গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের আন্দোলনের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার আভাস
মারাজ মামুন, ঢাকা দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে সংঘটিত হচ্ছেন গ্রামীণফোন (জিপি) লিমিটেড কোম্পানির শ্রমিক কর্মচারীরা। শ্রমিক কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন সরকারি নিবন্ধন পাওয়ায় তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন আরও জোরালো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম এবং নরওয়ের টেলিনর কোম্পানির যৌথ মালিকানায় গ্রামীণফোনের পথচলা শুরু হয়। তখন থেকে দেশীয় শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ খণ্ডকালীন, চুক্তি ভিত্তিক প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের স্থায়ী নিয়োগপত্রসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার ও দাবি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছেন।
জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষের কাছে। তবে দীর্ঘ ৬ বছর অতিবাহিত হতে গেলেও তাদের কোনো দাবি মেনে নিতে স্বীকৃতি দেয়নি গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিনিয়ত শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়েই চলছে। ক্ষোভ থেকে আন্দোলনের গতি তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এর আগেও শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি আদায়ে একাধিকবার অন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এ কারণে অনেক শ্রমিক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপরও দাবি আদায়ের আন্দোলন ছেড়ে পিছু হটেনি তারা।
যেসব দাবী আদায়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন করে যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণফোনের সকল শ্রমিক কর্মচারীদের অনতিবিলম্বে নিয়োগপত্র ও সার্ভিসবুকসহ চাকরি স্থায়ীকরণ, আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রমিকদের সকল সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, দেশীয় শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, বহুজাতিক কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সঙ্গতি রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি চালু করতে হবে, সরকার ঘোষিত কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অনতিবিলম্বে শ্রমিকদের পরিশোধ করতে হবে, শ্রমিক কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা পরিচালনার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে, জিপির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে, সেই সঙ্গে আউট সোসিংয়ের নামে দাসত্ব প্রথা বন্ধ করতে হবে।
সম্প্রতি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নিবন্ধন পাওয়ার পর এসব দাবি আদায়ে শ্রমিকরা আরও জোরালো ভাবে সংঘটিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কারণে তারা অপেক্ষা করছে। এরপরও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের দীর্ঘ দিনের দাবি আদায়ে আন্তরিক না হলে যে কোনো কঠোর কর্মসূচি দিতে পারেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন হলে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন যে কোনো মুহুর্তে গ্রামীণফোণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ে ফুসে উঠতে পারেন বলে আভাস দিয়েছে একটি সূত্র।
এ সম্পর্কে সদ্য নিবন্ধিত গ্রামীণফোন লিমিটেড শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান বাংলা নিউজ মেইলকে জানান, আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষের নিকট সাধারণ শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবিগুলো কোনো ভাবে মেনে নিতে চাচ্ছেন না। উল্টো বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে। দাবি আদায়ের আন্দোলন ঠেকাতে জিপি কর্তৃপক্ষ অনৈতিকভাবে শ্রমিকদের ছাটাইও করেছে। তবুও আমরা দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আবেদন জানিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও আশা করি জিপি কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা চিন্তা করে দাবিগুলো মেনে নিবেন। যদি শান্তিপূর্ণভাবে দাবি মেনে না নেওয়া হয় তবে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন পরবর্তীতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।’