অতিথি পাখি
এই দেশ এই সময় : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর। চিরসবুজের ফাঁকে ফাঁকে এ ক্যাম্পাসের আসল আকর্ষণ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি জলাশয়। লাল শাপলার গালিচায় মোড়ানো এ জলাশয়গুলোতে এখন আশ্রয় নিয়েছে শীতের পাখিরা। এদের বেশিরভাগই অতিথি।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এলাকাটি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবেও গুরুত্ব দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২২টি জলাশয়ের মধ্যে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ও পেছনের দুটি জলাশয়, জাহানারা ইমাম হল, প্রীতীলতা হল এবং আল বেরুনী হল সংলগ্ন জলাশয়ে পাখির আনাগোনা সবেচেয়ে বেশি। প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে আসতে শুরু করে এসব পাখি। থাকে ফেব্রুয়ারি নাগাদ।
সাধারণত উত্তরের শীতপ্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন অঞ্চলে উড়ে আসে এসব পাখি। হাজার হাজার মাইল পথ পেরিয়ে উষ্ণতার খোঁজে তারা আসে আমাদের দেশে।
ঢাকা-আড়িচা মহাসড়ক ছেড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করলেই পাখির অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। কিচির মিচির শব্দে চারপাশ মুখর। এবার সরালি, বামুনিয়া হাঁস ও ছোট জিড়িয়া প্রজাতির পাখিরা সবচেয়ে বেশি এসেছে ক্যাম্পাসে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাখির সংখ্যা বাড়ে।।
প্রতি বছর সাধারণত যে সব পাখি জাহাঙ্গীরনগরে আসে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সরালি, পচার্ড, গার্গেনি, মুরহেন, লালমুড়ি, খঞ্জন, জলপিপি, ফ্লাইকেচার ইত্যাদি।
পাখি দেখতে জাহাঙ্গীরনগর গেলে দু-একটি বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হয়।
এটি একটি পাখির অভয়ারণ্য, তাই কোনো রকম উচ্চ শব্দ কিংবা পাখিরা বিরক্ত হয় এরকম কিছু করা যাবে না। নীরবতা অবলম্বন করে পাখির সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে। এ ভ্রমণে প্রথমে যেতে পারেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সকালে গিয়ে দুপুর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে পারেন।
দুপুরের পরে দেখতে চলে যেতে পারেন জাতীয় স্মৃতিসৌধ। জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে এর অবস্থান।
স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ-উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৮২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
১৫০ফুট উঁচু জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মঈনুল হোসেন। সাতজোড়া ত্রিভুজাকার দেয়ালের মাধ্যমে ছোট থেকে ধাপে ধাপে উঠে গেছে সৌধটি। কংক্রিটের এই সাত জোড়া দেয়ালের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ৭টি সময়কালকে নির্দেশ করা হয়েছে।
মোট ১০৮ একর উচুঁ নিচুঁ টিলা আকৃতির জায়গার উপর বিস্তৃত সবুজ ঘাসের গালিচায় আবৃত দেশি বিদেশি গাছের বাগান আর লাল ইটের আঁকাবাঁকা পথসমৃদ্ধ এই সৌধটি ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে।
স্মৃতিসৌধ চত্বরের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের ১০টি গণকবর। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে কৃত্রিম লেক।
স্মৃতিসৌধের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে আছে একটি বাগান। যেখানে সৌধ পরিদর্শনে আসা রাষ্ট্রীয় অতিথিদের হাতে লাগানো সব গাছ রয়েছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে দেখতে কোনো প্রবেশ মূল্য লাগে না।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে।