বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » জাতীয় » পদ্মা সেতুতে পাথর সাপ্লাইয়ের কথা বলে অনেককে পথে বসান সাহেদ

পদ্মা সেতুতে পাথর সাপ্লাইয়ের কথা বলে অনেককে পথে বসান সাহেদ 

181024_bangladesh_pratidin_shahed-karim

কভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে মহাজালিয়াতির অন্যতম হোতা রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ আসলেই কোথায়। করোনা জালিয়াতিসহ নানা দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচিত হলেও পাঁচ দিনেও তার হদিস পায়নি র‌্যাব-পুলিশসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। জল, স্থল এবং দেশের সবকটি বিমানবন্দরে সাহেদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাঠানোর পর তিনি গ্রেফতার না হওয়ায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। অনেকেরই ধারণা, সাহেদ হয়তো এরই মধ্যে সীমান্ত পার হয়ে গেছেন। অন্যদিকে কেবল এমএলএম কিংবা করোনা জালিয়াতি নয়, প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি পদ্মা সেতুতে পাথর সাপ্লাই দেওয়ার কথা বলে অনেককে পথে বসিয়েছেন সাহেদ। তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হওয়া তিনটি মামলার সন্ধান পেয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র বলছে, উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের দিনই সটকে পড়েন সাহেদ। দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান নিয়েও ভাবনায় পড়ে যান আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। এ সুযোগে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালানোর আগেই সংবাদ সম্মেলন করেন সাহেদ। তবে সর্বশেষ রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর রাতেই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এর মধ্যে তিনি বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। অতীতে অপকর্মের সুযোগ দিয়ে তার কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিলেও সেই রাতে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেন। সব শেষ সাহেদ চলে যান নরসিংদীতে তার এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে। তবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সেখানে যাওয়ার আগে স্থান ত্যাগ করে পুনরায় রাজধানীর গুলশানে এক আত্মীয়ের বাসায় চলে আসেন সাহেদ। ওই আত্মীয় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাকে বেশি সময় অবস্থান করতে দেননি। ধূর্ত সাহেদ তখন চলে যান কুমিল্লায় এক পরিচিতজনের কাছে। বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করে সেখান থেকেও অন্যত্র চলে যান তিনি। যেসব জায়গায় সাহেদ অবস্থান করেছিলেন তাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। সূত্র আরও বলেছে, সাহেদের ঘনিষ্ঠজনদের অন্যতম তারেক শিবলীর কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে গিয়ে দ্বিতীয় তলার কিচেন রুম থেকে কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের বিভিন্ন ভাঙা অংশ ও অনেকগুলো পাসপোর্ট উদ্ধার করে র‌্যাব। অন্য একটি কক্ষ থেকে সাহেদ ও তার প্রয়াত বাবা সিরাজুল করিমের পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়। অভিযানের আগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের তৎপরতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এসব হার্ডডিস্ক নষ্ট করার চেষ্টা করে সাহেদ গং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে এখানে এসেছি। পরে এ বিষয়ে জানানো হবে।’

পাথর জালিয়াতিতেও সাহেদ : গত বছর থেকে সাহেদ পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহ করার কথা বলে বড় ধরনের টার্গেটে নামেন। প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে প্রথমে বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্যে পাথর কিনে ধুন্ধুমার কান্ডে বিমোহিত করে ফেলেন পাথর ব্যবসায়ীদের। ভুক্তভোগীরা রিজেন্ট হাসপাতালের অফিসে এসে বিভিন্ন প্রভাবশালীর সঙ্গে সাহেদের ছবি দেখে বিশ্বাস খুঁজে পেতেন। পাথর ব্যবসায়ীরা একের পর এক পাথর পাঠাতে থাকেন সাহেদের ঠিকানায়। ওই পাথরই বাজার মূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি করে দিতেন সাহেদ। তবে কিছু দিন পার হওয়ার পরই তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। একের পর এক চেক বাউন্স হতে থাকে। ভুক্তভোগীদেরই একজন সিলেটের জৈন্তা এলাকার মাওলা স্টোন ক্রাশারের মালিক হাজী শামসুল মাওলা। তিনি গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই, আমাদের সে (সাহেদ) পরিচয় দিছে প্রধানমন্ত্রীর পিএস। তার অফিসেও আমি দেখছি প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবি। তার কথা বিশ্বাস না কইরা উপায় আছে? ৩০ লাখ টাকার পাথর আমি পাঠায়া দেই। তবে তার (সাহেদ) প্রতিটা চেক বাউন্স হয়। পরে উত্তরা থানায় জিডি এবং সিলেট আদালতে আমি মামলা করি। আমার মতো সিলেটের আমিন এবং আকদ্দসও সাহেদের প্রতারণার শিকার। সাহেদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে পারভেজ ও নাসির যোগাযোগ করত।’ র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, সাহেদকে গ্রেফতার করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় বাদী হয়ে মামলা করে র‌্যাব। মামলায় হাসপাতালের মালিক সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান আসামিসহ ৯ জন আসামি পলাতক। আসামিরা হলেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ, রিজেন্ট হাসপাতালের কর্মী তরিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ খান জুয়েল, মো. শিমুল পারভেজ, দীপায়ন বসু, আইটি কর্মকর্তা মাহবুব, সৈকত, পলাশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব (১), হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব (২), হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, অভ্যর্থনাকারী কামরুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক মো. রাকিবুল ইসলাম, মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, গাড়িচালক আবদুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশিদ খান।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই চুক্তির আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে চিনতেন না, পরিচয় থাকা তো দূরের কথা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মার্চ মাসে যখন কোনো হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি নিচ্ছিল না, তখন রিজেন্ট হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড হিসেবে চুক্তি করার আগ্রহ প্রকাশ করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে, রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি গ্রুপের প্রতারণা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়। এতে বলা হয়, রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিমের প্রতারণার খবর বেরিয়েছে, কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতর তার বিষয়ে আগে অবহিত ছিল না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রোগী ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এর আগে ক্লিনিক দুটি পরিদর্শন করে চিকিৎসার পরিবেশ উপযুক্ত দেখতে পেলেও তার লাইসেন্স নবায়ন ছিল না। লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্টের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয় গত ২১ মার্চ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোয়েন্দা ও অন্যান্য সূত্রে রিজেন্ট হাসপাতাল নিয়ে তাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। এর ভিত্তিতে গত ৬ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে র‌্যাব অভিযান চালায়। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে অধিদফতরের সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে অধিদফতরের অবস্থান ‘পরিষ্কার’ এবং একটি ‘ভালো কাজ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতারিত হয়েছে’ বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এ কারণে ৭ জুলাই হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone