বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » পর্যটন » ময়মনসিংহের অনন্য স্থাপনাশশী লজ

ময়মনসিংহের অনন্য স্থাপনাশশী লজ 

রোকন উদ্দিনঃ   পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত সবুজ সুন্দর শহর ময়মনসিংহের প্রাণকেন্দ্রে জমিদার আমলের এক অনন্য স্থাপনা রয়েছে। ‘শশী লজ’। হুমায়ূন আহমেদের অয়োময় নাটকটির কথা মনে আছে আপনাদের? সেই যে জমিদার মীর্জা সাহেব আর তার দুই স্ত্রী এলাচী আর লবঙ্গ, মনে আছে আপনাদের? সেই নাটকে যে জমিদার বাড়ি দেখানো হয়েছিলো সেটি এই ‘শশী লজ’। সেই থেকে স্থানীয়ভাবে ‘শশী লজ’ জমিদার বাড়ি হিসেবে পরিচিত হতে থাকে।sosi

ছবি (মোঃ জাফর ইকবাল)

ইতিহাস

মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে নির্মান করেছিলেন এক মনোরম প্রাসাদ ‘ক্রিস্টাল প্যালেস’ যা ‘রংমহল’ নামেও পরিচিত ছিলো। কিন্তু ১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে বিখ্যাত ‘রংমহল’ ধ্বংস হয়ে গেলে সেই স্থানে নির্মান শুরু করেন বাইজেন্টাইন ধাঁচের বর্তমান ভবনটি। ভবনটির নির্মান সম্পন্ন হওয়ার আগেই সূর্যকান্ত আচার্য মত্যুবরণ করেন। নিঃসন্তান সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী ভবনটির নির্মান শেষ করেন ১৯০৫ সালে এবং তাঁর নাম অনুসারে এর নামকরণ করেন ‘শশী লজ’।

বিবরণ:

নয় একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত শশীলজের মূল ফটকে রয়েছে ১৬টি গম্বুজ। সাধারণ বাসভবন ছাড়াও বাড়িটিতে আছে হলঘর, বিশ্রামঘর, নাচঘর, স্নানঘর। সর্বমোট ২৪ টি কক্ষ রয়েছে এই ভবনটিতে। শশীলজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাগান। বাগানের মাঝখানে আছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা, যার মাঝখানে রয়েছে গ্রিক দেবী ভেনাসের স্নানরতা মর্মর মূর্তি। লাল ইট আর হলুদ দেয়ালে নির্মিত শশীলজের পাশেই আছে পদ্মবাগান। শশী লজের ভেতরের বারান্দা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই রঙ্গশালা। সুদৃশ্য সেই রঙ্গশালার এক প্রান্তে বিশ্রামঘর। বিশ্রামঘরের পর কাঠের মেঝেযুক্ত হলঘর। হলঘরের পাশেই মার্বেল পাথরে নির্মিত আরেকটি জলফোয়ারা। মূল ভবনের পেছনভাগে রয়েছে একটি দোতলা স্নানঘর। কথিত আছে এই স্নানঘরে বসে রানী পাশের পুকুরে হাঁসের খেলা দেখতেন। পুকুরটির ঘাট মার্বেল পাথরে বাঁধানো। এছাড়াও অর্ধ গোলাকার খিলান এবং ডরিক স্তম্ভ সম্বলিত প্রধান প্রবেশ পথটি শশী লজের স্থাপত্যিক সৌন্দর্য বাড়তি শোভা যোগ করেছে । বাড়িটিতে বেশ কিছু স্নানঘর রয়েছে। এক স্নানঘরে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। ধারণা করা হয় এই সুড়ঙ্গপথেই গোপনে মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। উল্লেখ্য, মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িতেও এই রকম একটি সুড়ঙ্গপথ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে ‘শশী লজ’কে সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে ঘোষনা করে এবং এখানে একটি জাদুঘর নির্মানের প্রকল্প নেয়া হয়। তবে অদ্যাবধি শশী লজের অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এটি ‘মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষন কেন্দ্র’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone