বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » আর্ন্তজাতিক » করোনা ঠেকাতে কুকুর-বিড়াল হত্যা করছে ভিয়েতনাম

করোনা ঠেকাতে কুকুর-বিড়াল হত্যা করছে ভিয়েতনাম 

183403_121074166_2f4f27ca-e0af-4db6-b38a-31b406ebff10

করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে ভিয়েতনামে। যেসব শহরে সংক্রমণ বাড়ছে অনেকেই সেখান থেকে কম সংক্রমণের এলাকায় চলে যাচ্ছেন। লং অ্যান প্রদেশ থেকে এক দম্পতি মোটরবাইকে করে শহর ছাড়েন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিল তাদের পোষা ১৫টি কুকুর, তিন আত্মীয় এবং ওই আত্মীয়দের তিনটি কুকুর ও একটি বিড়াল। তারা লং অ্যান থেকে চা মাউ প্রদেশের খান হাং এলাকায় যাচ্ছিলেন। লং অ্যানে সম্প্রতি নতুন সংক্রমণ অনেক বেড়ে গেলেও খান হাংয়ের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। সে কারণেই তারা পোষা প্রাণীদের সঙ্গে নিয়েই দীর্ঘপথে যাত্রা করেন।

ওই শহরে পৌঁছানোর পর তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তারা তা ক্ষুণাক্ষরেও টের পাননি। তাদের সঙ্গে থাকা তিন আত্মীয় এবং ওই দম্পতির দেহে করোনা শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ ওই প্রাণীগুলোকে মেরে ফেলে। এসব প্রাণী থেকে হয়তো করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এ কাজ করা হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ফাম মিন হাং নামে ৪৯ বছর বয়সী ওই রাজমিস্ত্রি বলেন, এই ঘটনার পর আমি এবং আমার স্ত্রী খুব কেঁদেছি। আমরা ঘুমাতে পারছি না। তিনি বলেন, আমার এটা বিশ্বাস হচ্ছে না যে সত্যিই এমন কিছু ঘটেছে। আমরা আমাদের বাচ্চাদের (কুকুরগুলো) বাঁচাতে কোনো কিছুই করতে পারলাম না।  একদিকে তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আর অন্যদিকে হাসপাতালে শুয়ে থেকেই তাদের আদরের প্রাণীগুলোর মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। এটা সত্যিই খুব হৃদয়বিদারক ঘটনা।

১৫টি কুকুর এবং একটি বিড়ালকে হত্যার এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তা নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এ ধরনের কাজ বন্ধ করতে একটি পিটিশনের পক্ষে দেড় লাখের বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছে। করোনা মহামারির পর থেকে ভিয়েতনাম বেশ ভালো ভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে দৈনিক সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে। কয়েক মাসের লকডাউনের কারণে অনেক অভিবাসী শ্রমিক বিপাকে পড়েছেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন বড় শহর ছেড়েছেন কমপক্ষে ১০ লাখ অভিবাসী শ্রমিক। ফাম মিন হাং এবং তার স্ত্রী নুয়েন থি চি এমও এসব কারণেই শহর ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু তারা তাদের পোষা কুকুরগুলোকে ফেলে আসতে পারেননি। কষ্ট হলেও সবগুলো কুকুরকে মোটরবাইকে করেই তারা শহর ছাড়েন।

গত ৮ অক্টোবর তারা তাদের কুকুরগুলোকে নিয়ে রওনা দেন। সে সময় তাদের আরও তিন আত্মীয়ও তাদের সঙ্গে ছিলেন। তারাও তাদের কুকুর আর বিড়ালকে নিয়ে এসেছিলেন। তারা প্রায় ২৮০ কিলোমিটার (১৭৩ মাইল) পাড়ি দিয়েছেন। তারা এই ভ্রমণের সময়টা ভিডিও করে অনলাইনে পোস্ট করেন। পোষা প্রাণীদের সঙ্গে নিয়ে এত দূরের পথে যাত্রা করার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাদের প্রশংসা করেছেন, এছাড়া অন্যরাও তাদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য শুভেচ্ছা জানান। ফাম মিন এবং তার স্ত্রী মূলত ১৫টি কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। চা মাউ প্রদেশে প্রবেশের পর এক স্বেচ্ছাসেবীকে তারা দু’টি কুকুর দিয়ে দেন। আর একটি পথিমধ্যেই মারা যায়।

খান হাং এলাকায় প্রবেশের পর ওই দম্পতি এবং তাদের তিন আত্মীয়র করোনা ধরা পড়ে। ওই শহরে ভ্রমণ করতে আসা প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। তারই অংশ হিসেবে তাদেরও পরীক্ষা করা হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা করার আগে তারা বুঝতে পারেননি যে তারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন। পরবর্তীতে তাদের একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সে সময় প্রাণীগুলোকে একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখা হয়। কিন্তু স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো কিছু না জানিয়েই বিড়াল-কুকুরগুলোকে হত্যা করে।

ওই প্রাণীগুলোকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো পরিস্কার নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে প্রাণীগুলোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তা ত্রান তান কং এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অবিলম্বে প্রাণীগুলোকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত একটি প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছিল।

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone