বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » শিল্প-সাহিত্য » মার্কেস, তুমি কি ভালোবাসার জন্যই মারা গেলে : আনিসুল হক

মার্কেস, তুমি কি ভালোবাসার জন্যই মারা গেলে : আনিসুল হক 

image_86970_0

 ডেস্ক রিপোর্ট : ‘তুমি জানো, এই দোকানে মার্কেস এসেছিলেন?’ লস অ্যাঞ্জেলেসের একটা বইয়ের দোকানে মার্কেসের বই খুঁজছিলাম, তরুণ বিক্রয়কর্মী আমাকে গর্বভরে বলছিলেন।

‘কী বলো? এই দোকানে?’ শুনে আমার তো শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

প্রিয় লেখকদের নিয়ে আমার মধ্যে এক ধরনের ছেলেমানুষি আবেগ কাজ করে। হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ শামসুল হক বা নির্মলেন্দু গুণের সামনে গেলে কী রকম যে করতে থাকি! প্রিয় মানুষ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বা মুহম্মদ জাফর ইকবালও নিশ্চয়ই আমার চোখমুখ দিয়ে ঠিকরে বের হয়ে আসা তীব্র ভালোবাসার অভিব্যক্তি টের পান।

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস যে-দোকানে কোনো একদিন এসেছিলেন, সেই দোকানেই আমি দাঁড়িয়ে আছি! কেমন যেন লাগে!

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস (জন্ম মার্চ ৬, ১৯২৭) কেন আমার প্রিয় লেখক, সেটা একটু ভাবতে হচ্ছে। একটা কারণ বোধ হয়, আমার যখন ১৭ বছর বয়স, তখন (১৯৮২ সালে) মার্কেস নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। ওই বয়সটা মানুষের ভালো লাগা মন্দ লাগা স্থির করে দেওয়ার সময়। আমি রংপুর থেকে ঢাকা আসি ১৯৮৪ সালে, বুয়েটে ভর্তি হই, তখন বুয়েটের ছাত্র মোজাম্মেল বাবু আর ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু মিলে একটা শিল্পসাহিত্যের কাগজ বের করতেন স্পর্শ নামে। তারই একটা সংখ্যাকে মার্কেস সংখ্যা হিসেবে বের করার কাজ চলছিল। আমি তাদের সেই চক্রে তখন ভেড়ার চেষ্টা করছি। দিনরাত মার্কেসের বইপত্র, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি চলছে। এমনকি প্লেবয় পত্রিকায় প্রকাশিত মার্কেসের সাক্ষাৎকারও বাদ পড়েনি। তখনই বোধ হয় মার্কেসের জানালায় প্রথম উঁকি দেওয়া। তারপর মধ্যস্থতা করলেন অতি অবশ্যই মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই অনুবাদে হাতে এলো সরলা এরেন্দিরা ও তার নিদয়া ঠাকুমার করুণ কাহিনি, কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না। শুধু তো গল্পের অনুবাদ নয়, সঙ্গে আলোচনা, টীকাটিপ্পনী।

ততক্ষণে জানা হয়ে গেছে এই লেখক কলম্বিয়ার, তিনি ঔপন্যাসিক, তিনি ছোটগল্প লেখক, তিনি চিত্রনাট্যকার এবং তিনি সাংবাদিক। মার্কেস কলাম লিখতেন, বাংলা করলে তার কলামের নাম দাঁড়ায় ‘দিনের পর দিন’। তার রিপোর্টিংয়ের পরিচয় আমরা নিউজ অব এ কিডন্যাপিং-এ পাব, আর অফ লাভ অ্যান্ড আদার ডেমনস-এর ভূমিকাতেও জানতে পারব রিপোর্টিং করতে গিয়ে তিনি কীভাবে ওই উপন্যাসের ধারণাটা পেয়ে গিয়েছিলেন। আমি নিজেও সাংবাদিক, সংবাদ খুঁজতে গিয়ে গল্পের উপাদান আমিও পেয়েছি, এবং ব্যবহার করেছি। নিজে কলাম লিখি, চিত্রনাট্যও লিখি। কাজেই মার্কেস যে আমার কাছে প্রেরণার এক অনন্ত উৎস হবেন, তাতে আর সন্দেহ কী!

মার্কেসের লেখার একটা কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে প্রেম। নরনারীর প্রেম। সাহিত্যের বিষয় হিসেবে প্রেমকে আমাদের দেশের অনেক নাকউঁচু সমালোচকই খুব তুচ্ছ বলে গণ্য করেন। আমার খুব আশ্চর্য লাগে, যে ভাষায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, সেই ভাষার কোনো মানুষ সাহিত্যের বিষয় হিসেবে প্রেমকে গৌণ করে দেখতে পারে কী করে? মার্কেস প্রেম নিয়ে লিখেছেন, আর প্রেম যে কত বিচিত্র হতে পারে, তার লেখায় আমরা তা পাই। লাভ ইন দি টাইম অব কলেরা তো একেবারেই পাগলামোতে পরিপূর্ণ এক প্রেমের গল্প। ফ্লোরিন্টো আরিজা নামের এক তরুণ প্রেমে পড়েছিল ফারমিনা ডাজা নামের এক তরুণীর। ওই মেয়েটির জন্য কী উন্মাদনাই না করত ফ্লোরিন্টো। কত চিঠি লিখেছিল, মেয়েটি বাড়ির সামনের বাগানে কত বাজনা বাজিয়েছিল। ফারমিনাও সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু বিয়ে করার সময় মেয়েটি বেছে নেয় ওই জনপদের সবচেয়ে উপযুক্ত পাত্রটিকে, একজন সুরুচিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তারকে। এরপর কেটে যায় একান্নটি বছর। ওই একান্ন বছরে ফারমিনা কখনোই তার সংসারে বা দাম্পত্যে ফাঁকি দেয়নি। আর ফ্লোরিন্টো একটার পর একটা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে, প্রধানত শারীরিক সম্পর্ক, কিন্তু চিরকালই সে ভালোবেসে গেছে ফারমিনাকেই। ৫১ বছর পর ফারমিনার স্বামী মারা গেলে বৃদ্ধ ফ্লোরিন্টো হাজির হয়েছে বৃদ্ধা ফারমিনার সামনে, আবারও প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে। সেই প্রেম বিজয়ী হয়েছে, তারা মিলিত হয়েছে কলেরা আক্রান্ত দিনগুলোতে জাহাজ ভ্রমণে বেরিয়ে। ‘তারা সুদীর্ঘ কাল বেঁচে ছিল এ কথা জানতে যে, ভালোবাসা চিরকালই ভালোবাসা, যেকোনো সময়ে আর যেকোনো স্থানে, কিন্তু এটা আরও অনেক পোক্ত যখন এটা মৃত্যুর নিকটবর্তী’—মার্কেস বলেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস নিঃসঙ্গতার এক শ বছর-এও আমরা পাই প্রেম, কী রকম প্রেমেই না একেকজন পড়ে ওই বইয়ে। জাদুবাস্তবতা কথাটা নিশ্চয়ই আসবে মার্কেস প্রসঙ্গে, কিন্তু তিনি বলেন যে তার জাদুবাস্তবতা এসেছে ল্যাতিন আমেরিকার বাস্তবতা থেকেই। কী একটা লিটল ম্যাগাজিনে, বোধ করি, বিজ্ঞাপনপর্ব-তে, ‘পেয়ারার সুবাস’ নামের মার্কেসের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি পড়েছিলাম ছাত্রজীবনেই। সেই সাক্ষাৎকার ভুলতে পারি না। ভুলতে পারি না তার এই পরামর্শ যে, ‘আমি আমার বন্ধুদের বলি, একজন লেখকের কর্তব্য হলো, ভালো বলা, বিপ্লবী কর্তব্য হলো ভালো লেখা।’ মার্কেস কিন্তু বিপ্লবীদের নিয়ে রসিকতা করেছেন, রাজনীতি নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন; নিঃসঙ্গতার একশ বছরেই আমরা দেখি, রক্ষণশীল আর উদারপন্থীতে ভাগ হয়ে যাচ্ছে মানুষেরা, কিন্তু কে যে কেন নিজেকে উদারপন্থীর দলে ভাবছে, আর কে যে নিজেকে কেন ভাবছে রক্ষণশীল, তার কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। যারা নিজেদের ঘোষণা করছে প্রগতিশীল, উদারপন্থী, তারা নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য ভূমির ওপর ভূস্বামীদের অধিকারও দিতে চায়, চার্চের খবরদারিও মেনে নেয়, তখন উদারপন্থী কর্নেলের মনে প্রশ্ন জাগে, তাহলে এত দিন ধরে আমরা যুদ্ধ করছি কেন, আমরা কেন উদারপন্থী আর ওরা কেন রক্ষণশীল। ঠিক যেন বাংলাদেশের রাজনীতি, যারা নিজেদের বলেন প্রগতিশীল, তারা রাষ্ট্রধর্ম কায়েম করেন, আর যারা নিজেদের মনে করেন রক্ষণশীল, তারা ব্যান্ডের গান আর ডিস্কো সংস্কৃতি প্রবর্তন করেন।

রাজনীতি নিয়ে রসিকতা মার্কেসে আরও পাব। এক দাঁতের ডাক্তার এক অজনপ্রিয় মেয়রের দাঁত তুলে ফেলার সময় চেতনানাশক ব্যবহার করেননি, শুধু তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য, এই গল্প একবার আমি গদ্যকার্টুনে অনুবাদ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু নিঃসঙ্গতার এক শ বছর-এই কলাশ্রমিকদের বিক্ষোভ দমনের জন্য যখন শ্রমিকদের একটা জায়গায় ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়, আর লাশ তুলে দেওয়া হয় ট্রেনে, যেন তারা একেকটা কলার কাঁদি, তখন আমাদের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়ে! আর পুরো বইতে ওই কাহিনী যে কতবার ঘুরে ঘুরে আসে।

আমার নিজের বইয়ের নাম অন্ধকারের এক শ বছর কিংবা বেকারত্বের দিনগুলোতে প্রেম কোথা থেকে এসেছে কাউকে বলার দরকার পড়ে না। আয়েশামঙ্গল বইয়ের আয়েশা তার যুবকপুত্র-সমেত ভোরের কাগজ-এ এসেছিল ১৯৭৮ সালে গণফাঁসিতে ঝোলা বিমানসেনাদের নামের তালিকায় তার স্বামীরও নামও আছে কি না দেখার জন্য, এই ঘটনা একেবারেই নির্জলা সত্য। কিন্তু প্রায় একই ঘটনা যে ঘটেছিল মার্কেসের মঙ্গলবারের সিয়েস্তা গল্পেও। মার্কেসের গল্প কীভাবে সত্য হয়ে গেল আমাদের বাংলাদেশে?

‘পার্শিয়াল ম্যাজিক ইন দন কিহোতে’ প্রবন্ধে হোর্হে লুইস বোর্হেস দন কিহোতের একটা ব্যাপার নিয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি দেখান যে, কিহোতে নিজেই কিহোতের কাহিনী পাঠ করছে। হ্যামলেটে হ্যামলেট একটা নাটক দেখে, যেটা ঠিক তার নিজের জীবনের কাহিনীরই মতো। রামায়ণের শেষের দিকে রাম রামকথা শোনে লব ও কুশের মুখে, আর রামায়ণকার বাল্মীকি নিজেই সেই কাহিনীতে চলে আসেন লব ও কুশের গুরু হিসেবে। রাম রামকথা লেখার জন্য গুরুদক্ষিণা দেন বাল্মীকিকে। আরব্য রজনীতে শাহেরজাদি সুলতানকে রোজ নতুন কাহিনী শোনায়, ৬০২ নম্বর রাতে সে শোনায় সুলতানকে সুলতানেরই জীবন-কাহিনী। বোর্হেস বলেন, এভাবে গল্পের চরিত্র যখন নিজেই গল্পের শ্রোতা হয়ে যায়, তখন পাঠকেরা হয়ে যায় কল্পিত চরিত্র। নিঃসঙ্গতার এক শ বছর বইতে মার্কেস এই ম্যাজিক ব্যবহার করেছেন। অরেলিয়ানো নামের এক তরুণ মেলাকুয়েদেস নামের রহস্যময় জিপসির পার্চমেন্টে পড়ে ফেলে সেই কাহিনী, যা বহু আগে রচিত, যা আসলে তাদের বংশে ঘটে যাওয়া এত দিনকার ঘটনা, অর্থাৎ গল্পের চরিত্র নিজেই গল্প পড়তে থাকে। এই ঈদে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একজন অখ্যাত লেখকের লেখা না-মানুষি জমিন উপন্যাসে হরিহর মজুমদার তার লেখা গল্পে কী করে নিজেই চরিত্র হয়ে থাকে, এখন আমরা হয়তো তার সূত্রটা ধরতে পারব।

আরেকটা মজার ঘটনা আছে। আমি এলিফ্যান্ট রোডের একটা বাসায় ভাড়া থাকতাম। বাসায় প্রায়ই চোর আসত। নিরীহ চোর। জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে এটা-ওটা নিয়ে যেত। বাড়িওয়ালাকে সে কথা বলায় তিনি বললেন, হ্যাঁ, এই বাড়িতে রোজ বৃহস্পতিবার রাতে চোর আসে। সেখান থেকে আমি ছোটদের গল্প লিখেছি, প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের বাসায় চোর আসে। এখন দেখি, মার্কেস তার চিত্রনাট্য লেখার কর্মশালা অবলম্বনে রচিত কেমন করে গল্প হয় বইয়ে গল্প ফেঁদেছে ‘শনিবারের চোর’। এটা আমি মার্কেস থেকে নিইনি, হলফ করে বলতে পারি।

কিন্তু তার কাছ থেকে নিয়েছি এই বার্তা যে, মানুষের পরাজয় নেই। উইলিয়াম ফকনারকে উদ্ধৃত করে নোবেল পুরস্কার ভাষণে মার্কেস বলেছিলেন, ‘মানুষের অবসান মেনে নিতে আমি অস্বীকার করি।’ তিনি বলেছেন, ‘সমস্ত দমনপীড়ন, নির্যাতন, লুটতরাজ, আত্মবিক্রয় সত্ত্বেও আমাদের উত্তর হচ্ছে: জীবন। না বন্যা না মহামারি, না বুভুক্ষা না প্রলয়ঝড়, এমনকি শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে চিরকাল বয়ে চলা যুদ্ধবিগ্রহেও মৃত্যুর ওপর জীবনের নাছোড় প্রাধান্যকে হ্রাস করে দিতে পারেনি।’

বাংলাদেশেও আজকে আমরা একই রকম পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। দমনপীড়ন, নির্যাতন, লুটতরাজ, আত্মবিক্রয়, বন্যা-মহামারি, বুভুক্ষা, প্রলয়ঝড়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে উদ্বাস্তু হতে হবে ৫০ বছরের মধ্যে! এই অবস্থায়, মার্কেসের মতোই এক বিপরীত ইউটোপিয়া রচনা করার দায় আমাদের ওপরে কি বর্তায়নি। আমাদের কি বারবার করে বলতে হবে না, আমাদের মৃত্যু নেই, আমাদের পরাজয় নেই, ১৬ কোটি মানুষের একটা দেশ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে না?

মার্কেস নিজেও লড়ছেন ক্যানসারের বিরুদ্ধে। তার পরও তিনি লিখেছেন, আমার বিষণ্ন দেহপসারিণীদের স্মৃতি। মৃত্যু নয়, জীবনই যার কাছে পরম আরাধ্য, প্রেম যার জীবনের শেষ মুহূর্তেরও আশ্রয়, তাকে কি ভালো না বেসে পারা যায়? মৃত্যুর আগে কি মার্কেস বিড়বিড় করবেন না, যেমনটা তিনি উদ্ধৃত করেছেন অফ লাভ অ্যান্ড আদার ডেমনস বইতে, ‘For you was I born, for you do I have life, for you will I die, for you am I now dying.’

তুমি কি ভালোবাসার জন্যই মারা গেলে?
কিছুদিন আগেও গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজকে আমরা বলতাম, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবিত লেখক। এখন এই কথাটা আর বলা যাবে না। বলতে হবে, তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন। তিনি আমার খুব প্রিয়। আমি তার লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি, তার সাক্ষাৎকার পড়ে দিশা পেয়েছি, তার বক্তৃতা পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। প্রিয় লেখক পরিণত হন প্রিয় মানুষে। আজকে তার মৃত্যুতে প্রিয়জন হারানোর শোক অনুভব করছি। মানুষের পরাজয় নেই। মানুষের পরাজয় নেই, তা এ জন্য নয় যে, তার ভাষা আছে, তা এ জন্য যে, তার আত্মা আছে। নোবেল পুরস্কার ভাষণে মার্কেজ এ কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, তার প্রিয় লেখক ফকনারকে উদ্ধৃতি দিয়ে। আমিও তাই বলি। বাঙালির মৃত্যু নেই। কারণ বাঙালির আত্মা আছে। পহেলা বৈশাখে আমরা সেই আত্মার কল্লোলধ্বনি শুনতে পাই।

মার্কেজ বলেছেন, বার্ধক্য মানে এই নয় যে, বয়স বাড়া। বার্ধক্য হলো আর নতুন কোনো স্বপ্ন না দেখা। মার্কেজ বলেছেন, আমি আমার বিপ্লবী লেখক বন্ধুদের বলি, সবচেয়ে বড় বিপ্লবী কাজ হলো ভালো লেখা। প্রেম মার্কেজের প্রিয়তম বিষয়। প্রেম, একনায়ক, পরিবার–এই ছিল তার লেখার প্রধান তিন অনুষঙ্গ। তিনি সাংবাদিক ছিলেন। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকতা তার লেখালেখির জন্য সহায়ক হয়েছে। আমরা তার সাক্ষাৎকার থেকে, ভূমিকা থেকে জানি, কীভাবে তিনি সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অব লাভ অ্যান্ড আদার ডেমনস কিংবা অটাম অব দি প্যাট্রিয়াকের আইডিয়া পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা নষ্ট করার জন্য একটা মিথ্যাই যথেষ্ট, আর সাহিত্যের বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য একটা সত্যই যথেষ্ট। তার গল্প কী করে হয় শীর্ষক চলচ্চিত্রের পান্ডুলিপি রচনার ওয়ার্কশপ থেকেও কত কি শিখেছি। কখনও কি ভুলব তার বইয়ে উদ্ধৃতি এই লাইন দুটো…

তোমার জন্য আমি জন্মেছিলাম।
তোমার জন্য আমি বেড়ে উঠছি।
এখন তোমার জন্যই আমি মরছি।

মার্কেজ, তুমি কি ভালোবাসার জন্যই মারা গেলে?

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone