ছাদেই সবুজ পৃথিবী
গাছ, প্রকৃতি আর মানুষ, এরা সবাই যেন ঠিক একইসূত্রে গাঁথা। একটু ফিরে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায় আমরা পরস্পরের ওপরে ঠিক কতটা নির্ভর করে আছি। হাজার বছর ধরে বয়ে চলা এই নিবিড় সম্পর্ক কি আর কয়েক লাইনে বলে ফেলা যায়? যায় না। তবুও আমরা চেষ্টা করি। দিন শেষে ফিরে যাই এই প্রকৃতির কাছেই। কর্মব্যস্ত দিন শেষে এক মুঠো নিরাপদ খাবার নিজের আর সন্তানের মুখে তুলে দিয়ে আমরা পেতে চাই একটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাস। কিন্ত তার কতখানিই বা পাওয়া যায়?
এমন এক সমাজে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বড় করে তুলছি, যদি তারা কখনো আমাদের জিজ্ঞেস করে, আমরা কি করে জেনে শুনে তাদের মুখে বিষ তুলে দিয়েছিলাম, কী জবাব দেবো? নিজের ভেতর যখন এসব প্রশ্ন কুঁড়ে কুঁড়ে শেষ করে দিচ্ছিল, কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না, ঠিক তখনই আমার পরিচয় হয় ঠিক আমার মতনই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ানো আরেক উদ্যমী নারী উদ্যোক্তা আর সংগঠক আশনার সাথে। আমি জানতে পারলাম এই শহরেই আমার মতো এমন উৎসাহী আর উৎসুক মানুষদের সাথে নিয়ে এক সবুজ বিপ্লবের জাল বুনছে সে।
উদ্যমী এক দল তরুণ সাথে নিয়ে আশনা গঠন করেছে ‘প্রাকৃতি’, যারা আগামী প্রজন্মের কাছে বিষ ও ভেজালমুক্ত, শতভাগ নিরাপদ আর নিজেরা ফলানো অরগানিক খাবারের যোগান নিশ্চিত করতে চায়। আর এই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে তারা শহরের পড়ে থাকা বাড়ির ছাদ, বেলকনি, লন, এমন সব জায়গাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে চায় শহুরে ছাদ কৃষকদের এবং সচেতন ক্রেতাগোষ্ঠীর এক সুবিশাল সমন্বিত নেটওয়ার্ক, যাতে ভোক্তা সহজেই নিজেদের দোরগোঁড়ায় বিষমুক্ত, ভেজালবিহীন এবং অরগানিক খাদ্য পেতে পারে। ব্যাস, মনে হল, আরে আমি তো এমন কিছুই খুঁজছি। শুনে সাথে সাথেই তাদের একজন হয়ে গেলাম।
প্রাথমিক ভাবে সব জোগাড় ওরাই করে দিল। ভালো মাটি, জৈব সার, কিভাবে কি কি লাগাবো, যত্ন কিভাবে নেবো, কোন সমস্যা কিভাবে সামলাবো এ ব্যাপারে এক ছোটখাট প্রশিক্ষণ হয়ে গেল। মজার ব্যাপার হলো কী জানেন? আমি প্রাকৃতি’ র সংস্পর্শে না এলে জানতামই না যে, ফেলনা কিছু দিয়ে এত সুন্দর গাছ লাগানোর পাত্র বানানো যেতে পারে।
শুরুতে খুব ভাবনায় পড়লাম। ভেবেছিলাম, আমি কি পারব? ‘প্রাকৃতি’ আমাকে সাহস দিল। আমি শুরু করলাম। আর এখন? হ্যাঁ, আমি পেরেছি। এতগুলো সংগঠন আর কর্মব্যস্ততা সামলে যখন নিজের লাগানো গাছের কাছে আসি, মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। এই গাছ, গাছের ফল আমার পরম যত্নে বেড়ে ওঠা সন্তানের মতন। আমি আর আমার পরিবার এই বিষমুক্ত, অরগানিক খাবার খেয়ে স্বস্তি পাই। আমি ‘প্রাকৃতি’র কাছে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি, ফিরে গেছি প্রকৃতির কাছে। আপনি একবার চেষ্টা করেই দেখুন না!