বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » পর্যটন » ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়াঃ ঘুরে আসুন কুঠিবাড়ি

‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়াঃ ঘুরে আসুন কুঠিবাড়ি 

রোকন উদ্দিনঃ  দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’- কবিগুরুর কবিতার এই লাইনটির যথার্থতা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সমৃদ্ধ জনপদ শাহজাদপুর।  অঞ্চলটি নানা কারণে খ্যাতি অর্জন করলেও এখানকার প্রাচীন ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলো অনেকটাই পর্যটকসহ সংশ্লিষ্ট মহলের চোখের আড়ালে চলে গেছে।  অথচ এগুলো খুব সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে।

kuthi

ছবি( মোঃ জাফর ইকবাল)

 

সিরাজগঞ্জ জেলার শাহ্জাদপুর উপজেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারিবাড়ি, তাড়াশ উপজেলায় বেহুলার বাড়ি, ইসলাম ধর্ম প্রচারে আসা হযরত শাহ মখদুম সাহেব দরগা শরিফ ও বহু গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন মখদুমিয়া জামে মসজিদ, পোতাজিয়ার নবরত্ন মন্দির, ছ’আনি পাড়ার দুই গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, শাহ নূর উদ্দীন ইয়ামেনীর সুদৃশ্য গম্বুজ বিশিষ্ট মাজার, পঞ্চধ্যানী বুদ্ধের দুই গম্বুজ ব্যস্ততম নৌ-বন্দর, ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মিল্ক ভিটার দুগ্ধ উপাদান কেন্দ্র, পেট্রোলিয়াম কোম্পানির ডিপো, পদ্মা সিমেন্ট লিঃ প্রভৃতি। এছাড়াও আছে বেসরকারি পর্যায়ের দুগ্ধজাত নানা সামগ্রীর কারখানা, আছে তাঁতশিল্পও। শাহজাদপুর উপজেলার উত্তরে রয়েছে উল্লাপাড়া ও বেলকুচি উপজেলা দক্ষিণে বো ও সাঁথিয়া উপজেলা, পূর্বে চৌহালী উপজেলা ও উল্লাপাড়া উপজেলা।  প্রধান নদী: যমুনা, হুরাসাগর, করতোয়া, বড়াল ও গোহাল। শাহ্জাদপুর ও আশপাশের কিছু দর্শনীয় স্থানে বেড়ানো নিয়ে আজকের আয়োজন।

সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ও রাজশাহী বিভাগীয় জেলা শহর থেকে প্রায় ১শ’ ৪৫ কিঃ মিঃ পূর্বে শাহ্জাদপুর থানা সদরের দিলরুবা মোড়ের অর্ধ কিলোমিটার পূর্বে শাহ্জাদপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাচারিবাড়ির অবস্থান। জানা যায়, তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহ্জাদপুরের জমিদারী এক সময় নাটোরের রাণী ভবানীর জমিদারীর একটি অংশ ছিল। ১৮৪০ সালে শাহ্জাদপুরের জমিদারী নিলামে উঠলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর মাত্র তের টাকা দশ আনায় এই জমিদারি কিনে নেন। জমিদারির সঙ্গে সঙ্গে শাহ্জাদপুরের কাচারীবাড়িটিও ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

১৮৯০ থেকে ১৮৯৭ পর্যন্ত মাত্র আট বছর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহ্জাদপুরে জমিদারি দেখাশোনার কাজে মাঝে মাঝে আসতেন এবং সাময়িকভাবে বসবাস করতেন। তিনি স্থায়ীভাবে থাকতেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সম্ভবত এ কারণেই শিলাইদহের বাড়িটির নাম কুঠিবাড়ি ও শাহ্জাদপুরের বাড়িটি কাচারিবাড়ি নামে পরিচিত। শাহ্জাদপুরের এ কাচারিবাড়িটি ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ৩১ দরজা বিশিষ্ট একটি দোতলা ভবন। প্রায় দশ বিঘা জমির উপরে ভবনটির দৈর্ঘ্য ২৬ দশমিক ৮৫ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২০ মিটার এবং উচ্চতায় ৮ দশমিক ৭৪ মিটার। ভবনটির প্রতি তলায় সিঁড়িঘর ব্যতীত বিভিন্ন আকারের সাতটি ঘর রয়েছে। ভবনটির উত্তর-দক্ষিণে একই মাপের বারান্দা। বারান্দায় গোলাকৃতি থামের উপরাংশের অলংকরণ, বড়মাপের দরজা, জানালা ও ছাদের উপরের প্যারাপেট দেয়ালে পোড়ামাটির কাজ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ভবনটিতে রবীন্দ্রনাথের জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র এবং এ বাড়িতে ব্যবহৃত আসবাবপত্র নিয়ে রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর করা হয়েছে। ভবনটির পশ্চিমে বকুল গাছের গোড়ায় বৃত্তাবার সান বাঁধান একটি মঞ্চ আছে। এটি ‘রবীন্দ্র মঞ্চ’ বলে পরিচিত। এখানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নিচতলার পশ্চিম দিকের ঘরটিতে ছিল কবির লাইব্রেরী। বর্তমান উত্তর দিকের বারান্দা দিয়ে ঢুকেই প্রথম যে ঘরটি সেখানেই কাচারিবাড়ির লাইব্রেরী। বাড়ির সামনে রয়েছে ফুলের বাগান। পাশে নির্মিত হয়েছে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের অনুরূপ ‘রবীন্দ্র স্মৃতি অডিটরিয়াম’। এতে রয়েছে আধুনিক রীতি সংবলিত ৬শ’ আসনের ব্যবস্থা। শিলাইদহ থেকে শাহ্জাদপুর যাতায়াতের প্রধান উপায় ছিল নৌকা। আর পতিসরেও যাতায়াতের উপায় ছিল ওই একই। পরস্পর দূরে অবস্থিত এ তিনটি জমিদারিতে যোগাযোগের একমাত্র সহজ সূত্র ছিল জনপথ। এ জনপথে যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল জলযান অর্থাৎ নৌকা বা বোট। কাচারিবাড়ি সংলগ্ন রয়েছে শাহ্জাদপুর বাজার। যেখানে সপ্তাহে রোববার ও বুধবার বাজার বসে। এ দুদিন সারা দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন তাঁতে বোনানো বিভিন্ন ধরনের কাপড় কিনতে। এ সময় জাদুঘর দেখার সুযোগটি কেউ হাত ছাড়া করেন না। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দুদিন দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের।

জাদুঘরটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে সোফা, পালকি, ঘুমানোর খাট, চায়ের কেটলি, লনটেনিস খেলার র‌্যাকেট, খড়ম, চিনামাটির জগ, চিনামাটির পানির ফিল্টার, পিয়ানো, শ্বেত পাথরের গোল টেবিল, চিঠি লেখার ডেস্ক, কাঠের পূজা মণ্ডপসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী। সবচেয়ে আকষর্ণীয় বিষয় ১৩০৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র অর্থাৎ প্রায় ১৯০০ সালের লেখা একটি চিঠি জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করেছে। চিঠিটি নওগাঁ থেকে সংগৃহীত। এই চিঠিতে তাঁর পুরো জীবন বৃত্তান্ত পাওয়া যায়। এর উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে, ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে কবি জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তাঁর স্কুল পালানো অভ্যাস ছিল। ১৬ বছর বয়সে ভারতী পত্রিকার মাধ্যমে গদ্য লেখা শুরু। ১৭ বছর বয়সে তাঁর মেজদার সঙ্গে বিলেতে যান। ২৩ বছর বয়সে তিনি মৃণালিণী দেবীকে বিয়ে করেন। বন্ধু চন্দ্রমজুমদারের বিশেষ অনুরোধ কবি বঙ্গদর্শন পত্রিকা সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেছিলেন। তা ৫ বছর চালানোর পর এক বছর তিনি ভারতী পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মখদুম শাহদৌলাহ্ মসজিদ ও দরগাহ
রবীন্দ্রনাথের কাচারিবাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মখ্দুম শাহদৌলাহ্ (রহঃ)’র মসজিদ। প্রাচীন কালের স্থাপত্যকলার একটি নিদর্শন। করতোয়া নদীর পাড়ে এ মসজিদ এলাকাটি মখ্দুম শাহদৌলাহ্  দরগাবাড়ি নামে পরিচিত। এর গঠনপ্রণালী ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে এর বয়সের সময়সীমা সহজেই বোঝা যায়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইট দ্বারা তৈরি ১৫টি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। মসজিদটি সম্মুখভাগসহ ২৮টি পাথরের স্তম্ভের ওপর অবস্থিত। এর মাঝের স্তম্ভটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্তম্ভগুলি কৃষ্ণবর্ণ পাথরে নির্মিত। মাঝের স্তম্ভের পাথরটি লোহিত বর্ণের। প্রচলিত রয়েছে, স্তম্ভটিকে স্পর্শ করলে বন্ধ্যা ও মৃতবৎসা নারীর সুপুত্রলাভ হয়। বহুদিন ধরে জনসাধারণের মধ্যে এ ধরনের বিশ্বাস থাকায় নানাস্থান থেকে হিন্দু ও মুসলমান নারীরা এখানে আসে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৬২ ফুট ৯ ইঞ্চি, প্রস্থ ৪১ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ১৯ ফুট ১০ ইঞ্চি। এর দক্ষিণ দেয়ালের গায়ে একটি খোদাই করা রেখা দেখতে পাওয়া যায়। এর দৈর্ঘ্য ৩০ ইঞ্চি। কথিত আছে, এটি মখ্দুম শাহদৌলাহ্র (রহঃ) হাতের পরিমাপ। মসজিদের একস্থানে সামান্য একটি গর্ত আছে। প্রবাদ আছে পূর্বে এখানে আঘাত করলে সুন্দর আওয়াজ হতো। এর নিম্নভাগ চুনকাম করে বন্ধ করা হয়েছে। মসজিদের ভিতরের পশ্চিম দেয়াল সংলগ্ন ৫ ফুট ২ ইঞ্চি উঁচু ইট নির্মিত একটি বেদী আছে। মসজিদের মধ্যে উজবেকিস্তান দেশিয় অনেক জালালি কবুতর বহুদিন হতে বাস করছে। প্রাঙ্গণের দক্ষিণে পাকা প্রাচীর যুক্ত পুরাতন ঘরে পাশাপাশি মখ্দুম শাহদৌলাহ্ ও তার ভাগ্নে খেজনূর সাহেবের সমাধি রয়েছে।

ইতিহাস বিশ্লেষণে ধারণা করা হয়, ১২৪৫/৪৬ খ্রিষ্টাব্দে আরব দেশের ইয়েমেন প্রদেশের শাহজাদ মখ্দুম শাহদৌলাহ্ শাহজাদপুরে এসেছিলেন। বাংলাদেশের মুসলিম শাসনের শুরুতে প্রায় অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে আরব দেশের ইয়েমেন থেকে মখ্দুম শাহদৌলাহ্ ইসলাম প্রচারার্থে পাবনা জেলার শাহজাদপুরে আস্তানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কথিত আছে, মখ্দুম শাহদৌলাহ্ পিতা হযরত মুয়াজ ইবনে জবল্ আরব দেশের ইয়েমেন প্রদেশের সুলতান ছিলেন। তার দুই পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে বড় শাহাজাদা শাহদৌলাহ্ আধ্যাত্মিকতায় অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। সে স্থানে শাহদৌলাহ্ প্রথম আসেন। সেখানে আসার স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ তার আদেশে একটি মসজিদ বানানো হয়। এটাই বর্তমানে মখ্দুমশাহী বা মখ্দুম সাহেবের মসজিদ নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন ইয়েমেনের শাহাজাদা। এ কারণে প্রতিষ্ঠিত জনপদের নামকরণ হয় শাহজাদপুর।

ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র
শাহজাদপুরের অন্যতম আকর্ষণ বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের দুটি ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্র। করতোয়া ও বড়াল নদীর সংযোগ স্থলে এর অবস্থান। যা দেখলে সত্যি অবাক হবার মত। একটির নাম বিজয়ের আলো-১, অপরটি বিজয়ের আলো-২। দেখতে অনেকটাই জাহাজ আকৃতির। নেই কোন জোরালো আওয়াজ। প্রথমাবস্থায় দেখলে কেউ বুঝতে পারবেনা এটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১৯৬৬ সালে মালয়েশিয়া থেকে আনা হয়েছে বিজয়ের আলো- ১ ও ১৯৯৮ সালের দিকে নিয়ে আসা হয় বিজয়ের আলো-২ ভাসমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তথ্যে জানা যায়, এই কেন্দ্র দুটি থেকে যথাক্রমে ৭১ মেগাওয়াট ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে বাঘাবাড়ির শিল্পগুলো সর্বক্ষণ চালু রাখা সম্ভব হয়।

মিল্ক ভিটার আকর্ষণ
শাহজাদপুরের পরিচিতির আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানকার বাঘাবাড়ির দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্র। বড়াল নদীর পারে অবস্থিত মিল্ক ভিটা নামের এই দুগ্ধ কারখানা দেখে দুগ্ধ চাহিদার বৃহদাংশে পূরণ করে থাকে। এই কারখানাটি সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বাঘাবাড়ির প্রায় আটশ একর জমির চারণভূমিতে বিভিন্ন জাতের গরু বিচরণ করে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, জার্সি, অস্ট্রেলিয়ান, সিন্ধি প্রভৃতি নামের গাভী ও ষাঁড়। বড়ালের পাড়ে বেশ কটি বাগানে এসব গাভী ও ষাঁড়ের বংশ বৃদ্ধি ও দুগ্ধ সংগ্রহের কাজ চলে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এখানে দুগ্ধ সংগ্রহকারী মোট সমিতি রয়েছে ৩৯০টি, সদস্য সংখ্যা ২২ হাজারের বেশি। এখানে বছরে ভাল দুধ সংগৃহিত হয় ৩ কোটি লিটারের বেশি। নেপিয়ার ঘাষ চায় হয় ২ হাজার একরে। এই কারখানায় উৎপাদিত প্যাকেট দুধ ও ঘি রাজধানীতে প্রেরণ করা হয়।

মিল্ক ভিটা ছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রায় সাড়ে আট হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে প্রাপ্ত দুধের সাহায্যে প্যকেটজাত দুধ ছাড়াও ঘি, ছানা, মাখন, দধি প্রভৃতি পাওয়া যায়। এসব পণ্যকে কেন্দ্র করে শাহজাদপুরের বিভিন্ন স্থানে বহু সংখ্যক মিনি কারখানা গড়ে উঠেছে- যা যে কোন কৌতূহলী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারে না।

বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই রয়েছে বিশাল এলাকা নিয়ে নৌ-বন্দর। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই নৌ-বন্দরটি ১৯৮০ সালের দিকে চালু হয়। মূলত উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার সার, জ্বালানি তেল ও সিমেন্ট তৈরীর পিংকার এর চাহিদা মেটানোর জন্য এ বন্দরটি ব্যবহার করা হয় সেই সাথে এ অঞ্চল থেকে ধান, চাল ও পাথর দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করার জন্য এ বন্দর ব্যবহার করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন শতাধিক ছোট্ট ছোট্ট কার্গো জাহাজ এসে ভিড়ে এ নৌ-বন্দরে। এ নৌ-বন্দরকে ঘিরে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। বন্দরে রয়েছে ছোট্ট একটি বাজার।

পেট্রোলিয়াম ডিপো
শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে রয়েছে দেশের অন্যতম পেট্রোলিয়াম ডিপো। এখানে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার বিশাল আকৃতির তিনটি ডিপো। ২০০৭-০৮ সালের তথ্যে দেখা যায়, এই ডিপো থেকে পদ্মা ওয়েল কোম্পানি ৪৪ হাজার মেট্রিক টনের বেশি, যমুনা প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন পেট্রোলিয়াম উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে। তথ্য মতে, উত্তরাঞ্চলের সামগ্রিক চাহিদার শতকরা ৮০ ভাগ ডিজেল, ৯৫ ভাগ পেট্রোল এবং ১০০ ভাগ অকটেন এই ডিপো থেকে সরবরাহ করা হয়।

তাঁত শিল্প
শাহ্জাদপুরের আরেক আকর্ষণ এখানকার তাঁত শিল্প। এখানে তাঁতের সংখ্যা ৪৫ হাজারের বেশি তবে বেসরকারি মতে প্রায় এক লাখ। শাহ্জাদপুর উপজেলার ৩৩০টি গ্রামের মধ্যে দেড় শতাধিক গ্রামেই রয়েছে এই শিল্প। এসব শিল্পে প্রধানত শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা প্রস্তুত করা হয় এবং দেশের বিভিন্ন এলাকার হাটে-বাজারে প্রেরণ করা হয়। একেকটি উন্নতমানের শাড়ি পাঁচ হাজার টাকা এবং লুঙ্গি পাঁচশত টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়।

কীভাবে যাবেন
জেলা শহর থেকে রবীন্দ্র কাচারিবাড়ির দূরুত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ আসা যায় সড়ক ও রেলপথে ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহন (০১১৯৯-১২২৩৪৫), এস আই এন্টার প্রাইজ (০১৭১২-৬৭৮৪৯), গাবতলী থেকে ইউনিক সার্ভিস (০১১৯০-৮০৬৪৭৭) বাস নিয়ে যায় সিরাজগঞ্জ। ভাড়া ২৫০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে সদানন্দপুরে শহীদ মনসুর আলী স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ শহর। ঢাকা থেকে অন্তঃনগর ট্রেন খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো সদানন্দপুর স্টেশনে থামে। ভাড়া ১১০ টাকা থেকে ১২৫ টাকা। বাসে শাহ্জাদপুর স্টেশনে নেমে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাছারিবাড়ি। সিরাজগঞ্জ শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হলো শহরের স্বাধীনতা স্কয়ারে হোটেল আল হামরা (০৭৫১-৬৪৪১১, ০১৭৪৫-৬২৯২৬৪), মুজিব সড়কে হোটেল অনিক (০৭৫১-৬২৪৪২, ০১৭২১-৭১৯২৩৫)।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone