বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » নদীগর্ভে বিলীনের শঙ্কা হাজার গ্রাম

নদীগর্ভে বিলীনের শঙ্কা হাজার গ্রাম 

8-20230401232307

নদীমার্তৃক বাংলাদেশের নদীর পানিই সম্পদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নদীর পানি দিয়ে কৃষকরা চাষাবাদ করে ফসল ফলান। কিন্তু এই নদী আবার মানুষের জীবনে ভয়াবহ সর্বনাশ ডেকে আনে। নদী ভাঙনে দেশের লাখ লাখ লোক গৃহহীন হয়েছেন। ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা, পদ্মা-যমুনা-মেঘনাসহ কয়েকটি নদীর ভাঙন রোধে সরকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যেই দেশের ৪০ জেলায় ৩৫০টি উপজেলায় বাঁধে ফের ভাঙন এবং নদীগর্ভে নতুন নতুন গ্রাম বিলিনের ঝুঁকিতে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীভাঙন প্রতিরোধ এবং বেড়িবাঁধ সংস্কারে প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন না করা হলে এবারও হাজার হাজার গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

গত তিন দশকে দেশের নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে ১৫ শতাংশ হারে, তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীগুলো দুইপাশের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার গ্রাম। ধ্বংস হচ্ছে তীর, আগামীতে হুমকির মুখে পড়ছে বাঁধ এবং নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে দেশ। আগামীতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়লে সেখানে বন্যা ও নদীভাঙন আরও বাড়বে। বাঁধগুলো সামনের দিনে বন্যা মোকাবিলা করতে পারবে না। ফলে আমাদের উপকূলীয় বেড়িবাঁধের পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো নিয়ে ভাবতে হবে বলে মনে করে পানি বিশেষজ্ঞররা।

দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর প্রধান সম্পদ হচ্ছেÑ ভারতের উজান থেকে আসা পানির প্রবাহ। নদ-নদীর পানির ওপর ভর করে দেশের কৃষি ও বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকা চলে। কিন্তু সেই পানির পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ৪০ জেলায় ৩৫০টি উপজেলায় বাঁধে ফের ভাঙন এবং নদীগর্ভে নতুন নতুন গ্রাম বিলীনের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বরগুনার তালতলীর পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া, অবাধে কেটে নেওয়া হচ্ছে গোমতী নদীর দুইপাশের মাটি। ধ্বংস হচ্ছে তীর, হুমকির মুখে পড়ছে বাঁধ। তিস্তার বাম তীরে কুড়িগ্রামের রাজহাট থেকে উলিপুর উপজেলার থেতরাই দড়িকিশোরপুর, কিশোরপুর এবং হোকডাঙ্গা গ্রাম আবারো তিস্তার ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙন প্রতিরোধ এবং বেঁড়িবাঁধ সংস্কারে প্রকল্প নেয়া হলেও অনেক জেলা কাজ শুরু এবং শেষ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এদিকে সারাদেশে নদীর ভাঙন প্রতিরোধ এবং বেড়িবাঁধ সংস্কার নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্ব গত বৃহস্পতিবার স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. নূরুল ইসলাম সরকার ইনকিলাবকে বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেছি। সারাদেশের নদীর ভাঙন প্রতিরোধ এবং মোরামতের কাজ গুলো নিয়ে। আগামীতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়লে সেখানে বন্যা ও নদীভাঙন আরও বাড়বে। বাঁধগুলো সামনের দিনে বন্যা মোকাবিলা করতে পারবে না। ফলে আমাদের উপকূলীয় বেড়িবাঁধের পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছি।

এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত ওই মেনিয়ারে বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত নিয়ে বেশি কথা হয়। কিন্তু বন্যার কারণে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা অববাহিকায় ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। আগামী দিনগুলোতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়লে সেখানে বন্যা ও নদীভাঙন আরও বাড়বে। দেশের বেশির ভাগ বড় নদীর তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ আছে। বাঁধগুলো সামনের দিনে বন্যা মোকাবিলা করতে পারবে না। ফলে আমাদের উপকূলীয় বেড়িবাঁধের পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো নিয়েও ভাবতে হবে।
দেশে আসা পানির ৯০ শতাংশের উৎস গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা। গত ৩০ বছরে ওই তিন অববাহিকার পানির প্রবাহ ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে যেসব সময়ে দেশে পানি বেশি এলে বন্যা হয়, অর্থাৎ বর্ষাকালে পানি বেশি আসছে। আর যখন পানি দরকার অর্থাৎ শুস্ক মৌসুম, তখন পানি কম আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের এসব বিপদ তৈরি হচ্ছে। চলতি ২০২৩ থেকে আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কী করবে, তা নিয়ে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (ন্যাপ) এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর প্রধানসম্পদ হচ্ছে উজান থেকে আসা পানির প্রবাহ। নদ-নদীর পানির ওপর ভর করে দেশের কৃষি ও বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবিকা চলে। কিন্তু সেই পানির পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ।

দেশে আসা পানির ৯০ শতাংশের উৎস গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা। গত ৩০ বছরে ওই তিন অববাহিকার পানির প্রবাহ ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। তবে যেসব সময়ে দেশে পানি বেশি এলে বন্যা হয়, অর্থাৎ বর্ষাকালে পানি বেশি আসছে। আর যখন পানি দরকার অর্থাৎ শুস্ক মৌসুম, তখন পানি কম আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের এসব বিপদ তৈরি হচ্ছে। চলতি ২০২৩ থেকে আগামী ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কী করবে, তা নিয়ে তৈরি করা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (ন্যাপ) এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গত অক্টোবরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএফসিসিসি) কাছে ওই প্রতিবেদন জমা দেয় বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও তা মোকাবিলায় বাংলাদেশ কী করছে এবং কী করা উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ড্যান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক নন্দন মুখার্জি বাংলাদেশের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ওই তিন নদীর পানির প্রবাহ দ্রুত বাড়ছে। এর মধ্যে যমুনা অববাহিকায় বন্যার পরিমাণ এই শতাব্দীর মধ্যে ৯ গুন, গঙ্গা বা পদ্মায় ৬ গুন ও যমুনায় প্রায় ৩ গুন বাড়বে। একই সঙ্গে বন্যা শুরুর সময়কাল এক থেকে দেড় মাস পিছিয়ে যাবে। আর পানি নামবে আগের চেয়ে বেশি সময় ধরে।

এ ব্যাপারে নন্দন মুখার্জি সেমিনারে বলেন, বাংলাদেশের বৃষ্টি ও নদীর পানিনির্ভর কৃষিব্যবস্থার ওপরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক হাতে পারে। কারণ, ওই বন্যা ও পানিপ্রবাহের সময়কাল বেড়ে যাওয়ায় মূলত আমন ও আউশ ধানের ক্ষতি বাড়তে পারে। একই সঙ্গে অল্প সময়ে দ্রুত পানি বাড়তে থাকলে এবং পানির প্রবাহ বেড়ে গিয়ে নদীর ভাঙন আবার বাড়তে পারে।

গত ২৭ মার্চ বরগুনার তালতলীর পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ লোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তীব্র হয়ে উঠেছে। পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীতে প্রবল জোয়ারে প্রায় ১০০ ফুট বেড়িবাঁধ নদীতে চলে গেছে। বাঁধের এই অংশে দেড় থেকে দুই ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। তাৎক্ষণিক মেরামত করা না গেলে পরবর্তী যেকোনো জোয়ারে পুরো এলাকা পুরোপুরি ধসে গিয়ে প্লাবিত হতে পারে। এ ছাড়াও এই এলাকার সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিকল্পিত আর টেকসই বেড়িবাঁধ না হওয়ায় প্রতিবছরই ভাঙনের কবলে পড়ে। এজন্য তারা পাউবোর গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে বরগুনার উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর মধ্যে তালতলী উপজেলার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এরপর থেকেই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে জরুরিভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি তোলেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহ ফিরোজ বলেন, যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এর আগেও কয়েকবার বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে এলাকায় লোনা পানি ঢুকলে সব ধরনের ফসল ও গাছ মারা যায়। ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। তখন গরু-ছাগল, পশু-পাখি নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। বাঁধ ঠিক হলে আবার ঘর ঠিক করে বসবাস শুরু করি। একটু গুছিয়ে উঠতেই দেখা যায় আবার বাঁধ ভেঙে সব শেষ হয়ে গেছে। নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ড. কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেছেন, তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় আবারও বেড়িবাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই এলাকার মানুষ। এবারও তাই হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকলে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক গ্রাম ডুবে যাবে।’
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হাসান বলেন, ‘ভাঙনের খবর পেয়ে একজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে সার্ভে করতে পাঠিয়েছি। সার্ভে রিপোর্ট দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone