বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বুধবার, মে ৮, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » মুখোমুখি দুই দল

মুখোমুখি দুই দল 

ai desh11

এই দেশ এই সময়, ঢাকা : আগামী ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কে ঠেকাতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে সরকার।

অপরদিকে কর্মসূচি বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। একই ইস্যুতে স্ব স্ব টার্গেট সফল করতে প্রস্তুত সরকার ও বিরোধী পক্ষ। ফলে সংঘাত, সংঘর্ষ ও সহিংসতার আশঙ্কায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে সমগ্র দেশবাসী। বিশেষ করে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে রাজধানী ঢাকাবাসী।

খবর নিয়ে জানা গেছে, সরকারের কোনো বাধাই মানছেন না বিরোধী জোটের নেতাকর্মীরা। পাত্তাই দিচ্ছে না বাধাবিপত্তি। রাজধানীর প্রবেশ পথে সরকার পক্ষের অবস্থানের ঘোষণাকে তোয়াক্কা করছেন না গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা। ইতোমধ্যে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে প্রায় তিন লাখেরও বেশি মানুষ অবস্থান নিয়েছে বলে বিএনপির একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ভুন্ডুল করার যে পরিকল্পনা সরকারপক্ষ গ্রহণ করেছে তা সফল নাও হতে পারে।

জানা গেছে, ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, নোয়াখালী, ফেনী, সাতক্ষীরা, বগুড়া, হবিগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, জামালপুর, রংপুর, দিনাজপুর, টেকনাফ, কক্সবাজার, নীলফামারী, যশোরসহ দেশের প্রতিটি জেলা থেকেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। খুলনা থেকে ইতোমধ্যে ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। সরকারের অলিখিত নির্দেশে পরিবহন বন্ধ রাখা হলেও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সিলেট, রাজশাহী, রংপুর ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে লোকজন বিকল্প পন্থায় ঢাকা আসছেন।

গত ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি সরকারের একতরফা নির্বাচন প্রক্রিয়ার নিন্দা জানিয়ে দেশের মানুষকে গণতন্ত্র রক্ষায় ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় সমবেত হতে বলেছিলেন। এ ঘোষণার পর পরই নড়েচড়ে বসেছে সরকার পক্ষ। বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট যাতে এ কর্মসূচি সফল করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। প্রত্যেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে কোনো সমাবেশ ঢাকায় হওয়ার ক্ষেত্রে তার অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাবের উপর ভিত্তি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঢাকার প্রবেশ পথে পাহারায় থাকতে বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় কর্মীদের ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রবেশ পথে পতাকা হাতে নিয়ে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাছাড়া শনিবার বিকেলে ঢাকা মহানগরীর ১০০টি ওয়ার্ড ও ১৮টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ এবং সমর্থক সংগঠনগুলোকে পতাকা হাতে মিছিল করতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ ঘোষণার পর কৌশল বুঝে বুধবার থেকেই ঢাকায় আসা শুরু করেছে ১৮ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সরকারি বাধার কথা বিবেচনায় রেখেই তারা সমাবেশস্থলে সমবেত হওয়ার কৌশল নিয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী বাহিনীর একটি বিশাল অংশ ঢাকায় পৌঁছেছেন।

মূলত, সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে ঢাকায় আসতে না পারে সেজন্য ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দেশের সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসতে পারছেন না। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য আসতে চাওয়া রোগীর পক্ষ থেকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র দেখানোর পরও বরিশালের লঞ্চ থেকে শুক্রবার রোগীকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে পরিবহন বন্ধ করে দেওয়ার কোনো ঘোষণা না থাকলেও অঘোষিতভাবে পালিত হচ্ছে পরিবহন ধর্মঘট। শুক্রবার রাতে সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, সরকার মনে করে জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজধানীতে এ ধরনের সমাবেশ নাশকতারই ইঙ্গিত রয়েছে। দেশবাসীর যান ও মালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই কর্তৃপক্ষ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি বলেও মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেকোনো দলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করার অধিকার কারো নেই। সেকথা বিবেচনায় রেখেই সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নির্বাচন প্রতিরোধকারীদের প্রতিরোধ করতে বলেছেন। একই সুরে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

১৪ দলের শরিক জাসদের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ গণতন্ত্র রক্ষা নয়, এটি মূলত গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে ভুন্ডুল করার কর্মসূচি। এটি হতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে রাজধানীতে এ ধরনের কর্মসূচি হতে পারে না।

এদিকে বিএনপির সংসদ সদস্য সৈয়দা আশিফা আশরাফী পাপিয়া শীর্ষ নিউজকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ঘোষিত ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ যাতে সফল হতে না পারে সেজন্য সরকার অঘোষিত অবরোধ আরোপ করেছে। কিন্তু এসব অবরোধ দিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে জনতার স্রোত ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন, শুক্রবারের বেগম খালেদা জিয়ার ভিডিও বার্তায় এটাই প্রমাণ করে তিনি ২৯ ডিসেম্বর গণতন্ত্রের অভিযাত্রা থেকে সরে আসবেন না। যেকোনো মূল্যে তিনি এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেনই। পাপিয়া বলেন, সরকার পুলিশ দিয়ে আমাদের কর্মসূচিকে ভুন্ডুল করতে চাইলেও তা সরকারের পক্ষ সম্ভব হবে না। দেশের মানুষকে ধৈর্য্য ধারণ করে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অনুরোধ জানান বিএনপি নেত্রী।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone