বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » বিদায়ের শেষ মুহূর্তেও বাইডেনকে ভোগাতে যেসব পদক্ষেপ নিলেন পম্পেও

বিদায়ের শেষ মুহূর্তেও বাইডেনকে ভোগাতে যেসব পদক্ষেপ নিলেন পম্পেও 

130325_bangladesh_pratidin_Pompeo

আগামীকাল ২০ জানুয়ারি, শপথ নিচ্ছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে বিদায় হবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। নানা নাটকীয়তার পরও শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে নিজেকে বহাল রাখতে পারছেন না ট্রাম্প। ক্ষমতা ছেড়ে চলে যেতেই হচ্ছে।

তবে বিদায়ের আগেও ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডানা ছাঁটতে তৎপর ডোনাল্ডের ট্রাম্পের অন্যতম সহযোগী মাইক পম্পেও। মুখ বুজে মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে রাজী হননি ট্রাম্পের অনুগত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান সেনাপতি মাইক পম্পেও।

শেষ দিনগুলোতে পররাষ্ট্রনীতিতে এমন কিছু মৌলিক সিদ্ধান্ত তিনি দিয়েছেন যা জো বাইডেনকে নিশ্চিতভাবে ভোগাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বাইডেন মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি গত চার বছরে বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব, প্রভাব ক্ষুণ্ণ করেছে এবং আমেরিকাকে তার মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।

বিগত মাসগুলোতে জো বাইডেন বারবার করে বলেছেন, বিশ্বের আমেরিকার ‘মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব’ প্রতিষ্ঠাই হবে তার পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্য। এমন লোকজনকে তিনি তার পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন যারা ‘একলা-চলো’ নীতির বদলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী।

কিন্তু ক্ষমতার একসময়ে শেষ সময়ে চীন, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত মাইক পম্পেও দিয়েছেন যার পরিণতি জো বাইডেনকে ভোগ করতে হবে।

গত ১০দিনে পম্পেওর গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত-

# চীনের স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে তাইওয়ানের সাথে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ রাখার যে নীতি যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে চীন।

# ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন যা নিয়ে জাতিসংঘ এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ ত্রাণ সংস্থার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে বলা হয়েছে এই সিদ্ধান্তে ইয়েমেনে মানবিক দুর্যোগ ভয়াবহ রূপ নেবে।

# যে দেশটির সাথে সম্পর্ক ভালো করতে জো বাইডেন বিশেষভাবে ইচ্ছুক, সেই কিউবাকে হঠাৎ করে সন্ত্রাসে মদতদাতা রাষ্ট্রের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।

# ইরানে এখন আল কায়দা তাদের প্রধান ঘাঁটি তৈরি করেছে এই অভিযোগ তুলে পম্পেও বেশ কিছু সিনিয়র ইরানি নেতা এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন। জানা গেছে, এমনকি আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির নিয়ন্ত্রিত কিছু প্রতিষ্ঠানকেও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

চীনের সাথে বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসার কোনো ইচ্ছা জো বাইডেনের না থাকলেও, তিনি চীনের সাথে সম্পর্কে সুর বদলাতে আগ্রহী। ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তিতে ফেরা তার অন্যতম লক্ষ্য। ইয়েমেনের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনে সৌদি আরবের ওপর চাপ তৈরির জন্য ডেমোক্র্যাটদের বামপন্থী অংশের ভেতর থেকে বড় ধরনের চাপ রয়েছে তার ওপর। কিউবার সাথে বৈরিতা দূর করার ব্যক্তিগত ইচ্ছা রয়েছে জো বাইডেনের। কিন্তু বেছে বেছে মাইক পম্পেও শেষ বেলায় ঠিক ওই জায়গাগুলোতে হাত দিয়েছেন।

শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষান্ত হননি পম্পেও, গত কদিন ধরে তিনি এমন সব বিবৃতি দিচ্ছেন যার প্রধান বক্তব্য – ডেমোক্র্যটরা আগেও তাদের বিদেশ নীতিতে আমেরিকার স্বার্থ দেখেনি, এবারও দেখবে না। যেমন, ওবামা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির পুরনো একটি ভিডিও তিনি টুইটারে পোস্ট করেছেন যেখানে মি. কেরি বলছেন যে ফিলিস্তিন নিয়ে ছাড় না দিলে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবেনা। ঐ ভিডিও পোস্টের সাথে মি পম্পেও লিখেছেন, ‘এই মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞকে চিনে রাখুন! তিনি যেটা হবেনা বলেছিলেন, আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।’

গত সপ্তাহে পম্পেও তার আরেক টুইটে বলেন, ‘জাতিসংঘে সবচেয়ে বেশি তহবিলের যোগানদাতা হিসাবে আমি মার্কিন করদাতা এবং আমেরিকার স্বার্থ দেখেছি।’

টুইটের সাথে একটি ছবি তিনি পোস্ট করেন যে ছবিতে বারাক ওবামা, তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুজান রাইস এবং জাতিসংঘে তৎকালীন মার্কিন সামান্থা পাওয়ার রয়েছেন। জো বাইডেনের সরকারেও সুজান রাইস এবং সামান্থা পাওয়ার জায়গা পেয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিদেশ নীতি নিয়ে ট্রাম্প সরকারের শেষ মুহূর্তের এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে কী করতে পারেন জো বাইডেন? তার সামনে বিকল্প কী? বাইডেনের উপদেষ্টা শিবির থেকে বলা হচ্ছে পম্পেওর এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত এবং সহজেই এগুলো উল্টে দেওয়া সম্ভব।

বারাক ওবামা সরকারের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা বিভাগে উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করতেন শীর্ষ আইনজীবী অ্যাডাম স্মিথ। তাকে উদ্ধৃত করে লন্ডনের ফাইনানসিয়াল টাইমস পত্রিকা লিখেছে আইনগতভাবে পম্পেওর এসব নির্দেশনা সবই উল্টে দেওয়া সম্ভব কারণ এগুলো, তার মতে, নির্বাহী আদেশ যা প্রেসিডেন্ট পাল্টে দিতে পারেন।

তবে তিনি বলেন, বাতিল করার আগে এসব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে হবে যে কাজে অনেক সময় লাগতে পারে। শুধু যে কালক্ষেপণ হবে তাই নয়, এগুলো বদলাতে গেলে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হতে পারেন জো বাইডেন।

নভেম্বরের নির্বাচনে বাইডেন ফ্লোরিডায় কিউবান-অমেরিকানদের সমর্থন তেমন পাননি। ফলে, কিউবার ওপর বসানো ‘সন্ত্রাসে মদতদাতার’ তকমা ওঠাতে তাকে দশবার ভাবতে হবে। তাইওয়ানের সাথে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্ত পুনঃ:স্থাপনের সিদ্ধান্ত বদলানোর ক্ষেত্রেও একইরকম দ্বিধায় পড়তে পারেন তিনি। কারণ চীনকে শায়েস্তা করার ইস্যুতে কংগ্রেসে দুই দলের মধ্যে এক ধরণের ঐক্যমত্য রয়েছে।

সাহস করে মাইক পম্পেওর শেষ মুহূর্তের এসব সিদ্ধান্তের কিছুটা হলেও হয়তো বাইডেন উল্টে দিতে পারবেন বা দেবেন, কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন আস্থার সঙ্কটই হবে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে তার সবচেয়ে বড় সমস্যা। ইরান এবং অন্য দেশগুলো বাইডেনের সাথে নতুন কোনো চুক্তি করতে এখন দুবার ভাববে কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখিয়েছেন কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তিও রাতারাতি উল্টে ফেলা যায়

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone