‘মুদ্রানীতি সূচকগুলো ইতিবাচক করতে সহায়ক হবে’
নিউজ ডেস্ক : সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এবার বিনিয়োগবান্ধব এবং সতর্ক ভারসাম্যমূলক মুদ্রানীতি দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহির্খাতের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক অবস্থানে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে ডিসিসিআই।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ২০১৩-১৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ডিসিসিআই এক প্রতিক্রিয়ায় এ আশা ব্যক্ত করে।
ডিসিসিআই সচিব বশির হায়দার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে ঋণ ঝুঁকি এড়াতে ও আমানত নির্ভর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে অনুপ্রেরণা দেয়া হয়েছে। ডিসিসিআই আশা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া দেশের বড় করপোরেটের তহবিল জোগাড়ের জন্য ব্যাংকগুলোর চেয়ে পুঁজিবাজারে ইক্যুইটি ও ডিবেঞ্চার ইস্যুর ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে, যা পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে ভূমিকা রাখবে।
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, ডিসিসিআই মনে করে মুদ্রানীতিটিতে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণে সাময়িক নমনীয়তা এবং রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে উপকরণ আমদানির জন্য ঋণের খাত সম্প্রসারণ ও সুদ হার হ্রাসের নীতি সহায়তা ঘোষণা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
ডিসিসিআই জানায়, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধির হার নিম্নমুখী হওয়া এবং অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে রফতানি প্রবৃদ্ধির স্লথ গতির সম্ভাবনা দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের কাছাকাছি হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও জাতীয় বাজেটে এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.২ শতাংশ। বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্কলনটি বাস্তবধর্মী। মুদ্রানীতির একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ লক্ষ্যে নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির হার বিদ্যমান সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি থেকে হ্রাস করে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ছিল ৯ শতাংশ। তাই সামগ্রিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি হ্রাস করতে হলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হ্রাসের কোনো বিকল্প নেই। মুদ্রানীতিতে কৃষি খাতে ঋণ জোগান পর্যাপ্ততার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নজর জোগান সহায়ক হবে, যা মূল্যস্ফীতির চাপ প্রশমনে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কবে নাগাদ নিম্নমুখী প্রবণতায় ফিরে আসবে সেজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
ডিসিসিআই বিবৃতিতে আরো জানায়, মুদ্রানীতিতে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ মুদ্রানীতিটিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ১৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫.৫ শতাংশ, যা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই এর অন্যতম প্রধান কারণ। তাই বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুদের হারের স্প্রেড কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
অন্যদিকে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হারের লক্ষ্যমাত্রা গত সময়ের ১৯.৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২২.৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের মোট ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ২৬০ বিলিয়ন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষে সরকার ৪৬ বিলিয়ন টাকা ব্যাংক হতে ঋণ নিয়েছে, ঋণ গ্রহণের পরিমাণ যাতে কোনোমতে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম না করে সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের জোরদার ভূমিকা পালন করা একান্ত জরুরি বলে ডিসিসিআই মনে করে।