বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|সোমবার, মে ৬, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » পণ্যবাহী বাংলাদেশী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিতে যাচ্ছে ভারত

পণ্যবাহী বাংলাদেশী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিতে যাচ্ছে ভারত 

untitled_32178

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশী পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিতে যাচ্ছে ভারত সরকার। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানো ও পরিবহন ব্যয় কমাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভারতের বাণিজ্য বিভাগ শিগগিরই এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব দেশটির মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করতে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দ্য ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এক বছর আগে দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রাক পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। কিন্তু এতে কোনো সাড়া না দেয়ায় এখন একতরফাভাবে শুধু ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাক পরিচালনার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাক ভারতে প্রবেশের নীতিমালা ও প্রটোকল অনুযায়ী কী পরিমাণ চার্জ ধার্য করা হবে— তা জানতে চেয়ে ভারতের বাণিজ্য বিভাগ সম্প্রতি দেশটির সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়।

হাইওয়ে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশেষ এ সুবিধার বিষয়ে সম্মতি দিলেও মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও কবে ও কীভাবে ভারতের ট্রাক চলাচল করতে পারবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বোর্ডে উত্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাধীন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিসের গবেষক রাম উপেন্দ্র দাস বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ভারতের দিক থেকে এটি বেশ প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর মাধ্যমে ভারতকেও একই সুযোগ দিতে বাংলাদেশ আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী হবে ও ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রবেশ সহজ হবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে উভয় দেশের ট্রাক সীমান্ত পার হয়ে অন্যের ভূখণ্ডে মাত্র ১৫০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারে। তবে অন্য দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো গন্তব্যে যেতে ও পণ্য ওঠানামার সুযোগ নিতে গত বছর দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব দেয় ভারত। গত বছর শুরুর দিকে বাংলাদেশের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত ‘মোটর ভেহিকল এগ্রিমেন্ট’ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির খসড়া পাঠায় দেশটি। চলতি বছর অনুষ্ঠেয় দেশটির জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ কাজ সম্পন্ন করতে জোর তত্পরতা চালায় ভারত। গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের অধিবেশনকালে মনমোহন-হাসিনা বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়।

এদিকে গত বছরের শেষ দিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সার্কের আওতায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তবে সার্কের আওতায় চুক্তি সম্পাদনে অনেক সময় লাগবে দাবি করে ভারত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায়। এতে বিষয়টি ঝুলে যায়।

ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের পণ্যবাহী ট্রাক পরিচালনার অনুমতি প্রদানের বিষয়টি ভারতের একটি কৌশল বলে মনে করছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের ট্রাক ভারতে প্রবেশের কোনো অনুমতি চাওয়া হয়নি। তার পরও এ সুবিধা দিয়ে ভারতের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে চাইছে দেশটি। কিন্তু বাংলাদেশের সড়ক ভারতের ট্রাক চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা।

এক্সেল লোড (ভারবাহী ক্ষমতা) নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোয় ৮ দশমিক ২ থেকে ১০ টন ওজন নিয়ে ট্রাক চলাচল করতে পারবে। এর অতিরিক্ত ওজনের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের জন্য মহাসড়কগুলো প্রস্তুত নয়। কিন্তু ভারতীয় ট্রাক সাধারণত ১৫-২০ টন ওজনবাহী হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এগুলোর বহনক্ষমতা আরো বেশি হয়।

২০১১ সালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অব এশিয়ান হাইওয়ে’র চতুর্থ বৈঠকে দেখানো হয়, এশিয়ান হাইওয়েভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোর ভারবাহী ক্ষমতা সবচেয়ে কম। পাশের দেশ ভারতের তুলনায় তা অর্ধেক। পাকিস্তান, ভুটানের চেয়েও বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোর ভারবাহী ক্ষমতা কম। একই বছর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘স্ট্যাটাস পেপার অন এশিয়ান হাইওয়ে, বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনেও এশিয়ান হাইওয়েভুক্ত ছয়টি মহাসড়ককে দ্রুত চার লেনে উন্নীত করা ও ভারবাহী ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এসক্যাপ) সাবেক পরিচালক ড. মো. রহমতউল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, ভারতের মহাসড়ক ভারী যানবাহন চলাচল উপযোগী হলেও বাংলাদেশের মহাসড়ক এজন্য উপযোগী নয়। তাই দেশের সড়কের মানোন্নয়ন করার পর ভারতের ট্রাক প্রবেশের সুযোগ দেয়া উচিত। তা না হলে বিদ্যমান অবকাঠামোতেই এ সুযোগ দিলে ভারত লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone