পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার সৈকত
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দীর্ঘদিন পর কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকদের পদচারণা শুরু হয়েছে।
গেল বছরের বেশির ভাগই সময় হরতাল আর অবরোধের কারণে পর্যটক শূন্য ছিল কক্সবাজার। তবে পরিস্থিতির উন্নতির ফলে দেশি-বিদেশি পর্যটকটের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সৈকত নগরীর শহর কক্সবাজার।
এদিকে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটক আসা শুরু হওয়ায় পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া শতাধিক হোটেল মোটেল রেস্টুরেন্ট খুলেছে ইতিমধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতায় গত এক বছরের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারে চলে বিপর্যয়। অব্যাহত লোকসানের কারণে শতাধিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গেস্টহাউস ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতি বছরই ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে কক্সবাজারে কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটলেও এ বছর কোন পর্যটক আসতে পারেনি। ফলে পর্যটনখাতে বিপুল লোকসানের মুখোমুখি হয় ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির ফলে কক্সবাজারের পর্যটন পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে। আসছেন পর্যটকরা।
বুধবার সকালে সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় ৫ হাজারের বেশী পর্যটক উচ্ছাসে মেতেছে। সমুদ্র স্নান, বালিয়াড়ি দিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণ, স্পিড বোটে ভ্রমণে সময় পার করছেন পর্যটকরা। এদিকে ব্যবসায়ীদের মাঝেও ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
এদিকে ঢাকার উত্তরা থেকে কক্সবাজারে এসেছেন শামীম আহমেদ। সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত সাগরের নীল জলের টানে ভয়কে বিসর্জন দিতে হলো। এখানে আসলে জীবনের ব্যস্ততার কথা ভুলে যাই। ইচ্ছে করে সাগর তীরের ঝাউবিথী সমৃদ্ধ বালুচরে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিই।’
তারকা মানের হোটেল সী গালের পরিচালক মাসুম ইকবাল জানান, ‘গত দুটি পর্যটন মৌসুমে কোন ব্যবসা হয়নি। বাধ্য হয়ে হোটেলের অর্ধেক কর্মচারি ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছি। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।’
ভিস্তা বে-রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হাসান মিঠু জানান, ‘রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে গত দু’মাসে এখানে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় এখন তারা নতুন করে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।’
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাইজিংবিডিকে জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতা সহিংসতায় কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। অনেক প্রতিষ্ঠান সিংহভাগ কর্মচারী ছাটাই করে দিয়েছে। এখন পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় শ্রমিক কর্মচারিরা আবার ফিরবে।
বার্মিজ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি অংচিং রাইজিংবিডিকে জানান, সমিতির অন্তর্ভূক্ত ১৫০ দোকান মালিক চরমে সংকটে লোকসানে পড়েছে। গত কয়েক দিন থেকে পর্যটক আসতে শুরু করায় তাদের হতাশা কাটবে বলে আশা করা যায়।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য কর রেয়াত সুবিধা দিতে হবে।
কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের ওসি জাকির হোসাইন মাহমুদ রাইজিংবিডিকে জানান, কক্সবাজার আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে পর্যটন স্পটগুলোতে এবং সৈকতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার এন্ড কমার্সের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, গত পর্যটন মৌসুমের শুরু থেকে লাগাতার হরতাল ও সহিংসতার কারণে কক্সবাজারে পর্যটকরা আসতে পারেন নি। কক্সবাজারে পর্যটন খাতে এক বছরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় এখন ব্যবসায়ীরা আবার আশা আলো দেখতে পাচ্ছেন। হোটেল মোটেল রেস্টুরেন্টগুলো কয়েক দিন থেকে পর্যটকের দেখা পাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে কক্সবাজারে পর্যটক আসেন প্রায় ১ কোটি। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ২০১৩-তে তা ২০ লাখেরও নিচে নেমে আসে।