac

ইসরায়েলের সেনারা টানা ২০ দিন ধরে গাজা সীমান্তে অবস্থান করছে। স্থল অভিযানের জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে বলে দাবি তাদের। তবে কীভাবে, কখন এবং আদৌ স্থল আক্রমণ চালাবেন কিনা তা নিয়ে বিভক্ত দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা। ইসরায়েলের ৭ জন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এবং তিনজন সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য দিয়েছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও আলজাজিরা’র

কর্মকর্তারা বলেন, হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর হাতে বন্দি দুই শতাধিক জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আলোচকদের আরও সময় দেওয়াই এ বিলম্বের উদ্দেশ্য। তবে ইসরায়েলি যেসব নেতা হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা কীভাবে তা করবেন, সে বিষয়ে এখনও একমত হতে পারেননি।

নেতাদের কেউ কেউ উদ্বিগ্ন যে সেনাবাহিনী বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। কারণ, গাজার ভেতরে এ ধরনের আগ্রাসন জটিল নগরযুদ্ধে রূপ নিতে পারে। আবার কেউ কেউ সংঘাত শুধু গাজায় সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন। কারণ, হামাসের অন্যতম মিত্র লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের অনেক শহরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে।

বড় অপারেশনের মাধ্যমে স্থল আক্রমণ চালানো হবে নাকি, স্বল্প পরিসরে হবে– তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। শুধু তাই নয়, ইসরায়েল গাজা দখল করলে সেটির শাসন কে করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থি দল লিকুদের জ্যেষ্ঠ এমপি ড্যানি ড্যানন বলেছেন, মন্ত্রিসভায় মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলবেন, আমাদের শুরু করতে হবে, তারপর আমরা পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে চিন্তা করতে পারি। তবে দেশের নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এসব লক্ষ্য খুব স্পষ্ট হওয়া উচিত।

অভিযানের সামরিক উদ্দেশ্য কী– জানতে চাওয়া হলে ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ড হেচ্ট বলেন, ‘হামাসকে ধ্বংস করা।’ সেনাবাহিনী কীভাবে জানবে তারা সেই লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় প্রশ্ন। আমি মনে করি না যে, আমার এখনই এর উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আছে।’

এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৮১ জন নিহত হয়েছেন। এতে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৩২৬ জন। এর মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখনও ১ হাজার মানুষ ধ্বংস্তূপের নিচে পড়ে আছে, যাদের শনাক্তই করা যায়নি।

হামাস জানিয়েছে, তাদের বাধায় ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহ সমুদ্রসৈকতে অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। সংগঠনটির সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ভোরে দক্ষিণ গাজার রাফাহ সমুদ্রসৈকতে অভিযান চালানোর চেষ্টা করলে হামাস যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সেখান থেকে বাঁচতে তাদের বিমানবাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়েছিল। এ সময় তারা প্রচুর পরিমাণে গোলাবারুদ ফেলে সমুদ্রের দিকে পালিয়ে যায়।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, হামাস পরিচালিত গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নিহতের সংখ্যা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিহতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘের এ বক্তব্য দৃশ্যত বাইডেনের বক্তব্যের পাল্টা জবাব। হামাসও এরই মধ্যে ৬ হাজার ৭৪৭ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে বাইডেনের বক্তব্যের অসারতার জবাব দিয়েছে।

হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো বন্দিকে মুক্তি দেবে না তারা। রাশিয়ার কমার্স্যান্ট পত্রিকা আবু হামিদকে উদ্ধৃত করে বলেছে, গাজায় যাদের জিম্মি করা হয়েছে তাদের খুঁজে বের করার জন্য হামাসেরও সময়ের প্রয়োজন। এদিকে জিম্মির সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধান সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় এখন ২২৯ জনকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। অবশ্য এর আগে ২২৪ জনের কথা জানিয়েছিল ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত ৪ জনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলি হামলায় ৫০ জিম্মি মারা গেছে বলে দাবি করেছে হামাস।

ইসরায়েলি দৈনিক পত্রিকা মারিভ পরিচালিত জরিপের ফল বলছে, গাজা উপত্যকায় আক্রমণ বন্ধ রাখার পক্ষে প্রায় অর্ধেক ইসরায়েলি। ৫২২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ইসরায়েলির মধ্যে জরিপ করা হয়। তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল দেশের সেনাবাহিনীকে অবিলম্বে বড় আকারের স্থল আক্রমণে সময় বাড়ানো উচিত কিনা? এ প্রশ্নে ২৯ শতাংশ পক্ষে মত দেন। আর ৪৯ শতাংশ বলেন, অপেক্ষা করা ভালো হবে এবং ২২ শতাংশ কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এর আগে পত্রিকাটি গত ১৯ অক্টোবর আরেকটি জরিপ চালায়। তাতে ৬৫ শতাংশ ইসরায়েলি বড় স্থল আক্রমণকে সমর্থন করেছিলেন। সবশেষ জরিপের ব্যাপারে মারিভ লিখেছে, এটা অনেকাংশে নিশ্চিত, জিম্মিদের বিষয়ে অগ্রগতি এখন এজেন্ডার শীর্ষ প্রাধান্য। ফলে মতামতেও পরিবর্তন এসেছে।

ফিলিস্তিন শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা জানিয়েছে, একদিনেই তাদের ১৫ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত তাদের অন্তত ৫৭ জন কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। রুটি আনতে বেকারিতে যাওয়ার সময় গত দু’দিন আগে এমন এক কর্মী মারা গেছেন, যার ছয়টি সন্তান রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি ৬টি বাস্তুচ্যুত শিশুকেও আশ্রয়ে রেখেছিলেন।

এদিকে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ইসরায়েলি বাহিনী অবরোধ করে রাখে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ। সাধারণত জুমার নামাজে আল-আকসার আশপাশ পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু গতকাল খুব কমসংখ্যক মুসল্লি সেখানে যান, তবে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় মৌলিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী ফুরিয়ে গেছে। নেই খাবার পানি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র আবির ইতেফা বলেছেন, গাজাবাসী খেতে পারছে না। পশ্চিম তীরেও পরিস্থিতি একই দিকে যাচ্ছে। এদিকে, নিজ কর্মীদের শরণার্থীদের মাঝে সহায়তা বিতরণেও ইসরায়েল বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি। অন্যদিকে নিজ দল যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে থাকলেও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। অস্ত্রবিরতি আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব গতরাতে ভোট হওয়ার কথা। আশা করা হচ্ছে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় প্রস্তাবটি পাস হবে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone