বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বুধবার, মে ৮, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » বিনোদন » ‘এ দেশে গান করে কী হবে!’

‘এ দেশে গান করে কী হবে!’ 

ঢাকা ও চট্টগ্রামেবাচ্চু প্রথম পরপর দুটি গিটার শো করলেন শোগুলো সফলও হয়েছিল এরপর হঠাৎ গিটার বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত!

অনেক কষ্টে গিটার নিয়ে দুটি শো করেছি। এটা করতে গিয়ে আমি, এলআরবির শামীম ও উইজার্ড শোবিজ আর্থিকভাবে বেশ চাপে পড়েছি। প্রথমটাতে তো কোনো পৃষ্ঠপোষক ছিল না। দ্বিতীয়টাতে আমরা ইয়োন্ডার মিউজিক থেকে কিছুটা সহযোগিতা পাই। এটা ঠিক, দুটি শোতে সংগীতপ্রেমীরা ছিলেন। চার ঘণ্টার সেই অনুষ্ঠান দারুণ আনন্দ নিয়ে উপভোগ করেছেন সবাই। তবে গিটার বিক্রির সিদ্ধান্ত ভিন্ন কারণে।

সেটা কী?

কনসার্টে গানের পাশাপাশি গিটার বাজানোর সময় তরুণদের উন্মাদনা আমাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করত। আমার আবার গিটার সংগ্রহ করার শখও ছিল। ২০০৫ সালে ভাবলাম, গিটার বাজাতে আগ্রহী দেশের তরুণদের নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা করব। সেখানে তারা আমার সঙ্গে গিটার বাজাবে। সবচেয়ে ভালো যে বাজাতে পারবে, তাকে আমি সেই গিটারটা দিয়ে দেব। ১৬ থেকে ২৬ বছর বয়সী তরুণদের অংশগ্রহণে এমন একটি অনুষ্ঠানের ভাবনা নিয়ে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য এক যুগ ধরে দেশের বহু প্রতিষ্ঠানের কাছে ধরনা দিয়েছি। সবাই আমাকে আশ্বাস দিত, কিন্তু দু-তিন মাস পর অনাগ্রহ দেখাত। এমন একটি উদ্যোগে তাদের অনাগ্রহে আমি বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। এরই প্রতিবাদ হিসেবে গিটারগুলো বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গিটার সংগ্রহ করতেন কীভাবে?

গান গাইতে অনেক দেশে গিয়েছি। যেখানেই যেতাম, সেখানকার গিটার সেন্টারে সময় কাটানো একমাত্র আনন্দ। গান গেয়ে যে পারিশ্রমিক পেতাম, তার একটা অংশ দিয়ে গিটার সংগ্রহ করতাম। এটা আমার শখ। এখন আমার সংগ্রহে অনেক গিটার, এতগুলো সংরক্ষণ করাও কঠিন। তাই তরুণদের হাতে সেগুলো তুলে দিতে চাই। তবে আমি যেগুলো দিয়ে এখন পারফর্ম করি, সেগুলো আমার কাছেই থাকছে।

যে পাঁচটি গিটার ছাড়ছেন, সেগুলোর সঙ্গে স্মৃতি আছে কোনো?

গিটারগুলোর সঙ্গে অনেক স্মৃতি। এই পাঁচটি গিটার দিয়ে প্রচুর পারফর্ম করেছি। আরনিবল মিউজিকম্যান এক্সিস গিটার দিয়ে যে গানগুলো তৈরি করেছি, তার মধ্যে আছে ‘লোকজন কমে গেছে’, ‘নীল বেদনা’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘রাতের তারা’ ও স্বপ্ন অ্যালবামের বেশির ভাগ গান। শো করেছি প্রচুর। এই গিটার দিয়ে প্রথম শো করেছি নিউইয়র্কের ইয়র্ক কলেজে। পরেরটা ছিল ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে। কারভিন গিটার দিয়ে ঢাকায় ও ভারতে অনেক শো করেছি। করেছি ‘সাবিত্রী রায়’, ‘অনিমেষ’ গানগুলো। কারভিন জেবি গিটারটি টেলিভিশনের সরাসরি অনুষ্ঠানে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। কানাডা সফরে শারভেল বাজিয়েছি। ‘স্পর্শ’গানটা এই গিটারে তৈরি। আরনিবল মিউজিকম্যান জেপি প্রচুর গানে ব্যবহৃত হয়েছে। পিংক ফ্লয়েড ট্রিবিউট শো করেছি এই গিটার দিয়ে।

গিটারগুলো আসলেই অনেক স্মৃতি বহন করছে বিক্রির সিদ্ধান্তে কষ্টও নিশ্চয় হচ্ছে অনেক…

সারা জীবন তো এসব গিটার আমার কাছে রেখে দিতে পারব না। বিশাল সংগ্রহ থেকে অন্তত কিছু গিটার যদি প্রতিভাবান তরুণদের কাছে দিয়ে যেতে পারি, সেটাই অনেক বেশি আনন্দের হবে। ফেসবুকে গিটার বিক্রির খবরটি দেওয়ার পর অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে ফোন করেছেন। অনেকেরই ভাষ্য এমন ছিল, বাচ্চু ভাই, আপনি যে পরিকল্পনা করেছেন, তা আয়োজন করতে কত টাকা লাগবে? আমি বলেছি, বিদেশ থেকে একজন শিল্পী আনতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তার চার ভাগের এক ভাগ হলেই হবে। ভাবুন, তারপরও যদি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়া যায়, তাহলে এ দেশে গান করে কী হবে! তিন যুগ ধরে তাহলে কী করলাম!

দর্শকের ভালোবাসা তো পেয়েছেন

একদমই তা-ই। আমাদের দেশের শ্রোতারা অসম্ভব ভালো। তাঁদের কারণেই গান করা। নইলে কবেই গান ছেড়ে দিতে হতো! রোদে দাঁড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, কনকনে শীত উপেক্ষা করে গান শুনতে আসেন শ্রোতারা। এই শ্রোতাদের জন্য আমি মরে যেতে রাজি আছি। শ্রোতাদের জন্য আরেকটু বড় পরিসরে কিছু করার যে স্বপ্ন দেখি, তা তো শিল্পীর পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। আজ ক্রিকেট যদি পৃষ্ঠপোষকতা না পেত, তাহলে কি ক্রিকেট এতদূর আসতে পারত? তেমনি সংগীতেরও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। না হলে সামনে অবস্থা আরও খারাপ হবে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone