নির্বাচন কি নেতৃত্ব তৈরি করতে পারবে?
শুধু অফিসে বসে থাকার জন্য নির্বাচন করলে হবে না। তহবিল চেয়ে নিজেদের ছোট করা ছাড়াও অনেক কাজ রয়েছে। যত্রতত্র অভিনয়শিল্পীদের কারণে নাটকের মান কমে যাচ্ছে। সেদিকে নজর দিয়ে নিয়মিত ওয়ার্কশপ করা যেতে পারে। অভিনয়শিল্পীদের কারখানা কীভাবে করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। সেই জন্য দক্ষ লোককেই বেছে নিতে হবে।
প্রথমবারের মতো নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন শাহাদাৎ হোসেন। প্রথমেই তিনি জানালেন, অভিনেতা শহীদুল আলম ও শহীদুজ্জামান সেলিমদের মতো সিনিয়র কেউ নির্বাচন না করায় তিনি প্রার্থী হতে উৎসাহিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অভিনয়শিল্পীদের নেতৃত্বে সভাপতি পদে সিনিয়র কারও আসা উচিত। নাসিম আমাদের জুনিয়র। সে অনেক ভালো অভিনেতা সংশয় নেই। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঠিক ছিল। সভাপতি হিসেবে আমার চেয়ে সিনিয়র কেউ এলে ভালো হতো। আমার চেয়ে সিনিয়র কেউ না থাকায় মনে হয়েছে সাংগঠনিক মানুষ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া যায়।’
পরপর দুবার শিল্পীসংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এবার সভাপতি পদে কেন নিজেকে যোগ্য মনের করলেন আহসান হাবীব নাসিম?
এই অভিনেতা বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে শিল্পীদের এই সংগঠনে আমার নিয়মিত যাতায়াত। পরে ২০০৯ সালের নির্বাচনে দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। এই সময়ে অনেক সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো দেড়–দুই বছরের বেশি টেকেনি। সেই সময়েই আমি বুঝতে পেরেছি, অভিনয়শিল্পীদের সংকটগুলো কী। ২০১৭ সালে যখন আমি নির্বাচিত হই, তখন থেকেই শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণ, নিরাপত্তা, কর্মপরিবেশ তৈরি, জেনারেশন গ্যাপ দূর করাসহ অনেক বিষয় নিয়ে নিয়মিত কাজ করছি। এই সংগঠনকে আরও শক্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করি।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ। তিনি মনে করেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সকল প্রার্থী ও ভোটাররা উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। সংস্কৃতির জন্য প্রাণবন্ত নির্বাচনটাই আসল। কারণ, এখান থেকে শিল্পীদের জন্য কাজ করা ছাড়া আর্থিক কোনো সুবিধা পাওয়ার নেই। তিনি বলেন, ‘এটা একটা খেলা। যার মূলে থাকে আনন্দ। এই নির্বাচন থেকে আনন্দ নিতে হবে। এখানে কোনো প্যানেল নেই। প্রার্থীদের যোগ্যতার কোনো হেরফের দেখছি না। যে নিজেকে যোগ্য মনে করেছেন, সে–ই এসেছেন। তার মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিকেই সবাই বেছে নেবেন।’
দুই বছর মেয়াদি এই নির্বাচন সামনে রেখে ঘোষণা করা হয়েছে, আলাদা করে পোস্টার করা যাবে না। সভা–সমাবেশ, গুচ্ছ আলোচনাও নিষেধ। তবে কোনো অভিনয়শিল্পী চাইলে কারও পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিতে পারবেন। এবারের নির্বাচনের পদপ্রার্থীদের কাছে প্রত্যাশা কী থাকবে—এই প্রসঙ্গে গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, ‘শুধু অফিসে বসে থাকার জন্য নির্বাচন করলে হবে না। তহবিল চেয়ে নিজেদের ছোট করা ছাড়াও অনেক কাজ রয়েছে। যত্রতত্র অভিনয়শিল্পীদের কারণে নাটকের মান কমে যাচ্ছে। সেদিকে নজর দিয়ে নিয়মিত ওয়ার্কশপ করা যেতে পারে। অভিনয়শিল্পীদের কারখানা কীভাবে করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। সেই জন্য দক্ষ লোককেই বেছে নিতে হবে।’
নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণ ও উৎসাহ দেখে অভিনয়শিল্পী সমিতির উপদেষ্টা ও আপিল বিভাগের প্রধান গুণী অভিনেতা মামুনুর রশীদ আবেগাপ্লুত হয়েছেন। তাঁর কাছে প্রশ্ন, এবারের নির্বাচন যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে পারবে কি না? মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কেন এদের মধ্যে থেকে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হবে না। যারা কাজ করতে চায়, তারাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এর আগে দেখলাম শহীদুজ্জামান সেলিম বলেছে সমকক্ষ কাউকে না পেয়ে নির্বাচন করছেন না। এমনও হয়েছে, আমি অনেক অসম ব্যক্তিদের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, বিজয়ীও হয়েছি। বরং তরুণ যারা নেতৃত্বে আসছে, তাদের সাধুবাদ দেওয়া উচিত। এখন ৪৮ জনই কি যোগ্য না? চার বছর ধরে যে কাজ হচ্ছে, সামনে আরও ভালো কাজ করার নেতৃত্বকেই সবাই বেছে নেবে।’