বাংলাদেশে প্রথম ট্যুরিজম ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল|মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
সাইটে আপনার অবস্থানঃ Home » পর্যটন » নীলজলের দ্বীপভূমি

নীলজলের দ্বীপভূমি 

| শাহরিয়ার মামুন ||

বাঙালিদের কাছে ‘সুবর্ণভূমি’ শব্দটি বা নামটি নিশ্চয়ই খুবই চমৎকার; অন্তত আমার কাছে। মনে হবে এটি বাংলাদেশেরই কোনো স্থানের নাম। কিন্তু আমার মত হয়ত অনেকে ভুল করতে পারেন যে, সাদা হাতির দেশ থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরের নাম সুবর্ণভূমি। আগে জানতাম না। যখন ঢাকা থেকে থাই এয়ারওয়েজে ব্যাংকক বিমানবন্দরে নামছি, তখনই দেখলাম সুবর্ণভূমির সৌন্দর্য। দুপুরের রোদে ঝলমল করছে বিমানবন্দরটি। সারি সারি বিমান দাঁড়িয়ে আছে, আকাশ থেকে নামছে, কোনো কোনোটি উড়ছে। আমরা অবতরণ করতে করতেই এ দৃশ্য দেখছি। ভালো তো লাগছেই!

555999

SAARC Cultural Centre এর উদ্যোগে আয়োজিত Saered Heritage বিষয়ক চার দিনব্যাপী সিম্পোজিয়ামে যোগ দিতে ব্যাংকক হয়ে শ্রীলঙ্কা যাচ্ছি। বাংলাদেশ থেকে আমার সঙ্গী মনিরুল হক। মনির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে পাস করে বেশ কিছুদিন ইরানে দোভাষীর কাজ করেছে। ও বেশ রসিক এবং এনারজেটিক। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সে আমারই সহকর্মী। মনির বলল, বাহ্ দারুণ!

আমরা যাবার মাসখানেক আগে চালু হয়েছে ঢাকা-কলম্বো বিমান ‘মিহিন লঙ্কা’। এই বিমানে কলম্বো যেতে মাত্র তিন ঘণ্টা সময় লাগে। আমরা বিমানটির সিডিউল পাইনি। পেলে ট্রানজিটের ঝামেলায় পড়তাম না। ট্রানজিট-টাইম সব সময়ই বিরক্তিকর। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান যাবার সময় এই ট্রানজিট টাইম আমার কাছে বিরক্তি লেগেছে। সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরেও একই ঘটনা ঘটল। কলম্বোগামী ফিরতি বিমানের জন্য প্রায় ছয় ঘণ্টা বসে থাকলাম। ইউ আকারের পর্যাপ্ত ডে-লাইটে ভরা বিমানবন্দরটি বেশ পরিচ্ছন্ন। হিথরো, জেএফকে, নারিতা, হংকং, ওমান, কাতার, বাহরাইন বিমানবন্দর দেখার পর সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরটিও আমার কাছে ভালো লেগেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন বিমানে শত শত যাত্রী আসছে আর যাচ্ছে। নানা প্রকৃতির, নানা রঙের, নানা বর্ণের, নানা ভাষার মানুষ দেখার এক চমৎকার জায়গা হলো এসব বিমানবন্দর। মানুষ দেখতে দেখতে মনে পড়ছে বাংলাদেশের মানুষের কথা। শ্যাম দেশের মানুষেরা এখনও আধুনিকতা থেকে অনেকটা পিছিয়ে। অথচ সে দেশেরই একটা বিমানবন্দর কতটা নান্দনিক। আমাদের একটি অত্যাধুনিক আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর নেই? থাকলে দেশের অনেক আয় হতো।

রাতের আলোয় সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর

বিমানবন্দরের ভিতরে মনির অনেকগুলো ছবি তুলল। আমি যাত্রীদের জন্য রাখা কম্পিউটারে ইন্টারনেট টিপে টিপে কিছুটা সময় কাটালাম। তারপর কলম্বোগামী বিমানে উঠে গভীর রাতে বন্দরনায়েকে বিমানবন্দরে নামলাম। সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের মত ততটা আকষর্ণীয় নয় এটি। মূল শহর থেকে বিমানবন্দরটি মোটামুটি দূরে। আমাদের যারা রিসিভ করতে এসেছিল, পরের ফ্লাইটে আসার কারণে তারা চলে গেছে। এ সময় আমি কিছুটা চিন্তিত হলেও, মনির নার্ভাস হলো না। যে হোটেলে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে, সেই ঠিকানা বের করে আমরা ট্যাক্সি ভাড়া করতে গেলাম। এয়ারপোর্টের ভিতরেই গাড়ি ভাড়া করার ব্যবস্থা রয়েছে। কথা বলতে বলতেই পরিচয় হলো মি. রোহানের সাথে। যিনি আশির দশকে শ্রীলঙ্কা থেকে পাকির আলির সঙ্গে এসে বাংলাদেশের আবাহনীতে ফুটবল খেলে গেছেন। রোহান এক সময় সেনাবাহিনীতেও ছিলেন। এখনও শারীরিকভাবে অনেক স্মার্ট দেখলাম তাকে। তিনি বেশ আন্তরিকতা দেখিয়ে আমাদের ট্যাক্সি ঠিক করে দিলেন। মধ্যবয়সী ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ভদ্রই মনে হলো। আমরা চললাম হোটেলের উদ্দেশে।

রাতের কলম্বো যেন রাতের ঢাকা। কোনও কোনও জায়গা আবার মনে হলো বাংলাদেশের রাতের কোনো জেলা শহর। রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশি চেকপোস্ট। আমাদের ভাড়া করা ট্যাক্সিক্যাবের চালককেও কয়েকবার পুলিশ জিজ্ঞেস করে তথ্য নিলো এবং এক জায়গায় তাদের চালকের কাছ থেকে টাকাও নিতে দেখা গেল। প্রায় দুই ঘণ্টা পর জানাকি হোটেল খুঁজে পেলাম। থ্রি স্টার হোটেলের বিশাল কামরা। সকালেই সেখানকার ফাইন আর্টস গ্যালারিতে সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধন হবে বলে আমরা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম।
শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল মিউজিয়ামের সামনে লেখক

সকালের সূর্যালোকে গাড়িতে করে যে পথেই যাচ্ছি- দেখছি, সবুজ বৃক্ষেঘেরা ছিমছাম কলম্বো শহর। হাইরাইজ বিল্ডিং তেমন চোখে পড়ছে না। ভারত, ভুটান ও বাংলাদেশ থেকে আমরা যে অতিথিরা রয়েছি, আমাদের গাইড করছে যে শ্রীলঙ্কান তার নাম মি. রাসমী। তিনি সার্ক কালচারাল সেন্টারে কর্মরত রয়েছেন। তিনিই বিভিন্ন জায়গা চেনাচ্ছেন। তার মুখ থেকেই শুনলাম সে দেশের সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানসমূহ- কলম্বো শহরে গলফেইস, রত্নাপুরা, নিগাম্বু, কেন্ডি, অনুরাধাপুরের মৃত নগরী, সিগিরিয়া ইত্যাদি। সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি রাম-সীতা আর রাবণের কাহিনি।  যাদের অবস্থান ছিল এই শ্রীলঙ্কায়। এখানে হযরত আদম, বুদ্ধ ও শিবের জন্য স্মরণীয় স্থান। লেখক হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, ‘কলম্বোর কাছেই রত্নপুরা। রত্নপুরাতে আছে রত্নগিরি বা রত্নের পাহাড়। … এই রত্নগিরিই বিখ্যাত আদম’স পিক। … আদম’স পিক সম্পর্কে কিছু বলা যাক। সাত হাজার তিন শ’ আটান্ন ফুট উঁচু পাহাড়। এর চূড়ায় একটি পদচিহ্ন। মুসলমানরা দাবি করেন এই পদচিহ্ন হযরত আদমের। বেহশত থেকে নির্বাসিত হয়ে তিনি এসেছেন শ্রীলঙ্কায়। খ্রিস্টানদেরও এই দাবি। তাদের মতে শ্রীলঙ্কাই হলো স্বর্গভূমি। খ্রিস্টানদের একটি দল অবশ্য বলে এটি সেইন্ট পিটারের পায়ের ছাপ। বৌদ্ধদের দাবি এটি গৌতম বুদ্ধের বাঁ পায়ের ছাপ। তিনি পৃথিবী থেকে শেষবারের মতো চলে যাওয়ার সময় বাঁ পা রাখেন এখানে, ডান পা রাখেন ব্যাংককের সারাবুড়ি প্রদেশে। সেখানে পাথরের ওপর ডান পায়ের একটি ছাপ আছে। হিন্দুদের দাবি এই পায়ের ছাপ শিবের। পাহাড়ের নিচে একটি শিবমন্দিরও আছে। প্রধান ধর্মগুলির মধ্যে ইহুদি ছাড়া বাকি সবাই পদচিহ্নের দাবিদার। ইহুদিরা যদি বলত এটি মোসেসের (মুসা আলায়েস সালাম) পায়ের ছাপ, তাহলে সর্বকলা সম্পন্ন হতো। আমার নিজের ধারণা, এটা কোনো মানুষের পায়ের ছাপই না। প্রাকৃতিক কারণে শিলা ক্ষয়ে পায়ের পাতার আকৃতি নিয়েছে। কিংবা মানুষই পাথর খুদে এই জিনিস বানিয়েছে।’ এই বিশ্বাসের উপর সব ধর্মানুসারীরাই চলেছেন। তবে কোনো বিরোধ তো নেই। তর্কে বহু দূর- আমরা আপতত সেই দূরের পথ মাড়াবো না।

রাস্তার পাশেই ফাইন আর্টস গ্যালারি। গ্যালারির সামনে ফুল-সজ্জিত বাগান। রাস্তার অপর পার্শ্বে ছোট ছোট স্টল সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা, যাতে শোভা পাচ্ছে সে দেশের লোকশিল্পকর্মের নানা উপাদান। আমাদের গাড়ি থামল। নেমেই সিম্পোজিয়ামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী বাদকদলের বাজনা ও মোমবাতির প্রজ্জ্বলনে উদ্বোধন হলো তিন দিনের সিম্পোজিয়াম। সার্ক কালচারাল সেন্টারের কর্তা ব্যক্তি সকলেই উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পরিচয় হলো বাংলাদেশ মিশনের কনসুলার অফিসার মীর আকরামের সঙ্গে। তিনি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পর্বের প্রতিনিধিত্ব করলেন। উদ্বোধন পর্বের পর আকরাম আমাদের দু’জনকে তার বাসায় একদিন যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। আমরা বাংলাদেশ স্টলকে সাজালাম ঐতিহ্যের অংশ কয়েকটি বই এবং ভাস্কর্য ও অলংকরণ নিদর্শনের ফটোচিত্র দিয়ে। এরপর শুরু হলো মূল সেমিনার। আর্টস গ্যালারির ভেতরে আমরা বাংলাদেশ পর্বে প্রবন্ধ পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করলাম। প্রবন্ধের উপর আলোচনা হলো। বিকেলে আমরা ফিরে গেলাম আমাদের হোটেলে।
শ্রীলঙ্কায় চায়ের বাগান

পরদিন সন্ধ্যায় গাড়ি চালিয়ে মীর আকরাম নিজেই এসে হোটেল থেকে মনির ও আমাকে নিয়ে গেলেন তার সরকারি বাসায়। হোটেল থেকে তার বাসা খুবই কাছে। আকরাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করে বিসিএস ফরেন ক্যাডারে চাকরি নিয়ে শ্রীলঙ্কায় আছেন গত চার বছর ধরে। বললেন, শ্রীলঙ্কা তার কাছে ভালই লাগে। কিন্তু তার স্ত্রীকে এমন মনে হলো না। এ বিষয়টি অবশ্য আমি ২০০৬ সালে বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বর্তমানে প্রয়াত রুহুল আমিনের স্ত্রীর মধ্যেও দেখেছি। বাঙালি মেয়েরা সব সময়ই বাবা-মা’র কাছাকাছি থাকতে চায়। যা হোক, এখানে এসে দেখা হলো আরও কয়েকজন বাঙালির সঙ্গে। কেউ বেসরকারি চাকরিসূত্রে, কেউ ব্যবসায়িক কাজে, কেউবা ভ্রমণের উদ্দেশে সেখানে আছেন। আমাদের সঙ্গে তাদেরও দাওয়াত করেছেন আকরাম। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার নানা বিষয়ে অনেকক্ষণ আড্ডা হলো। তারপরে বাঙালি খাবারের নানান আয়োজন। খাওয়া-দাওয়া করে আমরা ফিরে গেলাম হোটেলে। ফেরার সময় ভাবলাম বিদেশে-বিভূঁইয়ে এরকম বাঙালি আপ্যায়ণ বেশ আনন্দদায়ক।

ভারত মহাসাগরের কূলে জেগে থাকা দুই দেশ মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা। মালদ্বীপে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ না হলেও শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অবস্থা কিছুদিন আগেও ছিল নাজুক। একজন বাঙালি ওখানে প্রায় কুড়ি বছর ধরে আছেন। তার কাছে শুনলাম- দ্বীপাঞ্চলের শ্রীলঙ্কার বিগত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা। এলটিটিই তামিল গেরিলাদের সঙ্গে সরকারের সংঘর্ষের কারণে অবকাঠামো কোনো উন্নয়ন হয়নি। টাইগার প্রভাকরণের কারণে হাজার হাজার বিদ্রোহী যোদ্ধা স্বদেশী বন্ধুদের সঙ্গে দিনের পর দিন যুদ্ধ করেছে। বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। সুনামি আর সেই গৃহযুদ্ধ শেষে শ্রীলঙ্কা জেগে উঠছে সবুজ লতার মতো।

নীল জলে ঘিরে আছে দ্বীপ দেশ শ্রীলঙ্কা। ব্রিটিশরা বহু বছর আগে জেলে অধ্যুষিত এই দেশে প্রবেশ করেছিল। এর আগে পর্তুগীজ জলদস্যুরাও ছিল। নিজেদের শাসনের প্রয়োজনে এখানে সভ্যতার আলো জ্বালাতে শুরু করে ব্রিটিশরা। যেমনটা করেছে ভারত উপমহাদেশে। জেলে জীবন থেকে ধীরে ধীরে ব্রিটিশদের আলোর পথে ধাবিত হতে শুরু করল শ্রীলঙ্কানরা। ভারত থেকে যাওয়া কিংবা অনেকের মতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া এই মানুষগুলো একদিন বুঝতে পারল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আজ প্রায় ৯৮ শতাংশ লোক শিক্ষিত। শ্রীলঙ্কার রয়েছে অনেক ঐতিহ্য। নারকেল গাছে ছেয়ে আছে প্রায় সারা শ্রীলঙ্কা। মানুষদের অধিকাংশের গায়ের রং কালো এবং বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। কলম্বো শহরের বিভিন্ন জায়গায় শত শত বৌদ্ধের মূর্তি রয়েছে। আমরা একদিন শহরের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির দেখতে গেলাম। রাসমী আমাদের গাইড করছেন। যাবার সময় দেখলাম শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। আমরা যখন ঘণ্টা খানেকের পথ পার হয়ে মন্দিরের সামনে পৌঁছলাম, তখন দুপুর গড়িয়েছে। বেশ গরম লাগছে। মন্দির এলাকা আমাদের দেশের মাজারের আশেপাশের জায়গার মতই। জুতা খুলে প্রবেশ করতে হয়। বিশাল এলাকা জুড়ে টিলার মত উঁচুতে বড় মন্দির। পাশাপাশি একটি পুরনো ও একটি নতুন মন্দির। পুরনো মন্দিরটি টেরাকোটার চমৎকার কারুকাজে সজ্জিত। ভারতীয় চার গবেষক ও ভুটানের গবেষক সেই স্থাপত্য নন্দিত নকশার ক্লিক ক্লিক ছবি উঠাচ্ছে। মন্দির জুড়ে বুদ্ধের নানান আকারের, নানান রকমের মূর্তি রয়েছে। অসংখ্য পর্যটক, দর্শক ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর ভক্ত ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সেখানে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করছে। আমরাও মন্দিরের ভিতর এবং বাইরের সব কিছুই দেখলাম। একজন মহিলা ভিক্ষুক আমাদের কাছে ভিক্ষা চাইল।

 

শেয়ার করুন !!Share on FacebookTweet about this on TwitterShare on Google+Share on LinkedInShare on RedditBuffer this pageDigg thisShare on TumblrPin on PinterestShare on StumbleUponFlattr the authorEmail this to someone