বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » ইডেনে দ্বন্দ্ব: আধিপত্য বিস্তারই মূল কারণ

ইডেনে দ্বন্দ্ব: আধিপত্য বিস্তারই মূল কারণ 

0832160202081_kalerkantho-2022--27-pic-

রাজধানীর ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ বেরিয়ে আসছে। দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজি, ভর্তি ও হলের সিট বাণিজ্য এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। মূলত আধিপত্যের দ্বন্দ্বেই মারামারিতে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। এসব ঘটনায় গত রবিবার রাতে ১৬ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ ছাড়া আরো কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংগঠনের সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সঙ্গে কয়েকজন সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দ্বন্দ্ব চলছিল। এ নিয়ে দুই পক্ষ মারামারিতে জড়ানোর পর গত রবিবার মধ্যরাতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত এবং ১৬ জনকে বহিষ্কার করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ নেতার গায়ে হাত দিয়েছে সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী। এর পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বিক্ষুব্ধরা তাদের অভিযোগ আমাদের কাছে বলতে পারত। তা না করে সংবাদমাধ্যমে যেভাবে সংগঠনের নেতাদের নামে বিষোদগার করেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়ের খোঁজখবর করা হচ্ছে। আমরাও খোঁজ নিচ্ছি, আরো কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হতে পারে। ’

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আমরণ অনশন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বহিষ্কৃতদের ১২ জন। তবে ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই এ কর্মসূচি থেকে সরে যান তাঁরা। এই ১২ নেত্রী হলেন স্থগিতকৃত কমিটির সহসভাপতি সোনালী আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা ঊর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী।

গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় ইডেন কলেজ প্রাঙ্গণে ‘বিনা তদন্তে  বহিষ্কার, নেপথ্যে কারা’ শিরোনামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বহিষ্কৃত নেত্রীরা জানান, তাঁরা ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশনে বসবেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে তাঁরা ধানমণ্ডিতে গিয়ে দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করার সময় বাধার মুখে পড়েন। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বহিষ্কৃত নেত্রীদের কয়েক দফা ধস্তাধস্তি হয়। দুপুর দেড়টার দিকে তাঁরা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ পান। আধাঘণ্টা পর বের হয়ে অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসার কথা জানান বহিষ্কৃত নেত্রীরা।

বহিষ্কৃত সহসভাপতি সোনালী আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা পার্টি অফিসে গিয়েছি। সেখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল আওয়াল শামীম ভাই এসে বহিষ্কারাদেশ বাতিল করার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ’

বেরিয়ে আসছে নানা অভিযোগ

এক মাস ধরে নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সমালোচনায় পড়ে ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। বিশেষ করে সিট বাণিজ্য ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা ওঠে। এসব অভিযোগ দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই রয়েছে।

গত ২০ আগস্ট কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভা একটি হলের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের কয়েক শিক্ষার্থীকে তাঁদের রুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এ হুমকির অডিও রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে রীভাকে গালাগাল করতে শোনা যায়।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীনিবাসের পাঠকক্ষের প্রবেশমুখে টেবিল বসিয়ে পড়ছিলেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আয়েশা ইসলাম। এতে অন্য শিক্ষার্থীদের চলাচলে সমস্যা হওয়ায় এক ছাত্রী তাঁকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ছাত্রলীগের ওই নেত্রীর অনুসারীরা দলবল নিয়ে কক্ষে গিয়ে ওই ছাত্রীর পায়ে গরম চা ঢেলে দেন এবং তাঁর হাত মচকে দেন। আয়েশা ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ওরফে রীভার অনুসারী।

গত ২২ সেপ্টেম্বর ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের বিষয়ে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। ওই সাক্ষাৎকার দেখে ক্ষুব্ধ হন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ নিয়ে শনিবার রাতে মারামারির ঘটনা ঘটে।

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের স্থগিতকৃত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী গণমাধ্যমে অভিযোগ করেন, সাধারণ মেয়েরা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কাছে নিরাপদ নন। কারণ তাঁরা ব্যবসা করেন। লিগ্যাল রুমের মেয়েরা যখন অ্যাটেনডেন্স খাতায় সাইন করতে আসেন, তখন সভাপতির অনুসারীরা তাঁদের ছবি তুলে রাখেন। পরে রুমে নিয়ে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে তাঁদের কথামতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব দেন।

গত সোমবার বিকেলে ছাত্র অধিকার পরিষদের এক বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত কেয়া বলেন, ‘আমি পলিটিক্যালভাবে টাকা দিয়ে হলে উঠে দুই দিন থাকি। কিন্তু ওখানে নির্যাতনের এমন ভয়াবহ অবস্থা, আমি দুই দিনের বেশি আর টিকতে পারিনি। ’ নুসরাত কেয়ার অভিযোগ, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাধারণ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ও ক্যান্টিন থেকে চাঁদা আদায় করেন। ছাত্রীদের হলে ওঠাতে আট থেকে ১০ হাজার টাকা নেন, আবার প্রতি মাসে দুই হাজার করে টাকা নেন।

জানতে চাইলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের স্থগিতকৃত কমিটির সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভার অনুসারী সহসভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানা। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ইডেন কলেজে হয় না। আমাদের সংগঠনেরই কেউ কেউ আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন অভিযোগ তুলতে দ্বিধা বোধ করছে না।

গতকাল বহিষ্কৃত নেত্রীদের সংবাদ সম্মেলনেও নানা অভিযোগ তোলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বহিষ্কৃত সহসভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈ বলেন, ‘আজকে কী অন্যায়ের কারণে স্থায়ী বহিষ্কার? আমার অপরাধ আমি আমার নির্যাতিত সহোযোদ্ধার পাশে দাড়িয়েছি? সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ, হাজার হাজার প্রমাণ এবং চাঁদাবাজির ভিডিও ও অধ্যক্ষ ম্যামকে নিয়ে কটূক্তি—এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কেন বহিষ্কার করা হলো না?’

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আগেই স্থায়ী বহিষ্কারের প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অভিযুক্তরা গণমাধ্যমে বলেছে, তারা এ তদন্ত কমিটি মানে না। এ ছাড়া তাদের অপকর্মের নানা প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। এ কারণেই বহিষ্কার করা হয়েছে। ’

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone