বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বৃহস্পতিবার, মে ১৬, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জানা-অজানা » ‘ইন্না লিল্লাহ’ শব্দের প্রভাব

‘ইন্না লিল্লাহ’ শব্দের প্রভাব 

Picture collected

‘ইন্না লিল্লাহ’ শব্দ একটি ইসলামী পরিভাষা। এটি বাক্যের সংক্ষেপিত রূপ ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। এ বাক্যটি সম্পর্কে ধর্মবিশ্বাসী কিংবা ধর্মবিদ্বেষী সবাই ওয়াকিবহাল। বিশেষ করে এ শব্দ বা বাক্যটি অতি পরিচিত ধর্মপ্রাণ কিংবা ধর্মভীরু সব মুসলমানের কাছে। মুসলিম সমাজে সর্বাধিক উচ্চারিত এ শব্দ বা বাক্যের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এ শব্দ বা বাক্যটির প্রকৃত মর্মার্থ সম্পর্কে অনেকের ন্যূনতম ধারণা নেই। সব মুসলিমের জন্য এ শব্দটির প্রকৃত অর্থ জানা অতীব জরুরি। এমনকি বাক্যটির সাধারণ সরল অর্থও অনেকে জানেন না এবং জানতেও চেষ্টা করেন না।

ইহকালীন জীবনে মানুষ নানাবিধ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। অনেক সময় বিপদ পরিস্থিতি মানব জীবনকে তছনছ করে দেয়। বিপদের সম্মুখীন হয়ে অনেকে ভয়ানকভাবে ভড়কে যায়। মানুষের ক্ষমতা তখন আর কার্যকর হয় না। বিপদের এ ঘনঘটা মহান আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। তিনি বিপদ-আপদ দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করেন, মানুষের কর্মকাণ্ড যাচাই করেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা তাদের ওপর বিপদ এলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী’ (সূরা বাকারা-১৫৫ ও ১৫৬)।

 

‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বাক্যটির সরল অর্থ হলো- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য আর আমাদেরকে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ইহলৌকিক জীবনে প্রতিটি মানুষকে ইন্না লিল্লাহ শব্দের উচ্চারিত ধ্বনি পরকালীন ভাবনায় উজ্জীবিত করে। মানুষকে এ ভাবনায়ও নিয়োজিত করে যে, আমি কিংবা আমার ব্যক্তিসত্তা ক্ষণস্থায়ী, পরিবার কিংবা পরিজন আমার সাময়িক সঙ্গী, ধন-সম্পদ কিংবা বিত্ত-বৈভব এগুলোও আমার পরকালীন পাথেয় নয়, আমাকে এ জগৎ ছাড়তে হবে, কালের অতলে হারাতে হবে, ইতিহাসের উল্টানো পাতার সারিতে চাপা পড়তে হবে। মরণের পর হয়তো তখন কেউ আর কোনো দিন আমাকে স্মরণও করবে না, বরণও করবে না,আমার অন্তিম শয্যার শেষ স্মৃতিটুকুও রক্ষা করবে না,  আমার রেখে যাওয়া নীতি ও আদর্শ ধারণ করবে না। আত্মীয়-স্বজন কিংবা প্রতিবেশীরা আর আমার নামটিও স্মরণে নিতে চাইবে না। জীবনের নির্মম পরিহাসময় এ বাস্তবতা প্রতিটি মানুষের ভাবনায় ফুটিয়ে তোলে ইন্না লিল্লাহ শব্দটি কিংবা ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বাক্যটি। এ বাস্তবতাটি রাসূলুল্লাহ সা:-এর একটি হাদিসে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। খাদেমুর রাসূল সা: হজরত আনাস বিন মালেক রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে (সাথে যায়)। দাফনের পর দু’টি ফিরে আসে, আরেকটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হলো- তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়’ (বুখারি-৬৫১৪, মুসলিম-৭৬১৩)।

 

জীবনকে পাপমুক্ত রাখতে ইন্না লিল্লাহ শব্দের ভূমিকা অত্যধিক। কোনো ব্যক্তি যদি অনাকাক্সিক্ষত কোনো পাপে জড়িত হয়ে পড়ে এমতাবস্থায় যখনই ইন্না লিল্লাহ শব্দের মমার্থ তার স্মরণে আসে ওই ব্যক্তি তৎক্ষণাতই পাপ কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে সচেষ্ট হয়। কৃত পাপের জন্য সে অনুতপ্ত হয়, অনুশোচনা তাকে পরিশুদ্ধতার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। সে মহান রবের দরবারে তাওবাহ-ইস্তিগফার কামনা করে কায়মনোবাক্যে অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রার্থনা করে। ইন্না লিল্লাহ শব্দের স্মরণ তার জীবনকে পরিশুদ্ধ করে তাকে সফল বানায়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তাকে পরিশুদ্ধ করেছে’ (সূরা আশ শামস-৯)।

কল্যাণ রয়েছে ‘ইন্না লিল্লাহ’ শব্দ বা বাক্যটির বহুবিধ। জাগতিক জীবনে ঘটে যাওয়া বিপদে মানুষের যে অকল্যাণ হয়, ইন্না লিল্লাহ-এর আমলের বরকতে মহান আল্লাহ তায়ালা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে তার ধারণার চাইতেও বেশি কল্যাণ দান করেন। এ প্রসঙ্গে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, নবী সা:-এর পত্নী উম্মে সালমা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যার (ওপর) কোনো মুসিবত পৌঁছে, অতঃপর আল্লাহ তাকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন সেরূপ বলে- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা’ অর্থ- ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’ তবে আল্লাহ তার সাথে সেরূপ করবেন। উম্মে সালমা রা: বলেন, আবু সালমা রা:-এর ওফাতের পর আমি ওই দোয়া পাঠ করলাম, আর বললাম, আবু সালমা রা: থেকে ভালো কে হবেন? ফলে তার পরিবর্তে আল্লাহ আমাকে তাঁর রাসূলুল্লাহ সা:কে প্রদান করলেন, অতঃপর তিনি আমাকে বিয়ে করেন (মুয়াত্তা ইমাম মালিক-৫৪৬)। আরো একটি হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে কেউ বিপদ-মুসিবতে পড়ে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলবে এবং বলবে, হে আল্লাহ আমাকে এ মুসিবত থেকে উদ্ধার করুন এবং এর থেকে উত্তম বস্তু ফিরিয়ে দিন’ অবশ্যই আল্লাহ তাকে উত্তম কিছু ফিরিয়ে দেবেন’ (মুসলিম-৯১৮)।

 

ইন্না লিল্লাহ শব্দের উপকারিতা বর্ণনা করতে গিয়ে ড. মুহাম্মদ আশ শাহহাত আল জুনদি বলেন, ‘মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস হলো, প্রিয়জনের বিচ্ছেদে অশ্রুসিক্ত হয়, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, মন দুশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত হয়। প্রিয়জনের এ ব্যবচ্ছেদ তার মনোজগতে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। মনের এ অশান্তিকে ‘ইন্না লিল্লাহ’ শব্দ বা বাক্যের উচ্চারণ প্রিয়জনহারা ব্যক্তিকে প্রশান্তি দেয়, সবরে জামিল এখতিয়ারের তাওফিক দেয়।

প্রতিটি মানুষ যখন প্রিয়জন হারায় কিংবা কোনো মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু সংবাদ শুনে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন শব্দটি সজোরে কিংবা মনে মনে পাঠ করে। বিপদ কিংবা আচানক ভয়াবহ কোনো বিপদের কথা শুনলে চোখে পানি টলমল করে, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে, এমনকি চোখের সামনে এক ভয়াবহ স্মৃতি কিংবা স্বজনের নিত্যসঙ্গ কিংবা সহাবস্থানের দৃশ্যপট ফুটে উঠে। স্বজন হারানোর শোকে হৃদয় অশান্ত হয়, মুখে বিলাপের সুর ছড়িয়ে পড়ে। স্বজন হারানোর বুকচাপা এ কষ্ট লাঘবে শোকাহত লোকজন বার বার ইন্না লিল্লাহ শব্দ বলতে থাকে। এ শব্দ বলে বলে মনকে শান্ত রাখতে চায়, অবুঝ মনকে বুঝ দিতে চেষ্টা করে।

 

প্রখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনে জুবাইর রহ: বলেন, বিপদমুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ খুবই বরকতপূর্ণ একটি বাক্য। আমাদের নবীর আগে আর কোনো নবীকে ইন্না লিল্লাহ-এর মতো রবরকতপূর্ণ বাক্য দান করা হয়নি।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone