ঢাকার আকাশে উড়বে দেশীয় ড্রোন
এইদেশ এইসময়, ঢাকা : গোয়েন্দা নজরদারির কাজে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) ব্যবহারের কথা এখন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোচিত। অনেকক্ষেত্রে এটি সমালোচিতও। তবে বাংলাদেশে সেটি ব্যবহার করা হবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা রাস্তায় যানজট পরিস্থিতির চিত্র তুলে আনতে।
প্রয়োজনীয় নজরদারি ও সড়ক ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য এবার বাংলাদেশের পুলিশও ড্রোন ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) যুক্ত হচ্ছে চারটি কপ্টার ড্রোন (চালকবিহীন ছোট হেলিকপ্টার)। কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত এসব ড্রোনে যুক্ত থাকবে টেলিলেন্সযুক্ত একাধিক ক্যামেরা। এগুলো টানা ৫-৬ ঘণ্টা আকাশে উড়তে পারবে। ড্রোনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে নির্দিষ্ট কন্ট্রোল সেন্টার থেকে।
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশের চার যুবকের উদ্ভাবিত কোয়ার্ট কপ্টার ড্রোন দিয়ে ডিএমপি সদর দপ্তরে পরীক্ষামূলক মহড়া দেওয়া হয়। ডিএমপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সব কিছু ঠিক থাকলে শিঘ্রই ডিএমপিতে এ কপ্টার ড্রোন যুক্ত হবে।
অ্যারো রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ-এর চার মেধাবী তরুণ খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর আব্দুল্লাহ আল মামুন, বুয়েট থেকে পাস করা স্থপতি খায়রুজ্জামান বিপ্লব, ড. শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া ও অ্যারোনটিক্স এক্সপার্ট আজিজুল ইসলাম দুই বছর ধরে চেষ্টা করে পরীক্ষামূলকভাবে এই কোয়ার্ট কপ্টার ড্রোনটি তৈরি করেছেন। মহড়ায় ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের পুলিশ প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেন পিছিয়ে থাকব। ইতোমধ্যে নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশে অনেক টেকনোলজিক্যাল ইকুইপমেন্ট যুক্ত করেছি। কিছুদিন আগে মোবাইল কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার যুক্ত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আমরা ডিএমপিতে চারটি ড্রোন যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
তিনি আরো বলেন, স্থলপথে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা আমাদের পুলিশের রয়েছে। আকাশপথে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে আমরা নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করার চিন্তাভাবনা করছি। এ লক্ষ্যে ড্রোন কেনা হবে। দেশের চার যুবকের পরীক্ষামূলকভাবে ড্রোন তৈরির কথা জানতে পেরে আমরা তাদের ডেকে নিয়ে আসি। তাদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। তারা সার্ভিলেন্সের জন্য উপযোগী করে ড্রোন তৈরির জন্য গবেষণা করছে। যদি দেশীয়ভাবে এটি নির্মাণ করা যায়, তাহলে খরচ অনেক কমে যাবে। দেশীয় প্রযুক্তি আন্তর্জাতিকমানের হলে দেশীয়টাই আমরা কিনব।
ডিএমপি এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দাঙ্গা-হাঙ্গামার স্থানে সড়ক ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে যথাসময়ে পৌঁছানো অনেক সময় সম্ভব হয় না। দেশের কোথাও বড় ধরনের কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও দুর্যোগ হলে ছবি তুলতে এই ড্রোন ব্যবহার করা হবে। এছাড়া, বড় জনসভায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ড্রোন ব্যবহার করে উপর থেকে চিত্র নেওয়া হবে। যাতে জনসভায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই সহজেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এবং ছবি দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়।
তরুণ বিজ্ঞানী খায়রুজ্জামান বিপ্লব বলেন, আমাদের নিজস্ব তৈরি ড্রোন কোনো এক জায়গায় অন্তত পাঁচ মিনিট স্থির হয়ে থাকতে পারে। রিমোট কন্ট্রোল ছাড়াও অটোনোমাস সিস্টেমে এই ড্রোন কন্ট্রোল করা সম্ভব। আর্থিক সহযোগিতা পেলে দেশে আরও উন্নত ড্রোন তৈরি করা সম্ভব। ৫০ তলা ভবনের সমান উচ্চতায় এই ড্রোন কাজ করতে পারবে।
আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই ড্রোনের নাম বাংলা ড্রোন। গবেষণা করলে আরও ভালো মানের ড্রোন দেশে তৈরি করা সম্ভব। লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারির সাহায্যে এই ড্রোন চলবে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশ ড্রোন ব্যবহার করে বোমা হামলা করছে। আমাদের তৈরি `বাংলা ড্রোন` যে কোনো জনসভা বা এলাকার ছবি তুলতে পারবে। ক্ষেত্রবিশেষ এই ড্রোনের আকাশে ওড়ার রেঞ্জ ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।