বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » স্কুল-কলেজ এখনও না খোলার পেছনে যা বিবেচনায় রাখছে সরকার

স্কুল-কলেজ এখনও না খোলার পেছনে যা বিবেচনায় রাখছে সরকার 

135258_bangladesh_pratidin_pics

সরকার করোনাভাইরাস মহামারির পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশজুড়ে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার সাংবাদিকদের সাথে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি তো বাড়াতে হবে, তারিখটা আপনাদের জানিয়ে দেব”।

এর আগে কওমী মাদ্রাসা ছাড়া সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিজনিত ছুটি ৩রা অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিলো। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ই মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি রয়েছে।

মহামারির কারণে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা নেয়া হবে না বলে ইতোমধ্যেই সরকার ঘোষণা করেছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে চারটি শর্ত দিয়ে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালনায় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলা হলেও সরকার ইতোমধ্যেই অফিস-আদালত এবং সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড খুলে দিয়েছে। অন্যদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের হারও আগের তুলনায় অনেক কমেছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া রিপোর্টে বলা হচ্ছে।

বুধবারই স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১০ দশমিক ৭১ শতাংশের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যদিও জুন-জুলাই মাস নাগাদ এই শনাক্তের হার প্রায় ২৫ শতাংশে উঠেছিল। অর্থাৎ তখন প্রতি চারজনের পরীক্ষায় একজন নতুন রোগী শনাক্ত হতো। কিন্তু বর্তমান হার অনুযায়ী, প্রতি ১০ জনের পরীক্ষায় একজন নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না কেন?
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অন্য সবকিছুকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নেয়ার সরকারি প্রচেষ্টা দেখা গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সরকার।

কর্মকর্তারা বলছেন যে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কথায়, এই মুহূর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি নেই – ‘ছুটি বাড়ছে, বাড়াতে হবেই’।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার পেছনে কর্মকর্তারা বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করছেন বলে জানা যাচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:

১. সংক্রমণের হার কমলেও এখনো রোগী পাওয়া গেছে

২. শীতের সময়ে করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের শঙ্কা আছে

৩. শিশুরা আক্রান্ত হলে দায় কেউ নেবে না

৪. অভিভাবকদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক আছে

৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা সম্ভব হবে তা পরিষ্কার নয়

৬. অনেক দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে আবার বন্ধ করতে হয়েছে

৭. অনেক দেশে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে

তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা বা না খোলা নিয়ে নানা ধরণের মত আছে বাংলাদেশে – যদিও এগুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য কোনো মহল থেকে আসেনি। আবার সমাধান সম্পর্কে কোনো মতামত না আসলেও মার্চ থেকে এগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি নিয়ে উদ্বেগ আছে অনেকের মধ্যে।

বাকেরগঞ্জের একজন শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলছেন, “আপনি এখানে আসলে দেখবেন যে মনে হবে করোনা বলে আসলে কিছু নেই। বাজার, রাস্তাঘাট সব মানুষে গিজগিজ করে। কিন্তু আবার স্কুলের কথা যখন চিন্তা করি, তখন ভাবি এতো ছোটো ছোটো বাচ্চারা আসবে, যদি কোন সমস্যা হয়ে যায়, তখন কী হবে”।

এর আগে অগাস্টের শেষ দিকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বলেছিলো যে এখনও স্কুল খুলে দেয়ার মতো অবস্থা আসেনি। কমিটির এক সভায়, যেখানে শিক্ষামন্ত্রীও যোগ দিয়েছিলেন, তাতে স্কুল না খোলার পক্ষে কয়েকটি যুক্তি দেয়া হয়েছিলো:

•বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত রাখা যাবে না

•পরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়বে

•শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে শিশুদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অভিভাবকরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন

•বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে শিশুদের মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমেশন সিনড্রোম বা এমআইএস নামক জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক ও শিশুমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

•মৃদু সংক্রমণের কারণেও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য

•উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা একটি মাসব্যাপী দীর্ঘ কার্যক্রম যা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জড়িত করে। ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে।

বিশেষজ্ঞ যা বলছেন:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বেনজীর আহমেদ বলছেন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার অন্তত ৩/৪ মাস আগে থেকে এ সম্পর্কিত একটি গাইডলাইন চূড়ান্ত করা দরকার, যা এখনো করা যায়নি।

“শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতেও হবে আবার সংক্রমণ যাতে না হয় সেটিও দেখতে হবে। কিছুদিন পর পর তারিখ বাড়ালে, খোলা বা বন্ধ করা নিয়ে শিশুদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হয়। এখানে সবাইকে আশ্বস্ত করেই স্কুল কলেজ খুলতে হবে,” বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থার অ্যাসেসমেন্ট নেই, অর্থাৎ যা রিপোর্ট হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত হয়। কোথায় কতটুকু সংক্রমণ, শহর বা গ্রামে কেমন, এগুলো বিশ্লেষণ করে ম্যাপিং করলে বোঝা যেতো যে দেশজুড়ে ঝুঁকি কতটুকু বা স্কুল কলেজ খোলা ঠিক হবে কি-না।

বেনজীর আহমে বলেন, স্কুল খোলার আগে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা গাইডলাইন দরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের জন্য এই গাইডলাইন হবে আলাদা। মনে রাখতে হবে যে প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের জন্য যে ব্যবস্থাপনা, সেটি নিশ্চয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে না।

“প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ টিম করা উচিত আগে, যারা গাইডলাইন অনুযায়ী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি নিবে। একটা ফিজিক্যাল সুবিধা, যেমন শিশুরা কিভাবে আসবে, স্কুলে প্রবেশের সময় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা কিংবা তাদের বসার ব্যবস্থা সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী চূড়ান্ত করতে হবে”।

বেনজির আহমেদ আরও বলেন, প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিতে হবে গাইডলাইনে অর্থাৎ নির্ধারিত টিম শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন করতে হবে।

“এগুলো করতে পারলে শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু প্রতিষ্ঠানে মহড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সংক্রমণ প্রতিরোধে পুরোপুরি সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। আবার এতে বুঝা যেতো যে ঘাটতি কোথায়। সরকারের পক্ষেও বুঝা সহজ হতো যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সময় হয়েছে কি-না”।

আবার আস্থা অর্জনের জন্য অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে চাইলে সরকার সংলাপও ডাকতে পারে, যাতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার একটি গ্রহণযোগ্য পরিবেশ তৈরি হতে পারে, বলছিলেন তিনি।

বিশ্বের অনেক দেশেই তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে, তাহলে বাংলাদেশে সমস্যা কোথায়? – এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, একেক দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মতো আর্থ সামাজিক পরিস্থিতিও আলাদা।

“অনেকে খুলেছে আবার বন্ধও করেছে। অনেক চালু রেখেছে কিন্তু সংক্রমণও বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতির সাথে সেসব দেশের মিল কম। এখানে সংক্রমণের প্রকৃত তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না। এতদিনেও সংক্রমণের আলাদা ম্যাপিং করা যায়নি। শহর বা গ্রাম কোথায় আসলে কি অবস্থা, তা কেউ নিশ্চিত নয়। যা রিপোর্ট হচ্ছে তার ভিত্তিতেই এখানে সব কথা হচ্ছে”।

তাই অন্য দেশের সাথে মিলিয়ে এখানে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone