বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » রোগী বেশি ১০ জেলায়

রোগী বেশি ১০ জেলায় 

Untitled-1-samakal-64ecf0910d968

এ বছর ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত দেশের ১০ জেলার মানুষ, মৃত্যুর ঘটনাও বেশি। এসব জেলায় নির্মাণাধীন ভবন ও বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। জেলাগুলো ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ওই ১০ জেলায় সিটি করপোরেশন বা পৌর কর্তৃপক্ষের মশা নিধন কার্যক্রম না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এদিকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৩১ জন, যার ৩৮ শতাংশ ওই ১০ জেলায়।

জেলা ১০টি হলো– ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, ফরিদপুর, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এসব এলাকায় বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি। থেমে থেমে বৃষ্টি হাওয়ার কারণে পানি জমে তাতে এডিস মশার লার্ভা তৈরি হয়েছে, যা ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি এই ১০ জেলায় শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের ৪৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ ঢাকায়, ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ চট্টগ্রামে, ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ বরিশালে, ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ পটুয়াখালীতে, ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ ফরিদপুরে, ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ চাঁদপুরে, ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ লক্ষ্মীপুরে, ১ দশমিক ৮০ শতাংশ   পিরোজপুরে এবং ১ দশমিক ৬০ শতাংশ ময়মনসিংহে শনাক্ত হয়।

ঢাকার পর চট্টগ্রামে এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘এবার এখানে ডেঙ্গু রোগী বেশি মিলছে। ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী চিকিৎসা চলমান। রোগী অনুযায়ী হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে।’ বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, ‘বছরের শুরুতে যেসব ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি, তাদের অধিকাংশের ঢাকায় ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। পরে স্থানীয়দের মধ্যে সংক্রমণ বেড়েছে। কীটতত্ত্ববিদরা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন। মশার লার্ভা শনাক্তের কাজ চলছে।’ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘২০১৯ সালের আগে ডেঙ্গু ঢাকার বাইরে ছিল না। কিন্তু এবার কোনো জেলা বাকি নেই। ঢাকার বাইরে এডিস মশার অ্যালবোপিকটাসের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আমরা এখনও কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক চিন্তা করছি। গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও জটিল। আমরা যেসব প্রচারণা চালাচ্ছি তা ঢাকার এডিসের ইজিপ্টি প্রজাতিকে ঘিরে। এটি অল্প ও পরিষ্কার পানিতে, ফুলের টবে জন্মালেও অ্যালবোপিকটাস জন্মায় কলাগাছের ভেতরে। ঢাকার বাইরে গুরুত্ব বেশি দিতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘ঢাকার বাইরেও নগরায়ণ হচ্ছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু নিধনে কার্যক্রম তেমন নেই। যে কারণে এসব জেলাতে বেশি রোগী মিলছে।’

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, ‘দেশের যেসব জেলায় আক্রান্ত একশর বেশি সেগুলোকে মূলত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা যাতে ওইসব এলাকায় সংক্রমণ কমিয়ে আনতে পারে সে উদ্দেশ্যেই এই টালি করা হয়।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ওই ১০ জেলায় হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় বড় ইস্যু এটি ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট, পর্যান্ত কিট, স্যালাইন, প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত রাখতেও বলা হয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও ৮ জনের মৃত্যু

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর মশাবাহিত এই রোগে ৫৫৬ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে আগস্টেই মারা গেলেন ৩০৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সর্বশেষ আটজনের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ২ জন মারা গেছেন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৩৩১ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৪২ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৫ হাজার ৩২৭ এবং ঢাকার বাইরে ৬১ হাজার ৫১৫ জন।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone