বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » বিসিএস ক্যাডার ৩৬ বার ফেল করা পিংকি

বিসিএস ক্যাডার ৩৬ বার ফেল করা পিংকি 

Online Desk icture

একটি নয় দুটি নয় একের পর এক ৩৬টি চাকরির পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি। বিভিন্ন চাকরির প্রিলি পরীক্ষা দিয়েই যাচ্ছিলেন কিন্তু কোনো প্রিলিই পাশ করতে পারছিলেন না। কিন্তু হার মেনে নেননি, দমেও যাননি। তার কাছে NO মানে Next Opportunity।

তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে অবশ্যই পারবেন, অবশ্যই সফল হবেন। অবশেষে ৩৭ নম্বর চাকরির পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো প্রিলি পাশ করেন। এরপর থেকে মোটামুটি সব প্রিলি পরীক্ষায় পাশ করতে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পাশ করেন। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। ৩৮তম বিসিএসে নন-ক্যাডার তালিকায় জায়গা পান। কিন্তু দু:খ তখনো রয়ে গিয়েছিল কারণ ক্যাডার হতে পারেননি।

অবশেষে ৪১তম বিসিএসে বন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হোন। চেষ্টা অব্যাহত থাকে, ৪১তম বিসিএস শেষ বিসিএস। হ্যাঁ, ৪১তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত পিংকি রানী মজুমদারের গল্প বলছি।

পিংকি রানী মজুমদার ৪১তম বিসিএসে (বন) ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার বাবা দুলাল চন্দ্র মজুমদার, যিনি দীর্ঘ দিন প্রবাসে ছিলেন। মা মমতা রানী মজুমদার একজন গৃহিণী।

পিংকি রানী মজুমদার কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার শাকপুর ইউনিয়নের জাগুরিয়া (ধলিরপাড়) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠা বরুড়া পৌরসভার অফিসপাড়ায়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।

দুষ্টুমি আর খেলাধুলা নিয়ে কেটে যেত সারা বেলা। পিংকি রানী মজুমদার শৈশব ছিলেন দুরন্ত। পড়াশোনায় অমনোযোগী ছিলেন।  দুষ্টুমির কারণে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দেয় পড়াশোনার জন্য। সেখানে শাসন বারণের মাঝেও ছিল পড়াশোনা, দুষ্টুমি, দুরন্ত শৈশব।

নিজ উপজেলার গালিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে বরুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি পাশ করেন। অতঃপর বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ থেকে ২০০৮ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান থেকে ২০১৫ সালে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান এবং ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে পড়াশোনা শেষ করেন।

২০১৬ সালে জুলাই মাসে মাস্টার্স শেষ করেন। যেহেতু ডিপার্টমেন্টে পজিশন ছিলেন তাই ভেবেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবেন। সেজন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে ভাইভা দিয়েছিলেন কিন্তু চাকরি হয়নি। বুঝতে পেরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য আরও কিছু যোগ্যতা লাগে।

৩৮তম বিসিএসে লক্ষ্য স্থির করে পড়াশোনা শুরু করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবার চিন্তা বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন বিসিএস ক্যাডার হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির প্রত্যাশা থাকার কারণে চাকরির প্রস্তুতি কিছুই ছিল না। কিভাবে শুরু করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। কাছের এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।

পিংকি রানী মজুমদার বলেন, সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আমি ৪১তম বিসিএসে বন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি তার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তবে আমার এ সাফল্যে আমার বাবা-মা অনেক খুশি হয়েছেন এতেই আমি অনেক আনন্দিত। তাদের মুখে হাসি ফুটাতে পারাই আমার সফলতা।  বাবা-মায়ের সুখই আমার সুখ।

 

তিনি বলেন, যতটা বিনয়ী, কৃতজ্ঞতাবোধ এবং Down to Earth থাকব ততই শান্তি পাব বলে বিশ্বাস করি। আমি মনে করি দিন শেষে বিসিএস একটি চাকরি মাত্র, জীবনের ছোট্ট একটি অংশ, এটা সম্পূর্ণ জীবন না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন পিংকি। তার বিসিএস জার্নিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। অনলাইনে লাইভ ক্লাস, বিসিএসভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে জয়েন থাকা, পত্রিকার বিভিন্ন কলাম পড়া, অনলাইনে এক্সাম দেওয়া, নোটপত্র শেয়ার করা ইত্যাদি কাজে একমাত্র ভরসা ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করতাম। তাই আমার জন্য আশীর্বাদ ছিল।

যেহেতু বন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি তাই দেশের বনজ সম্পদ রক্ষা ও উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে অবদান রাখতে চান পিংকি রানী মজুমদার।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone