স্যুটকেসে ভরা জীবন!
নিউজ ডেস্ক : নিউজিল্যান্ড অধিবাসী ৩৬ বছর বয়সী নাটালি সিসান। অদ্ভুত ব্যাপার হলো তিনি তাঁর পুরো জীবনটাকেই মাত্র একটি স্যুটকেসে ভরে ফেলেছেন, আর তা নিয়েই যথার্থ এক যাযাবরের মতো চষে বেড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশ। সিসান নিজেকে একজন প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা বলেই দাবি করেন। সিসন যেভাবে তার জীবনকে সাজিয়ে নিয়েছেন তাতে জীবনযাপনের জন্য তার শুধু একটি মাত্র ব্যাগ বা স্যুটকেসই যথেষ্ট। ইয়াহু ফাইন্যান্সের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নাটালি সিসানের যাযাবর জীবনের কথা।
চার বছর আগে পথে নেমে ছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিবাসী নাটালি। তার নিজের কোনো ঘরবাড়ি নেই, অর্থাৎ এখন তিনি রীতিমতো এক যাযাবর।
ভালো চাকরি-ব্যবসা ছেড়েই পথে নেমেছেন তিনি। যাযাবর হলে কী হবে, নাটালি এখনও রীতিমতো একজন ভালো ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে তার ব্যবসা। অবশ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করার সময় এক স্যুটকেস ভর্তি মালপত্রেই তাঁর কাজ চলে যায় আর তাঁর ব্যবসার উপকরণ হচ্ছে তার ল্যাপটপ। এই নিয়েই বেশ আছেন নাটালি।
নিজের ঘরবাড়ি না থাকায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে বেড়ানোর কারণে নিজেকে এখন পরিচয় দেন ‘স্যুটকেস উদ্যোক্তা’ হিসেবে। এই নামে ব্লগও লেখেন তিনি। এ নামে তাঁর লেখা বইও রয়েছে।
নাটালি জানিয়েছেন, অদ্ভুত এই জীবনধারাকে অনেকে পাগলামি ভাবতে পারেন তবে আমার কাছে এটা চমত্কার একটা জীবন মনে হয়। আমি নিজেকে একজন বিশ্ব নাগরিক ভাবতে পারি। আমি যখন যেদেশে আমার স্যুটকেস রাখি সেটাই তখন আমার ঘর-বাড়ি।
নিজেকে নতুন এক ধরনের কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নাটালি। ‘ডিজিটাল নোম্যাড’ বা ডিজিটাল যাযাবর হিসেবে নাটালি মূলত কাজ করেন অনলাইনে এবং কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বেশিদিন থাকেন না।
কীভাবে আয় হয়? নাটালি জানিয়েছেন, তার আয়ের আটটি উত্স রয়েছে। নিজের ব্লগের বিজ্ঞাপন থেকে এবং এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকেও আয় আসে। নিজের তৈরি ডিজিটাল পণ্য ও প্রোগ্রামও বিক্রি করেন তিনি এবং স্কাইপের মাধ্যমে কোচিং করান। এভাবে জীবনযাত্রার সব খরচ বাঁচিয়েও প্রতিমাসে দুই হাজার ডলারেরও বেশি অর্থ উদ্বৃত্ত থেকে যায় তাঁর।
নাটালি জানিয়েছেন, সাশ্রয়ী থাকা-খাওয়া-ভ্রমণের প্রায় সব উপায়ই তার মুখস্থ হয়ে গেছে। তাঁর মতে, খরচ বাঁচানোর জন্য এ ধরনের জীবনযাপন বেশ যুত্সই। অনেকেই ভাবেন ভ্রমণে খরচ খুব বেশি। কিন্তু নাটালির মতে অতিরিক্ত মালপত্র না থাকলে ভ্রমণ করাটা বেশ মজাদার।
অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে এ ধরনের জীবনযাপন কেন বেছে নিলেন নাটালি? নাটালি জানিয়েছেন, ২০০৮ সালে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। করপোরেট একটি অফিসে অনেক বড় পদে চাকরি করতেন। সর্বশেষ তাঁর পদোন্নতিও হয়েছিল। তবুও ভালো লাগছিল না তাঁর।
নাটালির ভাষ্য, লন্ডনে থাকা অবস্থায় আমার যখন অনেক বেশি বেতন বেড়ে গেল আমি চাকরি ছেড়ে দিলাম। আমি চাকরির বদলে লন্ডনে একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে বসলাম। বন্ধুরা ভাবল আমি বুঝি ঠিকঠাক নেই। এরপর আমি যুক্তরাজ্য ছেড়ে কানাডায় চলে আসি। কানাডার ভ্যানকুভারে আমি একটি প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করি। এসময়ই আমার চোখে পড়ে প্রযুক্তি-উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারীদের নিয়ে ব্লগ লিখতে শুরু করি। ছয় মাস যেতে না যেতেই বুঝতে পারি আমার ব্যবসার চেয়ে এই বিষয়টি আমাকে বেশি টানছে। এরপর থেকে আমার ব্লগটিকে নিয়ে ব্যবসার চিন্তা করি। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ও অনলাইনভিত্তিক উদ্যোক্তা হিসেবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
এখন পর্যন্ত ৬৬টি দেশ ভ্রমণ করেছেন নাটালি। ২০১৩ সালে ১৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি। এক জায়গার থাকা বলতে সর্বোচ্চ দুই মাস ছিলেন জার্মানিতে। তাঁর কাছে দুইটি দেশের পাসপোর্ট ও চারটি দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। মোবাইল ফোনের জন্য নাটালির সিমকার্ডের সংখ্যা ১৭টি।
তবে গত চার বছরের যাযাবর জীবনযাপন করে কিছুটা হাঁপিয়ে উঠেছেন নাটালি। তাঁর মতে, এভাবে ছুটে বেড়ালে কারও সঙ্গে গভীর সম্পর্ক হয় না। স্কাইপের মাধ্যমে বা ভিডিও কল করেই বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। এ বছর ছোটাছুটি কম করে কয়েকটি দেশে বেশিদিন থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছেন এই নারী-উদ্যোক্তা।
নাটালি এ বছর একজন মনের মানুষ খুঁজে নিতে চান নাটালি। রোমাঞ্চপ্রিয় আর তাঁর মতো কিছুটা যাযাবর হতে হবে বলেই শর্ত তার।